গ্রামীণের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ফার্ম খোঁজা হচ্ছে-প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থায় পদ্মা সেতু : অর্থমন্ত্রী

গ্রামীণ ব্যাংক আইনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক হলো_এটি কেবল পল্লী এলাকায় কাজ করবে এবং যেসব গ্রামীণ দরিদ্রের জমির পরিমাণ আধা একরের কম, তাদের জন্য কাজ করবে। এর বাইরে গ্রামীণ ব্যাংকের আর কোনো কিছু করার অধিকার নেই। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫৪টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। লুঙ্মেবার্গসহ বিভিন্ন দেশে এর শাখা খোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ড. ইউনূস। এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে দক্ষ চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট (সিএ) ফার্ম খুঁজছে সরকার।


আর গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেবে এ সার্চ কমিটি।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল রবিবার নিজ দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স নিকোলাস জি ডিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'তাঁর (ডিনের) সঙ্গে ক্ষুুদ্রঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানিয়েছি, গ্রামীণ ব্যাংক আগের মতোই চলছে। প্রতিষ্ঠানটির টাকার অভাব নেই। সরকারের শেয়ার প্রয়োজনমতো ছেড়ে দেওয়া হবে। আর সার্চ কমিটি এমডি নিয়োগের জন্য কাজ করছে।'
অর্থমন্ত্রী জানান, ড. ইউনূসের সমান সম্মানীতে উপযুক্ত এমডি বা সিইও পাওয়া যাবে না। এ পদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও লোক খোঁজা হবে। তাই উপযুক্ত লোক পেলে তাঁর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। সার্চ কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যেই তা করবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে ড. ইউনূস প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন এমন কোনোকিছুই আমি দেখিনি। তবে মুডি থেকে আমাকে লিখিতভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে যে ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের যা হয়েছে তার ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক সাহায্য কমছে কি না বা বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে কি না।'
'তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন কি না, তা আমি জানি না তবে শুনেছি।' বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী জানান, 'গ্রামীণ আরো ৫৪টি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। এসবের মূলধন গেছে গ্রামীণ কল্যাণ তহবিল থেকে। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিভাবে কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব আইএফসিকে (ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স করপোরেশন) দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে তাদেরও বিনিয়োগ আছে। আমরা চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ফার্ম খুঁজছি।'
পদ্মা সেতু নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই : পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে_এ আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি ও অর্থায়ন স্থগিতের মতো ঘটনা অহরহই ঘটে। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে। তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
অর্থমন্ত্রী জানান, 'সিদ্ধিরগঞ্জে একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন দুই বছর ধরে স্থগিত আছে। কিন্তু কোনো সাংবাদিক তা জানেন না। এখন বিশ্বব্যাংক আমাদের তাগাদা দিচ্ছে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'এভাবে অর্থায়ন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। তা দেখে সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান অর্থায়ন নিয়ে দ্বিমত করেনি। সংস্থাগুলো বরং চুক্তির কার্যকারিতা জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে।'
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে সংস্থাটি তা না করলে আমরা অবশ্যই ভিন্ন পন্থা নেব।' তবে সে পন্থা সম্পর্কে এখনই কিছু জানাতে চাননি অর্থমন্ত্রী।
আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহযোগিতা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর সেখান থেকে একটি টিম বাংলাদেশ সফরে আসবে। আইএমএফের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা করেন মন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.