২৭- প্রিজন ভ্যান একটু এগোতেই চোখ জুড়িয়ে গেল : সামনেই বঙ্গোপসাগরের আদিগন্ত জলরাশি

ল্লাহর বান্দা কত বিচিত্রভাবেই না সৃষ্ট
...হঠাত্ করেই আমার হাত ধরে হাসমত আলী ওই অবস্থাতেই কেঁদে ফেললেন। বার বার স্বগতোক্তির মতো বলতে লাগলেন, এই দীর্ঘ পথে আপনাকে খেতে দিল না। আমি অবাক হয়ে হাসমত আলীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এনএসআই’র চাপের মুখে তিনিই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাকে গ্রেফতারের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নিয়ে ১৪ দিন রেখেছে, থানায় নির্যাতন করেছে, টিএফআই সেলে নিয়ে চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে লটকে রেখেছে। অথচ আজ আমি অভুক্ত থাকার জন্য তিনি এভাবে কাঁদছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কত বিচিত্রভাবেই না সৃষ্টি করেছেন।...

বেলা এগারোটায় কক্সবাজার জেল গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ প্রিজন ভ্যানে উঠলাম। ভেতরে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই দেখে ভালোই লাগল। কাঠের বেঞ্চে বসে ঝাঁকুনি খাওয়ার চেয়ে বরং দাঁড়িয়ে কক্সবাজারের রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে আদালতে যাওয়াই উত্তম। প্রিজন ভ্যান অল্প একটু এগোতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। সামনেই বঙ্গোপসাগরের আদিগন্ত জলরাশি। নীল আকাশ আর ফেননিভ সমুদ্র মিলেমিশে একাকার। সমুদ্রের তীর ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে ভিড় ঠেলে বেশ ধীরেই গাড়ি চলছে। রাস্তার দু’পাশে নতুন গড়ে ওঠা সব হোটেলের সারি।
মাত্র তিনদিন পরেই নতুন বছর আসছে। দেখলাম, অগুনতি মানুষ আপনজন নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছে। এক ভদ্রলোক তার হাত ধরে থাকা সাত-আট বছরের ছেলেকে প্রিজন ভ্যানের দিকে ইশারা করে কিছু একটা বললেন। হয়তো চোর-ডাকাত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এ জাতীয় কিছু। সি-গাল হোটেল পার হলাম। মনে পড়ল আমার বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে এই হোটেলটি সেখানে নিবন্ধিত হয়েছিল। হোটেলটির মালিক তার কি এক সমস্যা নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। তারপর চোখে পড়ল পর্যটন মোটেলগুলো। মোটেল প্রবাল নজরে আসতেই কত স্মৃতি মনে ভিড় করে এলো। সেই আশির দশকে মধুচন্দ্রিমা যাপন করতে এখানেই এসেছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশ যাত্রার সামর্থ্য হয়নি। এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার, টেকনাফ, রাঙামাটি ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। পঁচিশ বছর পার হয়ে গেছে। যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে গেছি। অথচ, চোখ বুজলে মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা।
২০০৬ সালে সরকারি দায়িত্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকেই পারভীন বার বার এখানে আসতে চেয়েছে, কিন্তু সময় করে ওঠা হয়নি। আমি এ বছরই গ্রেফতার হওয়ার আগে কক্সবাজার ঘুরে গেছি, আজ যে মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছি সেটারই জামিন নেয়ার জন্য। এবার মুক্তি পেলে পরে স্ত্রীকে নিয়ে আর কি আসা হবে কোনোদিন? জীবনের এই প্রান্তে এসে মনে হচ্ছে আপনজনদের প্রতি দায়িত্ব পালনে বড় অবহেলা হয়ে গেল। আদালতের রাস্তায় প্রিজন ভ্যান যখন মোড় নিচ্ছে, তখনও মনের উদাস ভাবটা দূর হয়নি। হঠাত্ অনেক কণ্ঠের স্লোগানে সংবিত্ ফিরল।
স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজলের নেতৃত্বে হাজার খানেক রাজনৈতিক কর্মী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই আদালত চত্বরে মানববন্ধন করছেন। আমাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান দেখতে পেয়ে তারা আমার মুক্তির দাবিতে সমস্বরে স্লোগান দিয়ে উঠেছেন। গাড়ি থেকে নামার সময় সেই জনতার মধ্য থেকে কেউ কেউ উদগ্রীব হয়ে এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করলেন, পুলিশের বাধায় সেটা আর সম্ভব হলো না। দূর থেকে সালাম বিনিময় করেই উভয়পক্ষকে সন্তুষ্ট থাকতে হলো। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে হেঁটে ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে উঠলাম। মামলার বাদী, টেকনাফের বিতর্কিত এমপি বদি’র ছোট ভাই আদালতে অনুপস্থিত। এত কাঠখড় পুড়িয়ে সরকার আমাকে আনল, অথচ বাদীর দেখা নেই। আজকের তারিখটিও বাদীর পীড়াপীড়িতেই নির্ধারিত হয়েছিল। তারপরও সে আসার প্রয়োজন বোধ করেনি।
আমার আইনজীবীরা আদালতকে বললেন, মামলা দায়েরের পর এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মামলা দায়েরের দিনটি ছাড়া বাদী মাত্র একবার এসেছে। এমনিতেই এই মিথ্যা মামলার কোনো ভিত্তি নেই, তদুপরি বাদীর পরিষ্কার অনাগ্রহ। সব মিলিয়ে আজই মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আমার পক্ষের আইনজীবীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে মামলা খারিজের জন্য জোরালো আবেদন তুলে ধরার পর বাদীর আইনজীবী আবারও সময়ের প্রার্থনা করলেন। তর্কাতর্কির এই দীর্ঘ সময় ধরে তিন আসামি অর্থাত্ আমি, প্রকাশক হাসমত আলী এবং সিটি এডিটর জাহেদ চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।
হঠাত্ করেই আমার হাত ধরে হাসমত আলী ওই অবস্থাতেই কেঁদে ফেললেন। বার বার স্বগতোক্তির মতো বলতে লাগলেন, এই দীর্ঘ পথে আপনাকে খেতে দিল না। আমি অবাক হয়ে হাসমত আলীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এনএসআই’র চাপের মুখে তিনিই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাকে গ্রেফতারের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নিয়ে ১৪ দিন রেখেছে, থানায় নির্যাতন করেছে, টিএফআই সেলে নিয়ে চোখ বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে লটকে রেখেছে। অথচ আজ আমি অভুক্ত থাকার জন্য তিনি এভাবে কাঁদছেন! আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে কত বিচিত্রভাবেই না সৃষ্টি করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেট দীর্ঘক্ষণ ধরে রায় লিখেই চলেছেন। এত লম্বা রায় লেখা দেখে মনে আশা জন্মালো হয়তো মামলা আজ খারিজ হতে চলেছে। কিন্তু, হা হতোস্মি! ম্যাজিস্ট্রেট মার্চের নয় তারিখে শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করলেন। বাদী পক্ষের আবেদন আমলে নিয়ে শুধু সময় দিতে এত দীর্ঘ রায় লেখার কী প্রয়োজন পড়ল, বিজ্ঞ আদালতই সেটা ভালো জানেন। নতুন তারিখ নিয়ে প্রিজন ভ্যানে ফিরতি যাত্রার জন্য উঠলাম। উপস্থিত জনতা হাত নেড়ে বিদায় জানালেন। সমুদ্রের পাড়ঘেঁষা স্মৃতিবিজড়িত রাস্তা ধরে জেলে ফিরলাম। সেদিন আর ঢাকায় ফেরা সম্ভব হলো না।
পরদিনও দুপুর পর্যন্ত উত্কণ্ঠায় কাটল, পুলিশ এসকর্ট কিংবা গাড়ি কোনোটারই খবর নেই। একটায় যখন কক্সবাজারে আরও একরাত থেকে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি প্রায় নিয়ে ফেলেছি, সেই সময় জেলার মুজিব হাসিমুখে এসে বলল, চলেন স্যার, সব প্রস্তুত। পরদিন ভোর চারটায় কাশিমপুর জেলে কেমন করে এসে পৌঁছালাম, সেই বর্ণনা দিয়ে আর লাভ নেই। শুধু এটুকু বলে রাখছি, সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম শহর পার হওয়া থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পৌঁছানো পর্যন্ত পুরোটা পথেই মনে হচ্ছিল এই বুঝি দুর্ঘটনা ঘটল। ভয়াবহ সেই রাস্তা আর যানজটের অবস্থা। শ্রান্ত, ক্লান্ত দেহে কাশিমপুরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সাত নম্বর সেলে এসে বিছানায় পড়ে গেলাম। ফজরের নামাজের আগে ওই অল্প সময়ে আর ঘুমালাম না। তিনদিনের এত ধকল সত্ত্বেও এক ক্লান্তি ছাড়া শরীর সুস্থ থাকার জন্য আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া জানালাম। হঠাত্ খেয়াল হলো, আজ বছরের শেষ দিন। ২০১০ সালের প্রথম পাঁচ মাস কোর্ট থেকে কোর্টে ছুটে ফিরেছি, আর শেষ সাত মাস জেল থেকে জেলে। আল্লাহ্ আমার জন্য ২০১১ সালে কেমন ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, সেটি কেবল তিনিই জানেন। তবে যাই ঘটুক না কেন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ্।
নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন জেল সুপার টিপু সুলতান শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসে অনেকক্ষণ গল্প-গুজব করে গেল। দেশের সার্বিক অবস্থা, আমার জেলজীবন, ক’দিন আগের সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ, প্রেস ক্লাব নির্বাচন আমাদের গল্প থেকে কোনো বিষয়ই বাদ পড়েনি। টিপুর কাছ থেকেই শুনলাম, জেলের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে পরিবর্তন হয়েছে। সাত মাসের অভিজ্ঞতায় জেনেছি, সুপার এবং জেলার কারা প্রশাসনের দুই বড় সাহেব হলেও বন্দিদের দৈনন্দিন জীবনে বড় সুবেদারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বন্দিদের থাকার জায়গা নির্ধারণ, সশ্রম কয়েদিদের কাম পাস দেয়া, জেলের আইন-কানুন ভাঙার সাজা প্রদান ইত্যাদির বেলায় বড় সুবেদারই সর্বেসর্বা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুপার, জেলার সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে জেল চালানোর অভিজ্ঞতাতেও বড় সুবেদারই অনেক এগিয়ে থাকে।
কাশিমপুর জেলে আমার প্রথম আসার দিনেও বড় সুবেদার সাত্তারই সবার আগে প্রিজন ভ্যানের দরজার সামনে আমাকে গ্রহণ করেছিল। সেই সাত্তারের আজ থেকে নাকি ছোট সুবেদারে পদাবনতি ঘটেছে। ছোট সুবেদার মোসলেম বড় সুবেদারের দায়িত্ব পেয়েছে। দু’জনার মধ্যে দায়িত্ব অদল-বদল আর কি। নতুন বছর সাত্তারের জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে। কেবল ক্ষমতা চর্চাই নয়, এই পদটির সঙ্গে মোটা অংকের অর্থ উপার্জনের সুযোগও জড়িত। শুধু সরকার নির্ধারিত বেতনের ওপর নির্ভর করে এই বাজারে এক সংসারের খরচ নির্বাহ করাই যে কঠিন ব্যাপার, এটা বোধহয় সবাই স্বীকার করবেন। আর কাশিমপুর জেলে চাউর আছে যে, সুবেদার সাত্তারের সংসারের সংখ্যা একাধিক। বেচারার জন্য সমবেদনাই বোধ করলাম। নবনিযুক্ত বড় সুবেদার মোসলেম আবার পীরভক্ত মানুষ। এই ক’দিন আগে ছুটি নিয়ে মানিকগঞ্জে তার পীরের বার্ষিক মাহফিলে যোগ দিয়ে ফিরেছে। আমার শ্বশুরের দেশ মানিকগঞ্জে যে এত বড় একজন কামেল পীর ছিলেন, সেই তথ্য আমার জানা ছিল না। সুবেদার মোসলেম মাহফিল থেকে ফিরে এসে বলল, এবার নাকি দশ লাখ মুরিদ চারদিনব্যাপী মাহফিলে অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের এই ব্যাপারটা আমি বুঝতে অক্ষম। দাবি করা হয়ে থাকে যে, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাতেও নাকি প্রতি বছর দেশ-বিদেশের কুড়ি-পঁচিশ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে। এত বিপুলসংখ্যক ধার্মিক মানুষের দেশে সরকার এমন সরাসরি ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকে, এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাই না। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যত্সামান্য পড়াশোনা করে যা বুঝেছি, তাতে আমাদের ধর্মের মূল কথাই তো জালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের আল্লাহ্ প্রদত্ত অধিকার নিশ্চিত করা। নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে সেই বিপ্লবের চেতনা থেকে সরে থেকে শুধু আচার পালন করার নামই কি ইসলাম? পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ করে আমার মনে হয়নি আচারসর্বস্ব ধর্মপালন করে পরকালে আল্লাহ্র তরফ থেকে পুরস্কার পাওয়ার কোনো সুযোগ আছে। আবারও খোলা মনে স্বীকার করছি যে, ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই বললেই চলে।
যাকগে, টিপুর সঙ্গে লম্বা আড্ডা মেরে সময় মন্দ কাটল না। তবে, সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ব্রি. জে. (অব.) জাকির হাসান সম্পর্কে তার বিরূপ মন্তব্যে অবাক হয়েছি। এর আগে জেলে আর কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে জাকির হাসানের নিন্দা শুনিনি। অবশ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা ড. আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধায়ক আমলে জেলজীবন নিয়ে লেখা বইতে জাকির হাসানকে কোনো রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই দুর্নীতিপরায়ণ বলার চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যান্য কারারক্ষী এবং কয়েদিদের কাছ থেকে শুনেছি ড. আনোয়ারের আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ভাইয়ের কম্বল কারখানা তত্ত্বাবধায়ক আমলে ব্রি. জে. জাকির বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলেই নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতার এই ব্যক্তিগত বিরাগ। বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর বাংলাদেশের স্বাভাবিক নিয়মে জেলখানার সেই কম্বল কারখানা আবার চালু হয়েছে। ড. আনোয়ার হোসেনের বিরূপ মন্তব্য ছাড়া এ পর্যন্ত যতগুলো জেলে ঘুরেছি, তার প্রতিটিতেই কারারক্ষী এবং আসামি নির্বিশেষে সবার মুখেই একবাক্যে জাকির হাসানের সততা, দক্ষতা এবং কর্মনিষ্ঠার প্রশংসা শুনেছি।
টিপু সুলতান ঠিক কী কারণে সাবেক আইজিকে এতটা অপছন্দ করে তার কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পেলাম না। হঠাত্ মনে পড়ল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও জাকির হাসানের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। জেলখানার লোকজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া যখন সংসদ এলাকায় পাশাপাশি দুই বিশেষ কারাগারে জেনারেল মইনের বন্দি ছিলেন, সেই সময় তত্কালীন আইজি জাকির হাসান তার আচার-আচরণে আজকের প্রধানমন্ত্রীকে তেমন সন্তুষ্ট করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মনে করতেন যে, আইজি জাকির হাসান তাকে উপেক্ষা করে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগ সত্য না মিথ্যা বলতে পারব না, তবে তার বিরূপ ধারণার মূল্য জাকির হাসানকে এখন ভালোমতই চুকাতে হচ্ছে। চাকরি তো বেচারার গেছেই; তার ওপর কথিত দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে একাধিক তদন্তও নাকি চলছে। আগেই উল্লেখ করেছি, টিপু সুলতানের দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জে। একই জেলার বাসিন্দা হওয়ার কারণেও সাবেক আইজি’র ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও জেল সুপারের এই মতৈক্য হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.