প্রণোদনায় কাজ হলো না

ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের ঘোষণা দিলেও তাতে কাজ হলো না। দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল সোমবার আবারও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশেরই দাম কমেছে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমেছে প্রায় ৯২ শতাংশ শেয়ারের দাম। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) চলতি সপ্তাহ থেকে শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল।

আর রোববার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়। ব্যাংকের এই প্রণোদনামূলক ঘোষণাও কাজে লাগেনি। বিএবির সভাপতি রোববার বলেছিলেন, ব্যাংকগুলো বাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে—তাই এখন বাজার খারাপ হওয়ার আর কোনো আশঙ্কা নেই। এমন বক্তব্যের পরদিন বড় ধরনের দরপতন ঘটল।
এদিকে, বিনিয়োগসহ ব্যাংকগুলো নানা ঘোষণা দিলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। উল্টো ব্যাংকসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা।
বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণেই এমনটি ঘটেছে। দুই দিন দাম বাড়ার পরই বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে বিভিন্ন পক্ষ উদ্যোগ নিলেও তাতে চরম সমন্বয়হীনতা রয়েছে, যেটি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জানা গেছে, গত দুই দিনের ঊর্ধ্বগতির সুযোগে বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাজারে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের এই বিক্রির চাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধারণ করতে পারেনি। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ঘোষণাকে কাজে লাগালেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তা পারছেন না।
মূল্যসূচকের পতন দিয়েই গতকাল ঢাকার বাজারে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম পাঁচ মিনিটেই ডিএসইর সাধারণ সূচক ৪৫ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর কিছু সময় সূচকের ওঠানামা থাকলেও দুপুর পৌনে ১২টার পর তা ক্রমাগত কমতে থাকে। দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক ১৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সালাহউদ্দিন আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক মালিকেরা বিশেষ তহবিল করার ঘোষণা দিলেও সেটি এখনো বাজারে আসেনি। এর আগে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা নতুন করে বাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। এসব ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ তৈরি হয়। তাতে দুই দিন সূচকও বাড়ে, কিছুটা চাহিদাও তৈরি হয়। সেই সুযোগে একটি পক্ষ শেয়ার বিক্রি শুরু করেছে, এই বিক্রির চাপ বাজার ধারণ করতে পারেনি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বাজারে এই মুহূর্তে চাহিদা তৈরি করা বড় কাজ। যখন কিছুটা চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তখন বিক্রির চাপ বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু বাজারে খুব বেশি সক্রিয় নয়, তাই এই চাপ ধারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।’
শেয়ার বিক্রির শীর্ষে যারা: সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত দুই দিন ঢাকার বাজারে বিক্রির দিক থেকে শীর্ষে ছিল লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে দুই দিনে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে প্রায় ৬০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। এর আগেও বাজার ধসের সময় এই প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার বিক্রির শীর্ষে ছিল।
যোগাযোগ করা হলে লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক ওয়ালি উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব পত্রকোষ (পোর্টফোলিও) থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করিনি। গ্রাহকেরাই তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে শেয়ার বিক্রি করেছেন।’
এ ছাড়া গতকাল সোমবার বিক্রির দিক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল হাওলাদার ইক্যুইটি সার্ভিস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে গতকাল ৩৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকারও বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে শেয়ার কিনেছে মাত্র ১৭ লাখ ৬১ হাজার টাকার।
তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বিক্রির দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান মিলে ১২৪ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে এসব প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনেছে প্রায় ৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার।
বিক্রির শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আরও ছিল ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, এমটিবি সিকিউরিটিজ, রয়েল ক্যাপিটাল, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, সালতা ক্যাপিটাল ও মাল্টি সিকিউরিটিজ।
বাজারচিত্র: ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিন শেষে ঢাকার বাজারে ২৫৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৪২টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ১৩টির। গতকাল ডিএসইতে প্রায় ৪২০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ১৯৬ কোটি টাকা কম।
আর সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক প্রায় ৪৫৬ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ১৫ হাজার ৪৭৫ পয়েন্টে। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হওয়া ১৬৬টি কোম্পানির মধ্যে ১৫২টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ১৩টির। দিন শেষে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ৩৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।

No comments

Powered by Blogger.