সোয়া লাখ শূন্য পদে নিয়োগ শিগগিরই-অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৫০ হাজার by শরীফুল ইসলাম

রকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদের বিপরীতে প্রায় সোয়া লাখ লোক নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে প্রায় ৫০ হাজার লোক অস্থায়ী ভিত্তিতে (এডহক) এবং বিভিন্ন পদে প্রায় ৭৫ হাজার লোক স্থায়ীভাবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে এই লোক নিয়োগ শুরু হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের শূন্য পদের তালিকা তৈরি করছে। তারা ১০ শতাংশ শূন্য পদ রেখেই বাকি পদে শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে। পাশাপাশি এডহক ভিত্তিতে যেসব পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে তারও একটি তালিকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।


সরকারি একটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।সূত্র জানায়, সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে শূন্য পদে লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে যেসব পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব তারও একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। এডহক ভিত্তিতে নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, যেসব পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় এটি যাচাই-বাছাই করে এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের অনুমতি দেবে। এ বৈঠকের পরই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শূন্য পদে লোক নিয়োগের তালিকাসহ বিভিন্ন পদে সম্ভাব্য এডহক ভিত্তিতে নিয়োগের তালিকা তৈরির কাজ করছে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এক অনুষ্ঠানে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত,
আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এডহক ভিত্তিতে লোক নিয়োগের কথা তুলে ধরেন।
জানা গেছে, প্রশাসনের ১২ লাখ ৫০ হাজার ৮৬১টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৮২৮টি পদ। প্রথম শ্রেণীর পদ শূন্য রয়েছে ১২ হাজার ৬৯৬টি। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬৬৭টি রয়েছে সহকারী সচিব পদমর্যাদার। দ্বিতীয় শ্রেণীর শূন্য পদ রয়েছে ৪২ হাজার ৯৬১টি। বাকি শূন্য পদ রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের। আপাতত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে এডহক ভিত্তিতে প্রায় ৫০ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর বাইরে প্রথম শ্রেণীসহ অন্যান্য পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় ৭৫ হাজার লোক। এবার শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি লোক নিয়োগ হবে। এ খাতে প্রায় ৪০ হাজার লোক নিয়োগ হবে। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণীর পদে প্রায় ১০ হাজার লোক এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। স্বাস্থ্য খাতেও নিয়োগ হবে প্রায় ২০ হাজার লোক। তবে এর অর্ধেকই হবে এডহক ভিত্তিতে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা, ব্যাংক, কৃষি, রেলসহ অন্যান্য খাতে প্রায় ৬৫ হাজার লোক নিয়োগ হবে। যেসব খাতের শূন্য পদে লোক নেওয়া হবে :
শিক্ষা খাতে ৪০ হাজার :দেশের শিক্ষা খাতের বিভিন্ন পদে প্রায় ৫৫ হাজার লোক নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ২৪১টি সরকারি কলেজের প্রভাষকের প্রায় ৩ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। ৩১তম বিসিএস এবং বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোর শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় ২৫ হাজার। ইতিমধ্যে ১৫ হাজার শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়োগ সম্পন্নের পরই বাকি ১০ হাজারের নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া পিয়ন ও দফতরি পতে প্রায় ১০ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এগুলো অস্থায়ীভাবে নিয়োগ হবে।
ব্যাংক সেক্টরে ১০ হাজার : বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী বছরের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার লোক নিয়োগ করবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকে প্রায় ৩ হাজার লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই এটি সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া ব্যাংকের বিভিন্ন পদে আরও পাঁচ হাজার লোক নেবে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য সেক্টরে ২০ হাজার : দেশের বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে এক লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৫টি পদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার ৮৯টি পদ শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৪ হাজার চিকিৎসক, ৪ হাজার নার্স, সাড়ে ছয় হাজার স্বাস্থ্য সহকারী ও ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সেবা পরিদফতর দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করবে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর বড়ধরনের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার পরও পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদের মধ্যে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে চিকিৎসক এবং অন্যান্য পদের মধ্যে বেশিরভাগই অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
খাদ্য, কৃষি মন্ত্রণালয় ও রেলওয়েতে ১০ হাজার : খাদ্য অধিদফতরের ২ হাজার ৩০০ লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই শেষ হবে এ নিয়োগ। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদফতরে বিভিন্ন পদে আরও পাঁচ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত লোকের অভাবে রেলওয়ে বিভাগ প্রায় এক যুগ ধরে রীতিমতো ধুঁকছে। শূন্য পদে লোক নিয়োগসহ রেলওয়েকে আধুনিক করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে মামলার কারণে এ নিয়োগ ঝুলে গেছে। দ্রুত এ মামলা নিষ্পত্তি করে এ নিয়োগ সম্পন্ন হবে বলে সূত্রও জানায়। এ ছাড়া রেলওয়ের বিভিন্ন পদে শিগগিরই আরও ৩ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে বেশিরভাগই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হবে ৩৫ হাজার : দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও নাগরিকদের সেবা সুবিধা বাড়াতে পুলিশে আরও ৩০ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। শিগগিরই এই লোক নিয়োগের সার্কুলার দেবে পুলিশ সদর দফতর। এ ছাড়াও আনসার-ভিডিপি, বিডিআর ও দমকলসহ বিভিন্ন বাহিনীতে ৫ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব বাহিনীর শূন্য পদের তালিকা দেওয়া হলে নিয়োগের জন্য কাজ শুরু করা হবে।
অন্যান্য খাতে ১০ হাজার : এ ছাড়া আগামী বছর শুরু থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন পদ, সমাজসেবা অধিদফতরের সমাজসেবা অফিসার, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফিন্যান্সের অডিটর, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের অডিটর, পাট অধিদফতরের সহকারী পরিদর্শক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন পদ, কারা তত্ত্বাবধায়ক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ বেতারের নিরাপত্তা অফিসার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার, গণযোগাযোগ অধিদফতরের সহকারী তথ্য অফিসার ও উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে ১০ হাজার লোক নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে অর্ধেক পদেই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

No comments

Powered by Blogger.