গাদ্দাফির লাশে পচন, পড়ে আছে হিমঘরে

লিবিয়া ‘মুক্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনকে গত রোববার ঘটা করে উদ্যাপন করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ দিন, কিন্তু এখনো অযত্ন-অবহেলায় তাঁর ও ছেলে মুতাসিমের লাশ পড়ে আছে হিমঘরে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত লাশ দাফনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। লাশ দেখতে প্রতিদিন মিসরাতা শহরের কাঁচা বাজারের ওই হিমঘরে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে। লাশ দেখার সুযোগ করে দিতে বারবার দরজা খোলা হচ্ছিল। আবার হিমঘরের শীতলীকরণ-ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না।

ফলে লাশে পচন ধরে গন্ধ ছড়াচ্ছে। পচন ধরায় গতকাল সোমবার বিকেলের পর থেকে লাশ দেখানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এনটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হিমঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর কাউকে লাশ দেখতে দেওয়া হবে না। হিমঘরে গাদ্দাফি ও তাঁর ছেলের লাশের পাশে আরও আছে সাবেক সেনাপ্রধানের লাশ। লাশ দেখতে আসা লোকজনকে সার্জিক্যাল মুখোশ সরবরাহ করছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
গত বৃহস্পতিবার জন্মস্থান সির্ত শহরে জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের (এনটিসি) যোদ্ধাদের হাতে আটক হন গাদ্দাফি, তাঁর ছেলে মুতাসিম ও সাবেক সেনাপ্রধান। এরপর তাঁদের হত্যা করা হয়। তবে তাঁদের হত্যা বা এত দিন ধরে লাশ ফেলে রাখা হলেও এ নিয়ে লিবিয়ার মানুষের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ইসলামি রীতি অনুযায়ী, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব লাশ দাফন করা উচিত।
গতকাল হিমঘরে লাশ দেখে বের হওয়ার পর সালেম সাকা নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘মুয়াম্মার গাদ্দাফি ভালো লোক হলে আমরাই তাঁর দাফনের ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তিনি নিজের নিয়তি নিজেই গড়ে গেছেন।’
আরেক ব্যক্তি জানান, লাশ দেখতে তিনি ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের চোখে দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখানে এসেছি। প্রতিটি মানুষের আসা উচিত।’
তবে লাশ এভাবে ফেলে রাখায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহীদের বিদেশি কিছু মিত্র। তাদের আশঙ্কা, লিবিয়ার নতুন নেতারাও হয়তো মানবাধিকার রক্ষায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন না।
গাদ্দাফির লাশ কোথায় দাফন করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এনটিসির নেতারা। তাঁরা গোপনে লাশ দাফন করতে চাইছেন। তাঁদের আশঙ্কা, গাদ্দাফির সমর্থকেরা ভবিষ্যতে কবরকে মাজার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে।
এর আগে গত রোববার এনটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গাদ্দাফির লাশ তাঁর আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ জন্য সির্ত শহরে গাদ্দাফির নিজের গোত্রের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এনটিসির সঙ্গে আলোচনার পর লাশ দাফনের বিষয়টি ঠিক করা হবে।
‘তাঁর লাশ যেন যুদ্ধজয়ের ট্রফি’: কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘লিবিয়ার প্রয়াত নেতা গাদ্দাফির লাশ এমনভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে, তা যেন যুদ্ধজয়ের ট্রফি!’
গাদ্দাফির পতনে ন্যাটোর ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে গতকাল কাস্ত্রো বলেন, এই বর্বর সামরিক জোট মানব ইতিহাসে নিপীড়নের সবচেয়ে জঘন্য হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
কাস্ত্রোর এসব মন্তব্য গতকাল কিউবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, মৃত্যুর পর গাদ্দাফির লাশ অপহরণ করে যেভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে, তা যেন যুদ্ধজয়ের ট্রফি। এভাবে লাশ প্রদর্শনের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর মৌলিক নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে।
কাস্ত্রো বলেন, কিউবা এনটিসিকে স্বীকৃতি দেবে না। গত মাসে কিউবার সরকার লিবিয়া থেকে তার কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়।
লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শুরু থেকেই ন্যাটোর হস্তক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন কাস্ত্রো। বিদ্রোহীদের প্রতিরোধে পুরোনো বন্ধু গাদ্দাফির ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ন্যাটো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাতিয়ার। রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.