সানির উজ্জ্বল অভিষেক by তারেক মাহমুদ

ভিষেকেই কি অনেকটা বুড়িয়ে গেলেন ইলিয়াস সানি! চট্টগ্রাম টেস্ট যেদিন খেলতে নামেন, বয়স ঠিক ২৫ বছর ২৯৩ দিন। সর্বশেষ এত বেশি বয়সে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে, সেটা জানতে গবেষণা প্রয়োজন। সানির আন্তর্জাতিক অভিষেক ‘বিলম্বিত’ কেবল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভাবলে। এ দেশে যে বয়সে খেলোয়াড়েরা ক্যারিয়ারের শেষ দিগন্ত দেখেন, সানির সেই বয়সে হলো শুরু।

তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন এই উদাহরণ ইতিবাচক মোড়কেই সাজানো থাকবে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বল হাতে নিয়েই স্পিনের মায়াজালে বেঁধেছেন শিবনারায়ণ চন্দরপলদের। ৫৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ, ৫ উইকেটের গৌরবমালা পরার অপেক্ষায় রাত কাটানো—অভিষেক ম্যাচ এমন আলোয় ভরে ওঠার একটা কারণ হতে পারে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর সাত বছরের অভিজ্ঞতা।
নিজের দ্বিতীয় বলেই শাহাদাতের ব্যর্থতায় কার্ক এডওয়ার্ডসের উইকেট পেতে পেতে পাননি। এরপর সানির বলে ক্যাচ পড়েছে আরও দুটি। এই দুর্ভাগ্যে না পুড়লে টেস্ট ক্রিকেটে বল হাতে নিয়ে প্রথম দিনেই হয়ে যেত ৫ উইকেট। সেটা না হওয়ায় অবশ্য খুব হতাশ নন সানি। দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে ক্যাচ মিসকে বলেছেন ক্রিকেটরই অংশ, ‘ক্যাচ মিস হতেই পারে। কেউ ইচ্ছা করে ক্যাচ মিস করতে চায় না। এটা পার্ট অব ক্রিকেট। আর আল্লাহ যা করেন ভালোই করেন। কপালে থাকলে উইকেট অবশ্যই পাব। কেউ আটকে রাখতে পারবে না।’ হতাশা যদি কিছু থেকে থাকেও সেটাও নিজেকে নিয়ে। ৪ উইকেট পেয়েও যে কারণে পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না সানি, ‘আমি আমার মতো বল করতে পারিনি। আরও ভালো বল করা উচিত ছিল। বোলিংয়ে রানটা একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি।’
সানি খুশি হতে না পারলেও মাঠে দাঁড়িয়ে তাঁর বোলিং দেখে মুগ্ধ সাকিব আল হাসান। বয়সে সানির চেয়ে দুই বছরের ছোট, তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব বছর চারেকের বড়ই হবেন। অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, ‘নতুন হিসেবে একদমই নার্ভাস মনে হয়নি ওনাকে। বলও করেছেন অসাধারণ। অভিষেক ম্যাচে এ রকম কম দেখা যায়।’
ফিল্ডিংয়ে নামার আগে সানির মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিয়েছেন সাকিব। ওই মুহূর্তের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে একটু যেন আবেগে কাঁপল সানির কণ্ঠ, ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে টেস্ট খেলার। সাকিব যে সময় ক্যাপটা পরিয়ে দিচ্ছিল, আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না...। অনেক ভালো লেগেছে।’ হোক বয়সে ছোট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরা বাঁহাতি স্পিনারদের তালিকাতেই আছে সাকিবের নাম। তা ছাড়া জাতীয় দলে জায়গা পাকা করতে পারলে সাকিবও হতে পারেন সানির স্পিন সঙ্গী। এমন একজনের হাত থেকে টেস্ট ক্যাপ পাওয়া বাড়তি আবেগের হতেই পারে।
ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে কালকের দিনটার কথা তাই আলাদা করেই লিখবেন সানি। টেস্ট ক্যাপ পরলেন, বল হাতে পেলেন ৪ উইকেট। এই ৪ উইকেটের একটি আবার চন্দরপলের, যেটিকে তিনি বলছেন নিজের সেরা উইকেট। ব্যাট হাতে শূন্য রানে ফিরলেও সেই হতাশা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে এসব অর্জনে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্যদের তুলনায় একটু দেরিতে এলেও তাতে সানির লাভই হলো বোধ হয়। প্রথম দিনের বোলিংয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, বড় আসরের ক্রিকেটের চাপ ছিল না তার ওপর। ‘এসব ম্যাচে চাপ থাকতেই পারে। তবে আমি ও রকম কিছু অনুভব করিনি। প্রথম ম্যাচেই চাপ নিলে তো ভালো খেলতে পারব না’—বলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই নিজেকে প্রমাণ করে আসা সানি।
কাদা মাঠে দুটো দিন দেবে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম টেস্টের সম্ভাব্য ফলাফল এখন ড্র। বৃষ্টির কাছে পরাজিত এই টেস্টে সানির আবির্ভাবই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। কিন্তু ভালোর কি শেষ আছে? ৪ উইকেট পেয়েছেন, ৫ উইকেট কেন নয়! অভিষেক টেস্টের ছবিটা সোনার ফ্রেমে বাঁধাই করতে ওটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় উপলক্ষ। সানি অবশ্য বললেন, এই প্রাপ্তিযোগ না ঘটলেও হতাশ হবেন না।
অভিজ্ঞতা কথা বলে, বলছে ইলিয়াস সানির হয়েও। জাতীয় দলে আসার আগেই মজ্জায় মিশে গেছে অনেক ক্রিকেট। ‘হতাশা’ তাঁর কাছে তাই একটি শব্দমাত্র।

No comments

Powered by Blogger.