৩৬- সুবিধাবাদ আমাদের অস্থিমজ্জায়, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সংগ্রামে আমি সর্বস্ব পণ করে আছি

রাগান্বিত আইজি স্বগৃহে ফিরে গেলেন
আইজি (প্রিজন) এতটাই রাগান্বিত হয়েছেন যে, আমার সঙ্গে বাদানুবাদের পর আর মুহূর্তকাল জেল প্রাঙ্গণে থাকেননি, তত্ক্ষণাত্ স্বগৃহে ফিরে গেছেন। গাড়িতে ওঠার সময় সুপারকে বলে গেছেন আর কোনো লোক যাতে আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারে। আইজি যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন কারারক্ষী সাত নম্বর সেলের ফটকের বাইরে চেয়ার পেতে বসে গেল লোক ঠেকাতে।....

আজ ঈদুল ফিতর। জেলখানায় একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আমি পড়তে যাইনি। পরিণত বয়সে এসে কোরআন শরীফ এবং মহানবীর আদর্শ বোঝার চেষ্টায় সামান্য কিছু পড়াশোনা করা ছাড়া ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান একেবারেই অনুল্লেখ্য। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, জেল বন্দিদের জন্য ঈদের জামাতে অংশ নেয়া ওয়াজিব নয়। সাত নম্বর সেলের বাসিন্দাদের মধ্যে অর্ধেক আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করে নামাজে না গেলেও বাকিরা গেছে। জেলখানার মধ্যে নাকি একটা সুদৃশ্য মসজিদও রয়েছে, যার নির্মাণের পেছনে এক এগারোর বিত্তবান বন্দিদের ভূমিকা ছিল। ওই মসজিদেই প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে জেলের কর্তাব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করেছেন। ঈদের সকাল থেকে গারদের বাইরের টানা বারান্দায় একটা চেয়ার পেতে বসেছিলাম।
দশটার পর থেকে কুশল বিনিময়ের জন্য অন্যান্য সেল এবং ওয়ার্ডের বন্দিদের সাত নম্বর সেলে আসা শুরু হলো। অধিকাংশের উদ্দেশ্য আমার সঙ্গে কোলাকুলি করা। দুই ঈদের দিন দুপুর পর্যন্ত কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই বন্দিরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াতে পারেন। বেলা এগারোটার দিকে দেশের তাবত্ কারাগারের রাজা মহামহিম আইজি আমাদের সেলে পদার্পণ করলেন। তখনও অনেক বন্দি আমার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। এই দৃশ্যে আইজি মহোদয়ের ভ্রূ কুঞ্চিত হয়ে গেল। তিনি আমার দিকে দৃকপাত না করে বিরক্ত চেহারায় আগত বন্দিদের দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করার চেষ্টায় রত হলেন। আমার চরিত্রগত কারণেই জেলে আসার পর আইজি’র সঙ্গে এই একমাত্র সাক্ষাত্ সুখপ্রদ হলো না। অকপটে স্বীকার করছি, দোষটা প্রধানত আমারই। জেলে আসা ইস্তক বর্তমান আইজি সম্পর্কে বন্দি-রক্ষী নির্বিশেষে একজনের কাছ থেকেও ভালো কিছু শুনিনি। সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা পেশায় একজন ডাক্তার হলেও তার মধ্যে মানবিকতা এবং জেলকোডের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা যে নেই, তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ আমার সাত নম্বর সেলে অবস্থান। তারই নির্দেশে জেল গেটে আমাকে অশালীনভাবে বডি সার্চ করা হয়েছিল, ২৬ নম্বর সেলে না পাঠিয়ে জেলকোড ভঙ্গ করে জেলের প্রথম তিনদিন ভূমিশয্যা গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ৭২ ঘণ্টা আমার দানা-পানিরও কোনো রকম ব্যবস্থা করা হয়নি।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) জাকির হাসানের মতো সত্ লোকের পর আইজি পদে এই ব্যক্তিকে জেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একজনও বোধহয় অন্তর থেকে মেনে নেয়নি। এদেশে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক খুঁটির জোরে যেহেতু বহু বিষয় সাব্যস্ত হয়, সেই কারণেই সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত বর্তমান আইজিও দোর্দণ্ডপ্রতাপে জেল প্রশাসন চালাচ্ছেন। তার পরিবারে নানাবিধ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অন্তর কেন কোমল হয়নি, সেটা অন্তর্যামীই জানেন। এমন একজন ব্যক্তির দৃশ্যতঃ আমাকে উপেক্ষা করার চেষ্টায় বিষম বিরক্তবোধ করছিলাম। মনে হলো, এই লোকটি এখানে এসে আমার নিরানন্দ ঈদকে আরও অসহনীয় করে তুলল। এমনিতেই ঢাকা জেলে আমার অভ্যর্থনা এবং অদ্যাবধি শীর্ষ কর্মকর্তাদের আচার-আচরণ মনঃপূত না হওয়ায় জেলার এবং তদূর্ধ্ব কোনো কর্মকর্তাকে দেখলেই নিজের কুরূপদর্শন চেহারাটা যে অধিকতর কঠিন হয়ে ওঠে, সেটা সর্বদাই বুঝতে পারি। সহনশক্তি এতটা কম হওয়ার অপরাধ তাই আমারই।
ছোটখাটো দৈহিক গড়নের আইজি আমার দৃষ্টি এড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন, আর আমিও ঠায় চেয়ারে বসে আছি। ইমারতের স্বাভাবিক নির্মাণ পদ্ধতির কারণেই বারান্দাটাও আঙিনা থেকে একটু উঁচুতে। আমিও চেয়ার পেতেছি একেবারে আঙিনা ঘেঁষে, যার ফলে চেয়ারের সামনে বারান্দায় উঠে যে কেউ দাঁড়াবে, তারও উপায় নেই। আইজি মহোদয়ের মনের ইচ্ছে ভালোই বুঝতে পারছি। তিনি চাইছেন আমি যেন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিয়ে নিজ পরিচয় দেই। আমার চরিত্র সম্পর্কে তার নিশ্চয়ই কোনো পূর্ব ধারণা নেই। আবহাওয়া ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে দেখে জেল সুপার তৌহিদ এগিয়ে এসে বলল, উনি আমাদের মাননীয় আইজি। শশব্যস্ত সুপার যে দু’জনকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, ততক্ষণে তাদের উভয়েরই পারস্পরিক অপছন্দের পারদ যথাসম্ভব ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। রীতিমত অভদ্রজনোচিত হচ্ছে উপলব্ধি করেও বসা অবস্থাতেই নিস্পৃহভাবে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। অপমানিত আইজি আর রাগ সামলাতে পারলেন না। ব্যঙ্গ সহকারে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কোমরে কোনো ব্যথা আছে নাকি? জবাব দিলাম, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। তারপরই স্বভাবসুলভ এক লাফে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে সমবেত সবাইকে বুঝিয়ে দিলাম, এতক্ষণ ইচ্ছাকৃতভাবেই বসেছিলাম। আইজি’র হাত তখনও আমার হাতের মধ্যে ধরা; ভদ্রলোক এবার বারান্দায় উঠে কি কারণে জানি না আমার হাত টেনে বললেন, আসুন একটু হাঁটি। কোনো পক্ষেই ভদ্রতার কোনো মুখোশ আর অবশিষ্ট নেই। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে রূঢ়ভাবে বললাম, হাঁটার কোনো প্রয়োজন বোধ করছি না।
জেলের তাবত্ কর্মকর্তা, অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে আগত বন্দি এবং সাত নম্বর সেলের প্রতিবেশীরা যার যার নিঃশ্বাস বন্ধ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আইজি আবারও বললেন, না দেখতে চাচ্ছিলাম কতটা সুস্থ আছেন। গলার স্বর আরও কঠিন করে বললাম, এতটাই সুস্থ আছি যে গায়ের জোরে আমার সঙ্গে পারবেন না। বর্তমান সরকারের আশীর্বাদধন্য কারা প্রশাসনের এক নম্বর ব্যক্তির পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হলো না। কোনো কথা না বলে গট গট করে হেঁটে আইজি সেল ত্যাগ করলেন। তার সঙ্গে আগত এডিশনাল আইজিকে দেখলাম নিপাট ভদ্রলোক। সম্ভবত: কর্নেল পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তাটি আমার কুশল জিজ্ঞাসা তো করলেনই, সেল ত্যাগের সময় সুপারকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন আমার যেন কোনো অসুবিধা না হয়। বিকেলে খবর পেলাম আইজি এতটাই রাগান্বিত হয়েছেন যে, আমার সঙ্গে বাদানুবাদের পর আর মুহূর্তকাল জেল প্রাঙ্গণে থাকেননি, তত্ক্ষণাত্ স্বগৃহে ফিরে গেছেন। গাড়িতে ওঠার সময় সুপারকে বলে গেছেন, আর কোনো লোক যাতে আমার সঙ্গে দেখা করতে না পারে। আইজি যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন কারারক্ষী সাত নম্বর সেলের ফটকের বাইরে চেয়ার পেতে বসে গেল লোক ঠেকাতে। অবশ্য সেই কাজটিও বেচারা কেবল চাকরি রক্ষার খাতিরেই করেছিল, সবার আসা সত্যি সত্যি বন্ধ করেনি। দশ বছরের অধিককাল ধরে জেলবাসী ফয়সাল বলল, আপনার নির্ঘাত চালান আসছে, ভিআইপি বন্দিদের ক্ষেত্রে এটুকুই আইজি’র ক্ষমতা।
দুপুর একটার দিকে অলিউল্লাহ নোমান ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে ডিউককে সঙ্গে নিয়ে এলো। ২০০৬ সালে তত্কালীন সরকারে দায়িত্ব পালন শেষ হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ার এই ভাগ্নের সঙ্গে আর আমার দেখা হয়নি। ডিউক দশ নম্বর সেলে নানা প্রকার হেনস্থার মধ্যে আছে। তার আইনজীবী এবং আত্মীয়-স্বজনরা প্রয়োজনমত দেখা করতে পারছে না। তদুপরি ঈদের পরপরই বেচারাকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। সরকার যে কোনো প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ২১ আগস্ট বোমা হামলার সঙ্গে জড়াতে চায়। ডিউক এখন তাদের তুরুপের তাস। কোনো রকম বিলম্ব না করে ডিউককে ভালো আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে শুধু চা দিয়ে আপ্যায়ন করলাম। নোমানরা চলে গেলে মনে হলো, আর সহসা ওদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। নোমান ইন্শাআল্লাহ্, এ মাসেই মুক্তি পাচ্ছে; ডিউকের মুক্তি অবশ্য অনিশ্চিত। তবে আমি এবং ডিউক এক জেলে থাকলেও আবার সেই ঈদুল আজহার আগে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই।
মধ্যাহ্নভোজে ফয়সালের আতিথ্য গ্রহণ করলাম। ওর মা এবং বোন বাসা থেকে পোলাও-গোস্ত পাঠিয়েছে। আমি আগেই পারভীনকে কোনো কিছু পাঠাতে নিষেধ করেছিলাম। আমার জন্মদিনে বাসা থেকে পাঠানো সামান্য মিষ্টি এবং ফল নিয়েই মাসুমকে সারাদিন হাইকোর্ট দেখিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ বিকেল বেলায় সেগুলো আমার সেলে পাঠিয়েছিল। তাও আবার পারভীনকে সরাসরি সুপারের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। এ কথা পরে জানতে পেরে এতটাই অপমানিত বোধ করেছি যে, শক্ত করে বলে দিয়েছি বাসা থেকে কোনো খাওয়ার জিনিস আর যেন পাঠানো না হয়। এসব কারণে সাত নম্বর সেলের লোকজন আমাকে কিছুটা ক্ষ্যাপাটে লোকই মনে করে। যাই হোক, ফয়সালের সেলে বসে পেট পুরে খেলাম। জেলে আসার পর সাড়ে তিন মাসে এটাই সর্বোত্তম আহার। সন্ধ্যা নেমে এলে ছ’টার মধ্যে আমারটা ছাড়া বাকি পাঁচ সেলে তালা পড়ে গেল। রোজার মাস শুরু হওয়ার পর থেকে রাত ন’টার আগে আমি না বললে আমার সেলে তালা দেয়া হয় না। ভিআইপি সেলের বন্দিদের এই সুবিধা প্রাপ্তির সঙ্গে জেল কর্তৃপক্ষ আমাকেও না চাইতেই দয়া প্রদর্শন করেছে। বারান্দায় চেয়ার নিয়ে একাকী বসে আছি। মাঝে মধ্যে কারারক্ষীরা সাত নম্বর সেলের আঙিনায় উঁকি দিয়ে আমাকে উপবেশনরত দেখে সালাম দিয়ে চলে যাচ্ছে। মাগরিবের নামাজের পরও অন্ধকারের মধ্যে ভূতের মতো একা বসে রইলাম। বাড়ির কথা মনে পড়ছে। মা আর পারভীনের ঈদ হয়তো কান্নাকাটিতেই গেছে। মা’র এক সময়ের সহকর্মী এবং বান্ধবী সাহারা খালা এবারের ঈদে নিজের বাড়ি ছেড়ে আমাদের ওখানেই আছেন। তিনি থাকায় শাশুড়ি-বৌ কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাচ্ছে। কাল রাতেও ঘর-সংসার নিয়ে ছেঁড়া ছেঁড়া মন খারাপ করা স্বপ্ন দেখেছি। রোজার মাসটায় ঘুমের বেশ সমস্যা গেল। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে কিছুদিন হয়তো সময় লাগবে।
ঈদের পরদিন পারভীন এসে হাজির হলো। ঈদের দিনসহ পরবর্তী তিনদিন বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনরা অতিরিক্ত একটা দেখার সুযোগ পায়। আমার সাক্ষাত্পর্ব সচরাচর কুড়ি মিনিট থাকলেও আজ দশ মিনিট অতিরিক্ত পাওয়া গেল। জেলগেটে উপস্থিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও অন্যান্য দিনের চেয়ে অতিরিক্ত সৌজন্য প্রদর্শন করলেন। ঈদের গল্পের পাশাপাশি আমার দেশ চালানো নিয়েও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। বিজ্ঞাপনের দুরবস্থা পূর্ববত্। পাওনা টাকা-পয়সা পেতেও সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের সাহসের সীমানা বেডরুম পেরিয়ে বড়জোর বসার ঘরে আড্ডারত বন্ধু-বান্ধব পর্যন্ত। চায়ের কাপে এরা তুফান তুলতে পারে, কিন্তু আদর্শের জন্য জোরালো নৈতিক অবস্থান নেয়ার মতো মানুষের সংখ্যা কম। সুবিধাবাদ আমাদের অস্থিমজ্জায় মিশে গেছে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সংগ্রামে আমি এদিকে নির্বোধের মতো সর্বস্ব পণ করে বসে আছি। সমাজে এই লড়াইয়ের মূল্য কতটা, আমি জানি না। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাঁচ বছরে কেবল নিজে সব ধরনের দুর্নীতিমুক্ত থাকিনি, আমার সহকর্মীদেরও সততার সঙ্গে জীবনযাপনে অনুপ্রাণিত করেছি। অথচ সমাজের চিহ্নিত সব দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট দুর্নীতির মামলা ঠুকতে দুদকের কর্মকর্তাদের অন্তর একবারের জন্যও পীড়িত হয়নি। আমার মরহুম মামা এমআই খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং এনবিআর-এর সদস্য ছিলেন। মায়ের এই একমাত্র সহোদর সারাটা জীবন কঠোরভাবে সততার চর্চা করে গেছেন। জীবনে বিয়ে করেননি, পাছে সংসার চালাতে কোনো রকম সমঝোতা করতে হয়। বিনিময়ে কোনো সরকারের কাছ থেকেই কোনো প্রশংসা তাঁর কপালে জোটেনি। তিনি সচিব হতে পারেননি, অতিরিক্ত সচিব হিসেবেই অবসরে গেছেন। রাজনীতি ও দুর্নীতির পঙ্কে নিমজ্জিত প্রশাসনে স্বাভাবিক পদোন্নতি পর্যন্ত তাকে দেয়া হয়নি। আজকালকার সচিবদের মেধার অবস্থা দেখলে বিস্ময়ের সঙ্গে মামার জন্যও বড় কষ্ট হয়। উচ্চ শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, সাহসী, আপসহীন প্রকৃতির সত্ একজন সরকারি কর্মকর্তা পার্থিব জীবনে কিছুই না পেয়ে মাত্র ৬৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার কথা কেউ মনে রাখেনি। মহান আল্লাহ্তায়ালা নিশ্চয়ই তার সততার যথাযথ পুরস্কার দেবেন। এদেশে সত্যনিষ্ঠ মানুষেরা বড় নিঃসঙ্গ হয়। এজন্যই আদালত অবমাননা মামলায় আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের সমাপ্তিতে বলেছিলাম, সত্যের পথে থাকলে মূল্য দিতে হয়। আমি এবং আমার পরিবার সেই মূল্য দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.