সুখস্মৃতি নিয়ে ওয়ানডেতেও ভালো করার অপেক্ষায় by সাইদুজ্জামান

টোয়েন্টি-টোয়েন্টি জিতে উঠে ৫৮'র কাণ্ড মনে করতে চান না আবদুর রাজ্জাক। অন্যদিকে সেই বিশ্বকাপ ম্যাচ প্রসঙ্গ উঠতেই কিয়েরন পোলার্ডের আকর্ণ হাসি, যে হাসিতে বিলীন মঙ্গলবারের গ্লানি। তবে ওইটুকু সময়ের জন্যই। বাকি সময়টা ক্যারিবীয় এ বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের হাসির আড়াল থেকেই যেন উঁকি দিচ্ছিল স্পিন-ভীতি। আর এই ভয় ছড়িয়ে দিতে পেরে প্রসন্ন রাজ্জাক। আজ মিরপুরে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে যে প্রশান্তি পুরো বাংলাদেশ দলে।আবদুর রাজ্জাকের অনুযোগ, 'আমাদের জেতা ম্যাচগুলোর কথা কারো মনে থাকে না।


৫৮ রানের ঘটনা আমরা যত ভুলতে চাই, ততই মনে করিয়ে দেওয়া হয়।' শুনে প্রশ্নকর্তাও একমত। সত্যিই তো। আগের দিনই তো ক্যারিবীয়দের সেই মিরপুরেই টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতে ধরাশায়ী করে বাংলাদেশ। সেই তিন নম্বর উইকেটেই, যেটাতে বিশ্বকাপ ম্যাচে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল রাজ্জাকের দল। একই প্রতিপক্ষকে সেই উইকেটে হারানোর অনুপ্রেরণার দিনে দুঃস্বপ্ন টেনে আনা কেন?
টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতে তিন উইকেটের জয় অবশেষে সেই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশকে। শুরুর এ জয়ে আবদুর রাজ্জাকের প্রতিক্রিয়ায় যেন সেই আশ্বাস, 'জয় দিয়ে শুরু করার একটা ইতিবাচক প্রভাব তো থাকবেই। এই দিক থেকে মানসিকভাবে আমরা একটু এগিয়ে আছি। আসলে যেকোনো জয়ই সেই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।' কিয়েরন পোলার্ড মঙ্গলবারের ম্যাচ দেখেছেন ড্রেসিংরুমে বসে। যে 'দেখা' থেকে তাঁর অনুধাবন, 'অভিজ্ঞতার অভাব কিংবা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে না পারার কারণে ম্যাচটা হেরেছি। পোস্টমর্টেমে সেই ভুলগুলো চিহ্নিত হয়েছে। আশা করি, সিরিজের বাকি অংশে সেই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না।'
ভুল হয়। সেটি শুধরেও নিতে চায় সবাই। কিন্তু স্পিনের সামনে অসহায়ত্ব থেকে কি কিছু ভিডিও ফুটেজ আর ২০ ওভারের একটি ম্যাচ খেলেই শুধরে নিতে পারবেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা? যেখানে রাজ্জাক-সাকিবরা টোয়েন্টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ানডে সিরিজে পছন্দের উইকেটের নিশ্চয়তা পেয়ে গেছেন! পোলার্ড নিজে অবশ্য আশাবাদী, 'আইপিএল এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারতীয় উইকেটে খেলেছি। এখানকার উইকেটও ভারতের মতোই। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে চেন্নাইয়ের উইকেটের সঙ্গে মিলটা বেশি। ধীরগতির উইকেট। এটা অবশ্যই আমার জন্য বাড়তি সুবিধা।' যদিও পোলার্ড নিজেও 'স্পিন দুর্বল' ব্যাটসম্যানদের দলে পড়েন।
দুর্বলতা বাংলাদেশ দলেও আছে। রাজ্জাক যেমন স্বীকারও করেছেন, 'টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আমাদের বোলিং-ফিল্ডিং দারুণ হয়েছে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সমস্যা ছিল। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে যায়। আশা করি, পরের ম্যাচগুলোয় এ রকম কিছু হবে না।' এই ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছে বাংলাদেশ। শুরু ভালো হয় তো মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। নয়তো উল্টোটা। শুরুর বিপর্যয় মিডল অর্ডার কাটিয়ে উঠলেও ঘুরে-ফিরে সেই একই আফসোস_রান যদি আরেকটু বেশি হতো! অবশ্য মিরপুরের উইকেটে রান করার কাজটা সত্যিই কঠিন। দুই প্রান্ত থেকে নতুন বল ব্যবহার হবে যখন, তখন পুরো ইনিংসেই বলের শক্ত ভাবটা থাকবে। এ নিয়ে পোলার্ডের মতো দুই দলের ব্যাটসম্যানরা উচ্ছ্বসিত বোধ করতে পারেন। কিন্তু উইকেটের চরিত্রের কারণে সেই শক্ত বলও যে ব্যাটে আসবে কিছুটা দেরিতে! তাই ব্যাটিংটা কষ্টসাধ্যই হবে। যদি না স্টুয়ার্ট ল'র প্রত্যাশিত 'স্মার্ট ব্যাটিং'কে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন ব্যাটসম্যানরা। এটা অনুসরণে ২৪০-২৫০ রান স্কোরবোর্ডে জড়ো করতে পারলে জেতা সম্ভব_৫৮ কাণ্ডের পরও সিরিজ শুরুর আগে এটা বাংলাদেশের দলীয় বিশ্বাস।
আত্মবিশ্বাসের পেছনের শক্তি বোলিং। বাংলাদেশের ওয়ানডে সাফল্যে বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের অবদান যে কিছুটা হলেও বেশি, এটা সবাই জানেন। দেশের মাটিতে সে সাফল্যে বোলারদের অবদান আরো বেশি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাফল্যের যে মূলমন্ত্র বলে মনে করছেন বাংলাদেশ, সেটিও স্পিন। আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাজ্জাক খুশি দলের পেসারদের নৈপুণ্যেও, 'শফিউল ও রুবেল যে বোলিং করেছে ম্যাচে, সেটাকে আমি পূর্ণ নম্বর দেব।' ক্যারিবীয় ব্যাটিংয়ে স্পিন অভিজ্ঞতার যে ঘাটতি, তাতে টোয়েন্টি-টোয়েন্টির মতো আজও রাজ্জাকের নতুন বলে শুরু করাটা অস্বাভাবিক নয়। সঙ্গে সাকিব আল হাসান ও নাঈম ইসলামের স্পিনে প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়া গেলে মোহাম্মদ আশরাফুলের অফ স্পিনেও আস্থা রাখতে পারেন অধিনায়ক। তবে এ 'অ্যামবুশ'য়ে একজনের ওপর বাড়তি একটা চোখ রাখতেই হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরির পর টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতেও অপ্রতিরোধ্য মারলন স্যামুয়েলস। প্রতি সিরিজেই কোনো একজন ব্যাটসম্যান চড়ে বসে বাংলাদেশি বোলিংয়ের ওপর। অনায়াসে রান করে ফেলা স্যামুয়েলস যেন এ সিরিজে সে ভূমিকায় অবতীর্ণ।
আজ কেমার রোচ ও দেবেন্দ্র বিশুর সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনে নতুন শক্তির উদয়ও দেখতে পারে বাংলাদেশ। তবে গতকাল মিরপুরে এ জাতীয় সম্ভাবনার চেয়ে টোয়েন্টি-টোয়েন্টির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই নজরে পড়েছে বেশি। ৫৮'র দুঃসহ স্মৃতি যেন ঢাকা পড়ে গেছে মঙ্গলবার ৩ উইকেটে জয়ের আনন্দ রেণুতে।

No comments

Powered by Blogger.