বাস্তবের জমিনে বিস্ময়বালক by আরিফুল ইসলাম

দুই অঙ্ক ছুঁতেই খেলে ফেললেন ৪৮ বল। আরেকটা জায়গায় তো প্রায় সেঞ্চুরিই করে ফেলছিলেন। প্রথম ৯৪ বলে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেননি, সাকিবের শর্ট বলে স্কয়ার ড্রাইভ করে প্রথম চার পেয়েছেন মুখোমুখি হওয়া ৯৫তম বলে! ১৩৫ বলে ৩৩, স্ট্রাইক রেট ২৪.৪৪। কার্লোস ব্রাফেট কাল ছিলেন এমনই ধৈর্যের প্রতিমূর্তি।

তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরনটাই অবশ্য এমন। টি-টোয়েন্টি যুগের ব্যাটসম্যান হয়েও তাঁর বিচরণ অনেকটা অতীতে। উইকেট আঁকড়ে থাকতে পছন্দ করেন, এ জন্যই তাঁকে অনেকেই বলতে শুরু করেছে নতুন চন্দরপল। কাল আসল চন্দরপলের সঙ্গে ব্যাটিং করলেন প্রথমবার। চতুর্থ উইকেটে দুজনে গড়েছেন ৬২ রানের জুটি। দিন শেষে যদিও অতৃপ্ত ব্রাফেট এবং সেটা যৌক্তিক কারণেই। ব্যাটিংয়ের মতো তাঁর কথাবার্তাও নিস্তরঙ্গ। মিনমিন করে বললেন, ‘দুই ঘণ্টার বেশি সময় উইকেটে থাকলাম, অনেক ধৈর্য ধরলাম। কিন্তু শেষ দিকে আউট হয়ে গেলাম। ফিফটি তো বটেই, সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে পারলে ভালো লাগত।’
সেঞ্চুরি স্পেশালিস্ট বলেই তাঁর হতাশাটা বেশি। বয়সভিত্তিক, ক্লাব, ঘরোয়া ক্রিকেট মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক সেঞ্চুরি আছে ব্রাফেটের। সংখ্যাটা ভুল শোনেননি, নিশ্চিত হিসাব না থাকলেও সেঞ্চুরি ৫০টির বেশিই হবে, কম নয়। সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করেই আলোড়ন তুলেছেন ক্যারিবিয়ায়। আলোচনায় আছেন নামের কারণেও। তাঁর দেশ বারবাডোজে সবচেয়ে বেশি নামের উপাধি ‘ব্রাফেট’। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই নামের কারও টেস্ট খেলার কীর্তি তাঁরই প্রথম! আরেক ব্রাফেট ‘কার্লোস’ অবশ্য ঢুকেছেন ওয়ানডে দলে, খেলে গেছেন বাংলাদেশ সিরিজে।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের এত এত সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে যান মাত্র ১৬ বছর বয়সেই, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে। নানা কারণে শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের না থাকাও অবশ্য ছিল বড় একটা কারণ। দলে থাকলেও সেবার খেলা হয়নি। অবশেষে টেস্ট অভিষেক গত মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ১৮ বছর ১৬৯ দিন বয়সে। ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটারদের আর একজনই টেস্ট খেলেছেন—মোহাম্মদ আমির। সেই আমিরও তাঁর চেয়ে মাস আটেকের বড়। এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার তাই ব্রাফেটই।
তবে বয়সভিত্তিক-ঘরোয়া ক্রিকেটের বিস্ময় বালক খাবি খেতে শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে। টেস্ট অভিষেকে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৫, দ্বিতীয় ইনিংসে ০ করে আউট দ্বিতীয় বলেই। কাল দীর্ঘক্ষণ থেকেও বড় করতে পারলেন না ইনিংসটাকে। ওই ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্যটাও টের পেতে শুরু করেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলাররা অনেক বেশি ধারাবাহিক, মারার বল কম দেয়। তবে আমার মাত্রই শুরু, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে পার্থক্যটা আর খুব বড় মনে হবে না।’
সেটা না হয় একসময় হবে, বাংলাদেশ সিরিজে আপাতত পার্থক্যটা না হয় বড়ই থাকুক!

No comments

Powered by Blogger.