জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা শুরু ১ নভেম্বর by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। ইতিমধ্যে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষা বোর্ড। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রায় ১৯ লাখ চার হাজার ৪৩৯ জন। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা তিন লাখ ৯৯ হাজার ৪৮ জন বেশি। সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রাথমিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য আরো পাঁচ মিনিট বাড়িয়ে ২০ মিনিট অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


পরীক্ষার সব তথ্য আদান-প্রদানের জন্য 'এঙ্াম মনিটরিং সিস্টেম' নামের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য লিবিয়ার পরীক্ষা কেন্দ্র সরিয়ে তিউনিশিয়ায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি জানিয়ে আগামী ৩১ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, গতকাল রবিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে ২৬৬ জন কেন্দ্রসচিবের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সভায় সব কেন্দ্রসচিবকে বলা হয়েছে, পরীক্ষা হলে নকল বন্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। কোনো কেন্দ্রে নকলের অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই কেন্দ্র বাতিল করা হবে। কেন্দ্রসচিবের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ছাড়া কেউ হলে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে কেন্দ্রসচিবদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, পরীক্ষার সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা সঠিক দায়িত্ব পালন করলে নকলের হার কমবে। তিনি বলেন, জেএসসি পরীক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়া এবং বিনা মূল্যে বই বিতরণের কারণে এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কুণ্ডু গোপী দাস বলেন, গত বছর যারা এ পরীক্ষায় ফেল করেছে তারাও এবার পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ ছাড়া পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ার কারণেও পরীক্ষার্থী বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বোর্ডওয়ারি পরীক্ষার্থী : বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চার লাখ ৬৪ হাজার ১২৮ জন। এ বোর্ডে কেন্দ্রের সংখ্যা ২৬৬টি। রাজশাহী বোর্ডে ১৭৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৯৪ হাজার ৬৩২। কুমিল্লা বোর্ডে ২৫২টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ তিন হাজার। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৮২টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার। যশোর বোর্ডে ১৬৩ কেন্দ্রে দুই লাখ ৪০ হাজার ৬৭৮ জন পরীক্ষার্থী। সিলেট বোর্ডে ৭১টি কেন্দ্রে ৯৪ হাজার পরীক্ষার্থী। দিনাজপুর বোর্ডে ১৬৬ কেন্দ্রে এক লাখ ৭১ হাজার ৩৩৯ জন পরীক্ষার্থী, বরিশাল বোর্ডে ৯৮টি পরীক্ষাকেন্দ্রে ৮৫ হাজার ৬০০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। এ ছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডে ৬৩২টি কেন্দ্রে তিন লাখ ২৩ হাজার ৭৪০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সব বোর্ডেই পরীক্ষার্থী বেড়েছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য বোর্ডে বাড়লেও বরিশাল বোর্ডে আশানুরূপ বাড়েনি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। তিনি বলেন, সব বোর্ডেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে। গত বছর তারা ফেল করার কারণে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারেনি। এবার তারাও পরীক্ষা দেবে। ফলে মোটা দাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলা হলেও তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, কেন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়েনি, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তানবীরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দুপুরে খাবার ও বিনা মূল্যে বই দেওয়ার কারণে বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের মনিটরিং করার কারণে ক্লাসে শিক্ষকরা পাঠদানে আরো মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।
বিদেশের পরীক্ষাকেন্দ্র : চলতি বছরে বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসব কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮৫। কেন্দ্রগুলো হলো জেদ্দার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রিয়াদে বাংলাদেশ এমবাসি স্কুল, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল, দোহায় বাংলাদেশ মাশহুর-উল-হক মেমোরিয়াল হাই স্কুল, আবুধাবিতে শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, ডুবাইয়ে বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল এবং বাহরাইনে বাংলাদেশ স্কুল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, লিবিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পরীক্ষা হবে না। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তিউনিশিয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্র করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র এসব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
ফাহিমা খাতুন আরো বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য আগে ১৫ মিনিট করে অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ থাকলেও এবার ২০ মিনিট করা হয়েছে। তিনি জানান, এ বাড়তি সময় এসএসসি ও এইচএসসিতেও কার্যকর থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.