উৎসব-সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জাগরণের গান

মাতৃভাষার অধিকার থেকে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালির হাতের অস্ত্রের মতোই আরও এক অস্ত্র ছিল তার কণ্ঠের গান। একাত্তরের রণাঙ্গনে তাই প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার হাতে ছিল অস্ত্র, কণ্ঠে গণসঙ্গীত। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও আজও সেই গানগুলো প্রেরণা জোগায়। বারুদমাখা সেই গানের সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে দিতেই জাগরণ সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে 'জাগরণের গান' নামের


একাত্তরের গণসঙ্গীতের একটি অ্যালবাম। ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল অ্যালবামটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০
সালে ১০১টি গান নিয়ে প্রকাশিত হয় জাগরণের গান-২ নামের নতুন অ্যালবাম। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার বের হলো তৃতীয় অ্যালবাম 'জাগরণের গান-৩'। এর প্রকাশনা উপলক্ষে গতকাল দিনভর উৎসব হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের পাশের উন্মুক্ত মঞ্চে। অ্যালবামের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে বাংলালিংক।
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। এরপর জাগরণ সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের শিল্পীরা পরিবেশন করেন 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে' গানটি। এর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দনের শিল্পীরা। উৎসব উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও পূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক কামাল লোহানী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলালিংকের জ্যেষ্ঠ বিপণন পরিচালক শিহাব আহমাদ, জাগরণ সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে গণসঙ্গীতের একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। জাতীয় আন্দোলনগুলোর প্রতিটি ধাপেই সব অনিয়ম, অনাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথ দেখিয়েছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত গাওয়া গণসঙ্গীত থেকে বাছাই করা ৭১টি গান দিয়ে অ্যালবামটি সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি গান নতুন। বাকি ৩১টি আগে প্রকাশিত অ্যালবাম থেকে সংকলিত।
উৎসব মঞ্চে সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর, খায়রুল আনাম শাকিল, লিলি ইসলাম, কনকচাঁপা, ডালিয়া নওশীন, তপন চৌধুরী, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, নাসিমা খান ডলি, রেজাউল করিম, জান্নাত এ ফেরদৌস, বিশ্বজিৎ রায়, ভগিরথ মালো, ফকির শাহাবুদ্দিন, মাহমুদুজ্জামান বাবু, দিদারুল করিম, শওকত হায়াত খান, সানোয়ার জাহান নিতু, বিমান চন্দ্র বিশ্বাসসহ আরও অনেকে। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে জাগরণ সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র।
দলীয় আবৃত্তি করে স্বরকল্পন। ধিক ধিনা ধিন, ও আমার জন্মভূমি, তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর, বলো বলোরে বলো সব ও সেদিন আর কত দূরে গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। আজি সপ্ত সাগরে, ধিতাং ধিতাং বোলে গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম। 'ভাবনার' নৃত্যশিল্পীরা 'মারো জোয়ান হেইয়ো', 'ওরে বিষম দইরার ঢেউ' গানের সঙ্গে দেশাত্মবোধক নৃত্য পরিবেশন করেন। সবশেষে ছিল ভারতীয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্যের একক সঙ্গীত পরিবেশনা।
সকালে কয়েকশ' শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় 'আমার চোখে মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বিকেলের পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য ও বাংলালিংকের হেড অব পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন জাগরণ সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মোস্তাফা তৌহিদ খান।
'জাগরণের গান-৩' অ্যালবামে গান গেয়েছেন বাংলাদেশের সাবিনা ইয়াসমিন, সুবীর নন্দী, শওকত হায়াত খান, শাকিলা জাফর, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মাহমুদ সেলিম, লিলি ইসলাম, সোহরাব উদ্দিন, মাহমুদুজ্জামান বাবু, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। ভারতের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন সলিল চৌধুরী, শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, সুমিতা মুখার্জি, আশীষ বিশ্বাস প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.