চট্টগ্রামে সম্প্রীতি রক্ষায় সর্বদলীয় সমাবেশ

ট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরদিন বুধবার সকালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সর্বদলীয় সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ততের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়।সংঘর্ষের পর রাতভর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বুধবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়।


এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দেয়নি। এমন স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যেই সম্প্রীতি রক্ষায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনের নেতারা সমাবেশ করেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় সরকারের মন্ত্রী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতাসহ গণমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিটি মেয়র মঞ্জুর আলম। এ ছাড়া নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনামুল হক দানু, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।
মন্ত্রী আফসারুল আমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছিল। চট্টগ্রামবাসী এ জন্য লজ্জিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। তিনি বলেন, 'ঘটনার রাতেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব এবং জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে সরকার কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে।' সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে সিটি মেয়র মঞ্জুর আলম বলেন, 'একই এলাকায় বসবাস করলে মাঝেমধ্যে এক-আধটু ঝগড়া-বিবাদ হতেই পারে; সে জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলররা আছেন। পাশাপাশি আপনাদের জন্য আমার দরজা সব সময়ই খোলা। কোনো অবস্থাতেই সম্প্রীতি নষ্ট করা যাবে না।'
সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন কুচক্রী মহলের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'কারা মসজিদের কাচ ভেঙেছে এবং কারা মন্দিরে আগুন লাগিয়েছে, তা প্রশাসন ও আমাদের জানা আছে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায়কারীর বিচার অবশ্যই হবে।' তিনি বলেন, মসজিদের কাচ ভাঙা এবং মন্দিরে আগুন লাগানো ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। রাতে সংঘর্ষ থামানোর পর পরই জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। এই সময় গুজব ছড়ানো হয়েছে।' সিএমপি কমিশনার আবুল কাশেম বলেন, 'পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।' গত মঙ্গলবার রাত ৮টায় ফুটবল খেলায় জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আটজন পুলিশ সদস্য, দুজন ফটোসাংবাদিকসহ ১৫-২০ জন আহত হন। সিএমপি দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করে। পাশাপাশি র‌্যাব-৭ সদস্যরাও নিরাপত্তা রক্ষায় মাঠে নামেন।

No comments

Powered by Blogger.