ভেনিজুয়েলাতে ভূপাতিত আর্জেন্টিনা

সিন্দাবাদের ভূতটা যেন শুধু একটা ম্যাচের জন্যই নেমে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার কাঁধ থেকে। চিলির বিপক্ষে আগের সেই ম্যাচটার পরে তাই কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলাও ফেলেছিলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস, 'আহ! মনে হচ্ছে বড় একটা বোঝা নেমে গেল! এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।'তখন কি আর জানতেন সেই ভূত আবার এসে ভর করবে তাঁর কাঁধে। শিষ্যদের কাঁধে।ঠিকই করল। এমনভাবে জেঁকে বসল যে সেই ভূতের খপ্পরে পড়ে লিওনেল মেসি আর গনজালো হিগুয়াইনরা সাদামাটা ফুটবলার হয়ে গেলেন।


মার্টিন দেমিচেলিস, নিকোলাস বুরদিসো আর পাবলো জাবালেতারা তো যেন ভুলেই গেলেন তাঁদের দায়িত্বের কথা। ভেনিজুয়েলা এই সুযোগটাই খুঁজছিল। ম্যারাডোনার দেশের বিপক্ষে আগের ১৮ বারের দেখায় কোনো জয় নেই তাদের। কিন্তু নিজের মাঠে এমন অসহায় অবস্থায় আর তো মেসিদের পাওয়া যাবে না। এ সুযোগ কী হেলায় হারানো যায়! সিজার ফারিয়াসের দল সেটা ঠিকই কাজে লাগাল। ৬১ মিনিটে করা সেন্টার ব্যাক ফার্নান্দো আমোরেবিয়েতা গোলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় নিশ্চিত হলো তাদের। পেল বিশ্বকাপে লাতিন অঞ্চলের এবারের বাছাই পর্বে নিজেদের প্রথম জয়টাও। ভাগ্যিস ভূতের খপ্পরে পড়েও সতীর্থদের মতো দিশাহারা হয়ে যাননি আর্জেনটাইন গোলরক্ষক মারিও আনজুদার। নইলে ব্যবধানটা শুধু এক গোলের নয়, বেড়ে যেত আরো অনেক!
এতবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে যে দলটা আগে কখনো জিততে পারেনি, যাদের নেই একবারও বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার অভিজ্ঞতা, তারা যতই নিজের মাঠে খেলুক, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে এটা ভাবেনি হয়তো খোদ ভেনিজুয়েলার সমর্থকরাও। বরং পুয়ের্তো লা ক্রুজ স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য ছিল মেসি-হিগুয়াইনদের জাদু দেখা। সেই মেসি-হিগুয়াইন যাঁরা আগের ম্যাচেই চিলিকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু হলো উল্টোটা। প্রথম ২০ মিনিটের পরেই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না আর্জেন্টিনাকে। ওই সময়টাতেই অবশ্য লিওনেল মেসির দুই-দুইটা শট দারুণ সেভ করেছেন ভেনিজুয়েলিয়ান গোলরক্ষক লিওনার্দো মোরালেস। এর যেকোনো একটাতে গোল হয়ে গেলে বাকি ম্যাচের ছবিটা বদলে যেতেও পারতো। হলো না। শুরুর ২০ মিনিটে মোরালেসকে যতটা ব্যস্ত দেখাচ্ছিল বাকি সময়টায় সেই ব্যস্ততা গেছে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক আনদুজারের। সামনে থাকা তাঁর রক্ষণভাগের একের পর এক ভুল তিনি সামলেছেন দক্ষ হাতে। কিন্তু একা আর কতক্ষণ। ৬১ মিনিটে কর্নার থেকে পাওয়া বলে হেড করে আমোরেবিয়েতা যে গোলটা করলেন সেটার দায়ও আনজুদারকে দেওয়া যাবে না। এর ঠিক আগ মুহূর্তেই ভেনিজুয়েলিয়ান ফরোয়ার্ড হুয়ান অ্যারাঙ্গোর দুর্দান্ত ফ্রি-কিকটা কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়েছিলেন তিনি। প্রথম কিছুক্ষণের পরে খেই হারিয়ে ফেলার এ ব্যাপারটা পরে স্বীকার করেছেন আর্জেন্টাইন কোচ সাবেলাও। তবে এর জন্য নিজের শিষ্যদের দায়ী না করে বরং ভেনিজুয়েলাকেই কৃতিত্বটা বেশি দিয়েছেন তিনি, 'আমরা প্রথম ২০ মিনিটে কিছু সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু ধীরে ধীরে ভেনিজুয়েলা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো খেলেছে।' আর মেসি-হিগুয়াইনদের বিপক্ষে এমন একটা জয়ে তো রীতিমত উচ্ছ্বসিত ভেনিজুয়েলার কোচ ফারিয়াস, 'এ জয় ভাগ্যগুণে পাওয়া নয়। আমরা ভালো খেলে ওদেরকে হারিয়েছি।'
আর্জেন্টিনার এই হতাশার দিনটা দারুণ কেটেছে আগের ম্যাচে তাদের কাছে বড় ব্যবধানে হারা চিলির। নিজের মাঠে তারা পেরুকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে। বলিভিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বাছাই পর্বে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছে কলম্বিয়াও। তবে ডিয়েগো ফোরলানের গোলে অনেকক্ষণ এগিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হয়নি উরুগুয়ের। ক্রিস্টিয়ান রিভেরোসের ইনজুরি টাইমের গোলে প্যারাগুয়ের সঙ্গে ১-১ ড্র হয়েছে তাদের ম্যাচটা। তার পরও হয়তো খুব একটা অসন্তুষ্ট নন উরুগুইয়ান তারকা ফোরলান। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে এখনো তাঁর দল লাতিন অঞ্চলে সবার ওপরে। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ওই গোলটা করার পর এখন দেশের হয়ে তাঁর মোট গোল ৩২টি। স্পর্শ করেছেন সাবেক তারকা হেক্টর স্কারনির দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। রয়টার্স, এপি, গোল ডটকম

No comments

Powered by Blogger.