বিমানবহরে যোগ হলো 'পালকি'

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বহরে যোগ হয়েছে নিজস্ব একটি অত্যাধুনিক বোয়িং-৭৭৭। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই উড়োজাহাজটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বোয়িং-৭৭৭ দেশে আনার লক্ষ্যে সম্প্রতি বিমানের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এই উড়োজাহাজে মার্কিন বোয়িং কম্পানির তত্ত্বাবধানে তাদেরই বৈমানিক, বিমান প্রকৌশলী ও কেবিন ক্রু থাকবেন।বিমান সূত্রে জানা যায়, বিমানের আরেকটি নিজস্ব বোয়িং উড়োজাহাজ আগামী নভেম্বরে দেশে আসছে।


নতুন কেনা বোয়িং দুটিসহ সংস্থার রুট পরিকল্পনা ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি বিমানের লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট আবারও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথমে চারটি বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর এবং চারটি বোয়িং-৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজ সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। পরে আরো দুটি বোয়িং-৭৩৭সহ মোট ১০টি উড়োজাহাজ সরবরাহের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি করা হয়। বিমানের অনুরোধে কিছুদিন আগে সরকার দুটি বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ কেনার প্রি-ডেলিভারি পেমেন্ট বাবদ ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঋণের গ্যারান্টার হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বোয়িং কম্পানি বিভিন্ন ধাপে ২০১১ সাল থেকে শুরু করে আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে সব উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে।
বর্তমানে চার ধরনের মোট ১১টি উড়োজাহাজ রয়েছে বিমানের বহরে। এগুলোর মধ্যে চারটি ডিসি-১০ ছাড়াও রয়েছে নিজস্ব দুটি এবং ইজারায় নেওয়া তিনটি এয়ারবাস, নিজস্ব দুটি এফ-২৮ এবং ইজারায় নেওয়া দুটি বোয়িং-৭৩৭। বিমানের ডিসি-১০ উড়োজাহাজই সবচেয়ে পুরনো; ১৯৮৩ এবং ১৯৮৯ সালে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনেল ডগলাস ১৯৮৯ সাল থেকে ডিসি-১০ উড়োজাহাজ নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বোচ্চ ৩৮০টি আসনের ডিসি-১০-এর খুচরা যন্ত্রাংশও আন্তর্জাতিক বাজারে পাওয়া যায় না। যাত্রী নিরাপত্তার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই উড়োজাহাজ অবতরণে বিধি-নিষেধ রয়েছে। বিমানের নিজস্ব এয়ারবাস দুটি ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে তৈরি। এফ-২৮ দুটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৯৯ সালে।
সূত্র মতে, পুরনো উড়োজাহাজের কারণে বিমানে ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই আছে। নানা ধরনের উড়োজাহাজের কারণে একটির বাড়তি যন্ত্রাংশ অন্যটিতে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিকল উড়োজাহাজের কারণে সংস্থার উড়ালসূচিতেও বিঘ্ন ঘটছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একসঙ্গে তিন থেকে চারটি উড়োজাহাজ বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া বৈমানিকদের চার রকমের উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ দিতেও বিমানকে প্রচুর ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে এর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুট। সব মিলিয়ে এয়ারলাইনসটির লোকসান বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিমান এখন কোনো রকমে ১৮টি আন্তর্জাতিক ও চারটি অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন করছে।

No comments

Powered by Blogger.