প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি-'কয়ঝন আর কথা রাকে'নওগাঁ প্রতিনিধি-'সব্বাই কথা দেয়। কয়ঝন আর কথা রাকে! হামরা বড় আশায় ভোট দিয়া এমপি করিছি। এখন হামাকের দিকে তাকানের সময় নাই। এমপি তার লোকজন লিয়া ব্যস্ত। ভাবিছিনু স্বতন্ত্র থ্যাকা নির্বাচন করছে। জিতলে হামরা কথা কওয়ার পারমু। কিন্তু আবার সেই দলত ফিরা সাঙ্গপাঙ্গক লিয়া ঘোরছে।' এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন শীলগ্রামের বৃদ্ধ কছিমুদ্দিন।

ছিমুদ্দিন জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এলাকায় ভোট নিতে এসে বর্তমান এমপি ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বিদ্যুৎ সংযোগ ও সড়ক নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কাজই তিনি করেননি। খোঁজও রাখেনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নারায়ণপুর হতে শীলগ্রাম এবং জোতবাজার হতে শীলগ্রাম পর্যন্ত দুটি সড়ক তিনি নির্বাচনে জিতলে পাকা করে দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু তিনি এমপি হওয়ার পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সড়ক দুটি আজও কাঁচাই রয়ে


গেছে।\মান্দা-নওগাঁ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শেখ আবদুল লতিফ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাজ উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন। তিনি বলেন, 'আমার দেওয়া প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উনি নির্বাচিত হওয়ার পর মহাজোটে ফিরে গেছেন। এখন সেই সব প্রতিশ্রুতি তাঁর ওপর বর্তায়। তিনি উল্লেখযোগ্য একটি প্রতিশ্রুতিও পালন করতে পারেননি।' এমপি সাহেব বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে মান্দাকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত করবেন। কিন্তু দুর্নীতি, সন্ত্রাস মুক্ত না হয়ে বরং বেড়েছে। তিনি বিভিন্ন জনসংযোগের সময় বলেছিলেন, অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে দেবেন; একটিও করা হয়নি। জোতবাজারে আত্রাই নদীর ওপড় ব্রিজ নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছিলেন। সে কাজের এখনো কোনো লক্ষণ নেই। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবাইহাট থেকে পরিতোষের বাড়ি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা এখনো আগের অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ শুধু প্রতিশ্রুতিতেই আবদ্ধ থেকে গেছে।
গণেশপুর ইউনিয়নের গণেশপুর গ্রামের জালাল হোসেন আক্ষেপ করে কালের কণ্ঠকে জানান, এমপি ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এখন তো আর বললে হবে না যে তিনি কোনো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেননি। তিনি গণেশপুর এসে প্রকাশ্য জনসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সতীরহাট গরুহাটী থেকে গণেশপুর স্কুল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক পাকা করে দেবেন। এটা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। দাবিটি কোনো এমপিই পূরণ করেননি। এলাকাবাসী ধারণা ছিল, ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক প্রবীণ মানুষ। এবার তিনি শেষবারের মতো নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। নিশ্চয়ই তিনি নির্বাচিত হলে সড়কটি পাকা করে দেবেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সড়ক নির্মাণ তো দূরের কথা, উদ্বোধন পর্যন্ত করতে পারেননি তিনি। সড়কটি এবারও হবে কি না কে জানে।
গণেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী জানান, ফেরিঘাট থেকে অধীরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি এমপি সাহেব সংস্কার করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো কাজই করেননি। বর্তমানে সড়কটির বেহালদশা। মান্দা-মহাদেবপুর সড়কটির স্লুইস গেট থেকে মহাদেবপুর সীমানা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পাকাকরণের কাজের ফলক উন্মোচন করেছেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘর্ সময় পেরিয়ে গেলেও একটিও ইট পড়েনি সড়কটিতে। এমন প্রতিশ্রুতি এমপি সাহেব অনেক দিয়েছিলেন গণেশপুর ইউনিয়নবাসীকে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.