ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূত হত্যাচেষ্টা : যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের বিচারমন্ত্রী এরিক হোল্ডার মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন, ইরান কর্তৃক ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল জুবাইরকে হত্যার পরিকল্পনা নস্যাত্ করে দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইরানের পাসপোর্টধারী মার্কিন নাগরিক মানসুর আরবাব সাইয়্যারকে আটক করা হয়েছে এবং গোলাম শাকুরি নামে অপর এক ইরানির বিরুদ্ধেও অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।


ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্কিন ওই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ডাহা মিথ্যা বলে অভিহিত করে বলেছেন, এ ধরনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট ইরানবিরোধী নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ব্রিটিশ সরকার এই হত্যা পরিকল্পনাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে বর্ণনা করেছে। এর যথাযথ জবাব দিতে ইরানকে বাধ্য করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্রিটেন সমর্থন দেবে বলে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইরান গুপ্তঘাতকদের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি দূত আদেল আল জুবাইরকে হত্যা করতে চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, সৌদি দূতকে হত্যার ওই যড়ষন্ত্র পরিকল্পিত। সৌদি রাষ্ট্রদূত হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের দ্বৈত নাগরিক মানসুর আরবাব সাইয়্যারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। হত্যা পরিকল্পনায় যুক্ত অপর ব্যক্তির নাম গোলাম শাকুরি। তিনি ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর আল কুদস ব্রিগেডের সদস্য এবং বর্তমানে ইরানেই আছেন। তবে গ্রেফতার হওয়া আরবাব তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন। এই পুরো পরিকল্পনাটি ইরানের আল কুদস ব্রিগেডের তৈরি বলে অভিযোগ করেছেন হোল্ডার। তিনি এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের মারত্মক লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনার জবাবে ইরানকে ‘অত্যন্ত কঠোর বার্তা’ পাঠানোর উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। যুক্তারষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৮৪ সাল থেকে ইরানকে ‘সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে। আরবাবকে মঙ্গলবার নিউইয়র্কের একটি আদালতে স্বল্প সময়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তিনি জামিনের কোনো আবেদন জানাননি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার যাবজ্জীবন কারাবাস হতে পারে বলে জানিয়েছে আদালত। হোয়াইট হাউস মুখপাত্র টমি ভেটর বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখার জন্য বলেছেন। এই পরিকল্পনা নষ্ট করে দেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে সাধুবাদও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।
এদিকে সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল জুবায়েরকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ইরান জড়িত বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে দাবি করেছে, তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে একটি অভিযোগ পেশ করেছে তেহরান। মার্কিন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ খাজায়ি ওই অভিযোগ করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে লেখা চিঠিতে ইরানি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ওয়াশিংটনের যুদ্ধবাজ নীতির বহিঃপ্রকাশ। এর আগে, মার্কিন বিচার বিভাগ দাবি করেছে, মেক্সিকোর এক মাদক চোরাচালানির সহায়তায় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল জুবায়েরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ইরান। ভিত্তিহীন এ অভিযোগের জবাবে ইরান ওই চিঠিতে বলেছে, ইরান যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত একটি বিশ্ব দেখতে চায়। ইরানের বিরুদ্ধে অব্যাহত মার্কিন প্রচারণা ও যুদ্ধবাজ নীতি শুধু তেহরানের বিরুদ্ধেই নয়, বরং পুরো পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিরাট হুমকি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রমিন মেহমান পারাস্ত মার্কিন ভুয়া অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটা হচ্ছে তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ অবস্থান।
তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে আরও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মারাত্মক অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে প্রচণ্ড আন্দোলন শুরু হয়েছে তা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই ওয়াশিংটন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানবিরোধী এ প্রচারণায় নেমেছে। রমিন মেহমানপারাস্ত জোর দিয়ে বলেছেন, ইসলামী নীতিমালা ও মূল্যবোধের ওপর ইরানের সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত এবং বহু আগে থেকেই তেহরান বলে আসছে, এ অঞ্চলের শত্রুরা তেহরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

No comments

Powered by Blogger.