ফ্যাশন হাউস, সিনেমা আর ফর্মুলা ওয়ান

তাঁরাও আর দশজন মানুষের মতো। আছে আবেগ, আছে ভালোবাসা। কিন্তু তাঁদের খেলোয়াড়ি জীবনের বাইরের অনেক কিছুই আমাদের অজানা। ক্রীড়াবিদদের অজানা জীবনটা কেমন, সেটা জানতেই নিয়মিত এ আয়োজন। জেনে নিন লুই ফিগোর অন্য ভুবনটা কেমনঅনেক কিছু হতে পারতেন লুই ফিগো। বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কের শিক্ষক, মনোবিজ্ঞানী, নামকরা কোনো ফ্যাশন মডেল কিংবা অভিনেতা! কিন্তু ১১ বছর বয়সে সেই যে ফুটবলের প্রেমে পড়লেন, সেটা তাঁকে আর কিছু হতে দিল না। এমন নয় যে ফুটবলার হওয়াটা খুব খারাপ কিছু হয়েছে তাঁর জন্য। কোনো সন্দেহ ছাড়াই তিনি পর্তুগালের ইতিহাসে সেরা ফুটবলারদের একজন।


ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার, ব্যালন ডি অঁর আছে তাঁর ঝুলিতে। আছে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ইন্টার মিলান, স্পোর্টিং লিসবনের মতো ইউরোপের নামি ক্লাবগুলোতে দুই দশকেরও বেশি খেলার অভিজ্ঞতা এবং শত অর্জন। কিন্তু ফুটবলার হয়েছেন বলে ছোটবেলার অন্য শখ আর স্বপ্নগুলো একেবারে বিসর্জন দেননি সাবেক এ পর্তুগিজ প্লেমেকার। খেলা ছেড়ে অবসর জীবনে আসার পর তিনি ঠিকই ফিরে গেছেন তাঁর সেই শখের জগতে।
ফ্যাশন নিয়ে তাঁর আগ্রহ মূলত মায়ের কারণে। ডিজাইনার মা ছোটবেলায়ই ছেলেকে খুব ফ্যাশন-সচেতন করে তুলেছিলেন। একটা বয়স পর্যন্ত ফিগোরও ইচ্ছা ছিল মডেলিং করার, কিন্তু ফুটবল নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। নিজের অপূর্ণ সাধটা অন্যদের দিয়ে পূরণ করাতেই বোধ হয় খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর পর্তুগালে একটা ফ্যাশন হাউস খুলেছেন ফিগো। যেটা এখন দেখাশোনা করেন তাঁর মডেল স্ত্রী হেলেন। স্ত্রীর অনুরোধে ফিগো নিজেও বেশ কয়েকবার দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে, এমনকি হেঁটেছেন র‌্যাম্প মডেল হিসেবেও। ছাত্র হিসেবে দুর্দান্ত ছিলেন, বিশেষ করে অঙ্কে তাঁর মাথা ছিল দারুণ। আগ্রহ ছিল মনোবিজ্ঞানেও। ফুটবলার না হলে মনোবিজ্ঞানী হতেন_এমন কথা পরে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। কিন্তু ওই যে ফুটবলের কারণে পড়াশোনাটাও বেশি এগোয়নি। তবে মনোবিজ্ঞান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির অভ্যাসটা তাঁর আছে এখনো। এ বিষয়ে ছাপার অক্ষরে কিছু পেলেই পড়তে দেরি হয় না ফিগোর।
একসময় অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল। 'ক্রেমার ভার্সেস ক্রেমার' ছবিতে ডাস্টিন হফম্যানের অভিনয় দেখে নাকি প্রথম যৌবনে ফুটবল ছেড়ে দিয়ে হলেও অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেটাও হয়নি। তবে প্রচুর সিনেমা দেখা আর ভালো অভিনয়ের কদর করাটা যে জানেন তিনি, সেটা বোঝা যায় তাঁর পছন্দের তালিকা দেখলেই। হফম্যান ছাড়া আর ভালো লাগে মাইকেল ডগলাস ও মিশেল প্রিফারের অভিনয়। প্রিয় ছবির তালিকায় আছে ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাক্কুস নেস্ট, প্যাপিলন, অল দ্য প্রেসিডেন্টস ম্যান। ইদানীং নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ইন্টারনেটে বিচরণ করাটাও রোজকার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে তাঁর। ফরমুলা ওয়ানের দারুণ ভক্ত। বিশেষ করে মাইকেল শুমাখারের রেস দেখতে তো যেকোনো কষ্ট করতে রাজি সাবেক পর্তুগিজ অধিনায়ক।
এত কিছুর ভিড়ে ফুটবল কোথায়? আছে। সুযোগ পেলেই মাঠে গিয়ে খেলা দেখেন। সেটা না হলে অন্তত টেলিভিশনে। বিভিন্ন দাতব্য কাজে ডাক পেলে এখনো প্রীতি ম্যাচ খেলতে জার্সি গায়ে মাঠে নামতে আপত্তি নেই তাঁর। এ ব্যাপারে ফিগোকে অনুরোধ করে কেউ কখনো নিরাশ হয়ে ফেরেননি। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে বঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার। এখন থেকেই তাই কাজ করছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও।

No comments

Powered by Blogger.