১৯- শেয়ারবাজারের লুণ্ঠন করা টাকা লন্ডন কানাডা আমেরিকায় পাঠানোর ধুম পড়ে যাবে

বিবেক বন্ধক রেখে হুকুম তামিল
... প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার যখন জেলে পাঠাবেন, তখন ভাবছি আদালতের কাছ থেকে গান শোনার আগাম অনুমতি নিয়ে রাখব। আমাকে দ্বিতীয়বার জেলে পাঠাতেও প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়ই সহযোগীর কোনো অভাব ঘটবে না। বিবেক বন্ধক দিয়ে হুকুম তামিলের জন্য এদেশে অসংখ্য গোলাম, শফিক, মামুন, খায়রুল রয়েছে। ওদের কাছে ন্যায়-অন্যায় নেই, সত্-অসতের বিচার নেই, দেশপ্রেম নেই। আছে শুধু মনিবকে তুষ্ট করার ব্যাকুলতা।...

গতকাল সুপ্রিমকোর্টে আমার জামিনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ কর্তৃক সাজা প্রদানের পর সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা হয়নি। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি মো. ফজলুল করিমের শর্ট অর্ডারের ভিত্তিতেই কয়েদবাস চলছে।
সুপ্রিমকোর্টের সেই দণ্ড ঘোষণার আগে অতিরিক্ত আড়াই মাস বিনাবিচারে আটক থেকেছি। অর্থাত্ গ্রেফতারের দিন থেকে হিসাব কষলে আমার ছয় মাসের কারাবাস ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেই ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি পর্যন্ত আমার জামিনের আবেদন করেছিলেন। তারা আদালতে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, একজন নাগরিকের সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন করার অধিকার অন্তত থাকা উচিত। এসব তথ্য এবং যুক্তিতে কোনো কাজ হয়নি। চেম্বার আদালতের লর্ডশিপ সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জামিন আবেদন খারিজ করে বলেছেন, খুব শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়া হবে। রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পরই কেবল আমার আইনজীবীরা আবার জামিনের আবেদন নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন। নয় মণ তেলও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না। অর্থাত্ রায়ও পাওয়া যাবে না, রিভিউ পিটিশনও করা যাবে না। এদেশের ‘স্বাধীন’ বিচারব্যবস্থার কাছ থেকে কী চমত্কার ইনসাফই না আমি ক্রমাগত পেয়ে চলেছি!
রিভিউ পিটিশন করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, আমার ওপর যে বিচারিক নির্যাতন হয়েছে, সে বিষয়টি জনসমক্ষে পুনর্বার তুলে ধরা, জামিনপ্রাপ্তি নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আমাকে সেই সুযোগটুকুও দিতে চান না। একটি দেশে বিচার বিভাগের এই হাল হলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি কেবল ফাঁকা বুলিতে পর্যবসিত হয়। ন্যায়বিচারের সব পথ বন্ধ করে বর্তমান শাসকশ্রেণী দেশবাসীকে সম্পূর্ণ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিতে চান কি-না, সেটাই বুঝতে পারছি না।
বিকেলে সেলের বারান্দায় বসে একমনে পাখির কলরব শুনছি, এমন সময় বিকেলের সুবেদার মোসলেম ক্ষুদ্র একটা সুসংবাদ নিয়ে এলো। কাল নির্ধারিত হাজিরার জন্যে আমাকে ঢাকা সিএমএম আদালতে যেতে হচ্ছে না। কোর্ট দারোগা নাকি জানিয়েছে, জেল প্রশাসনের একজনের মাধ্যমে কাস্টডি ওয়ারেন্ট পাঠালে মামলার পরবর্তী তারিখ তারা দিয়ে দেবে। গতকালের সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তে মেঘলা হওয়া মন এই সামান্য খবরেই কিছুটা উজ্জ্বল হলো। একটা দিন অন্তত প্রিজন ভ্যানের ঝাঁকুনি থেকে বাঁচলাম। এই শনিবার সম্ভবত রাজশাহী যেতে হচ্ছে। সেখানকার জেলে দু’রাত থেকে আবার ফরিদপুর জেলযাত্রা। দুই জায়গাতেই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ছাপানোর অপরাধে মানহানি মামলা হয়েছে।
ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্ট একই অভিযোগে আটটি মামলা আমলে নিয়ে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। বিচারের নামে উচ্চ আদালতে যা হচ্ছে, তারপর নিম্ন আদালতকে আর দোষ দিয়ে লাভ নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে মান একমাত্র আওয়ামী-বাকশালিদেরই আছে। বাদবাকি আমরা সবাই কুলশীলমানহীন আমজনতা। সবকিছু প্ল্যানমাফিক চললে ফরিদপুর থেকে ১৫ ডিসেম্বর কাশিমপুরে ফিরব। চার-পাঁচদিনের পদ্মা-যমুনার ওপারের ভ্রমণের কথা ভাবতে ভালোই লাগছে। যানবাহনের বিষয়টা সম্পর্কে অবশ্য এখনও কিছু জানি না। এর আগে নাজিমউদ্দীন রোডের জেল থেকে গোপালগঞ্জে আনা-নেয়ার বন্দোবস্ত ভালোই লেগেছিল। সরকারের যে ভাব-ভঙ্গি, তাতে সেবারের মাইক্রোবাস পাল্টে প্রিজন ভ্যানের ব্যবস্থা হলে অবাক হব না। রিমান্ডে নির্যাতনের অভিজ্ঞতার পর থেকে সবধরনের পরিস্থিতির জন্যেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তাছাড়া কাশিমপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রিজন ভ্যানেই যেতে হচ্ছে। যাওয়া-আসায় সেও তো সাত-আট ঘণ্টার ধাক্কা। রাজশাহী যেতে অতটা সময় নাও লাগতে পারে। অতএব আমি প্রস্তুত।
সুবেদার মোসলেম চলে যাওয়ার পর প্রতি বিকেলের সঙ্গী মানিক বৈকালিক চায়ের আসরে যোগ দিল। চেয়ারে বসেই বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, শেয়ারবাজারে নাকি ১৯৯৬ সালের মতো ধস শুরু হয়ে গেছে। পরপর তিনদিনের মোটা অংকের দরপতনে ক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আজ দুপুরে মতিঝিলের রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে গাড়ি ভেঙেছে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কার্যালয়সহ আশপাশের ইমারতে ভাংচুর চালিয়েছে। ডিজিটাল সরকার যথারীতি পুলিশ নামিয়ে অবস্থা আপাতত সামাল দিয়েছে। কালকের কথা বলা যাচ্ছে না।
এই সংবাদে আমি একটুও অবাক হলাম না। শেয়ারবাজার কারসাজি আওয়ামী আমলে লুটপাটের এক পরীক্ষিত মোক্ষম পদ্ধতি। আমি গ্রেফতার হওয়ার আগেই দেখতে পাচ্ছিলাম, জনগণের পকেট কাটার জন্যে কীভাবে বাজারের বেলুনটাকে কৃত্রিমভাবে ফোলানো হচ্ছে। মাত্র এক বছরে নানা কারসাজির মাধ্যমে মূল্যসূচক এবং লেনদেন বাড়িয়ে বেলুনটাকে এমন সাইজে নেয়া হয়েছে যে, ফেটে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল। ১৯৯৬ সালেও আমরা অভিন্ন খেলা দেখেছি। কিন্তু এদেশের সাধারণ নাগরিক শিক্ষা নিল কই? নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার জন্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ১৯৯৬ সালে যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হুজুগে বাঙালি পুরনো কথা ভুলে গিয়েই তো ২০০৮ সালে দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেছে।
আমার গ্রেফতারের মাত্র একদিন আগে ৩০ মে ‘টাকার পাহাড় যাচ্ছে কোথায়’ শিরোনামে প্রকাশিত মন্তব্য-প্রতিবেদনে আমি ঠিক এ প্রসঙ্গেই লিখেছিলাম, “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও একটি বৈপরীত্য এখন ক্রিয়াশীল রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ থেকেই শিল্পখাতে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে শেয়ার মার্কেটে দর এবং মূলধন বৃদ্ধির এক অবিশ্বাস্য প্রতিযোগিতা চলছে। ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির সময় মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্ট স্পর্শ করেছিল। আর এখন সেটি ৬ হাজার অতিক্রম করেছে। প্রতিদিনের লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। বছরে ২২৫ দিন শেয়ার মার্কেট খোলা থাকলে কেবল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেই বার্ষিক লেনদেন এখন ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। শেয়ার কেনাবেচায় বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো এ বছরের মধ্যেই টাকার অংকে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ আমাদের মোট জাতীয় আয়কে অতিক্রম করবে, যা বর্তমানে ৬ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি।
আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে এখন যা চলছে, তাকে স্রেফ জুয়া ছাড়া আর কোনো নামে ডাকার উপায় নেই। ফটকাবাজ গোষ্ঠীর কারসাজিতে সৃষ্ট এই বিশালাকায় বেলুন ফুটো হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সম্ভবত বর্তমান সরকারের মেয়াদের বছরখানেক বাকি থাকতে এই বেলুনটি ফাটবে এবং পরিণামে এদেশে অসংখ্য দেউলিয়া মানুষের সঙ্গে আমরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেউলিয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দেখতে পাব। চোখের সামনে অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক একটা অগ্রহণযোগ্য কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, অথচ আমাদের সব ধীমান অর্থনীতিবিদরা নীরব।”
আমার সাবধান বাণীতে কোনো কাজ হয়নি। হ্যামিলনের বংশীবাদকের পেছনে ছুটে চলা ইঁদুরের পালের মতো বাংলাদেশের মানুষও রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার মোহে সরকারের প্রচারণার ফাঁদে পা দিয়েছে। তবে আমার ধারণা, শেয়ারবাজার নিয়ে শেষকথা বলার সময় এখনও আসেনি। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সরকারের জনসমর্থনে অবিশ্বাস্য ধসের বিষয়টি জেলে বসেও টের পাচ্ছি। ঘনায়মান বিপদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি তৈরি হোক, এটা ক্ষমতাসীনরা চাইতে পারে না। এদিকে ক’দিন পরেই ঢাকায় ওয়ান ডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সুতরাং যে কোনো মূল্যে সরকারকে শেয়ারবাজার সামলাতে হবে। আজই হয়তো ব্যাংক থেকে আরও টাকা ঢেলে ফুটো বেলুন মেরামতের নির্দেশ ওপর থেকে চলে আসবে। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তেমন লাভ না হলেও সরকারদলীয় হোমরা-চোমরাদের লুটপাটের আর এক প্রস্থ সুযোগ ঘটবে।
টাকা বানানোর খেলা এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে বলে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। মানিককে আবারও বললাম, শেয়ারবাজারের চূড়ান্ত ধস নামতে ২০১২ সাল লেগে যাবে। সে সময় সাধারণ নাগরিকের লুণ্ঠনকৃত টাকা হুন্ডির মাধ্যমে লন্ডন, কানাডা, আমেরিকায় পাঠানোর ধুম পড়ে যাবে। চূড়ান্ত মুহূর্তে নিজের কাঁধ থেকে অপকর্মের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার জন্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কী গল্প ফাঁদবেন, তার মুসাবিদা তাকে এখন থেকেই শুরু করতে হবে। ১৯৯৬ সালে তত্কালীন অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়া শেয়ারবাজার বোঝেন না বলে পার পেয়েছিলেন। মুহিত সাহেব কী বলেন, সেটা শোনার অপেক্ষায় আছি।
অবিশ্রান্ত বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে। বিছানার পাশেই হাতঘড়ি রেখে ঘুমাই। দেখলাম পাঁচটা বাজে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আজান শোনা যাবে। কম্বলের উষ্ণতা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। সেলের ভেতরে বাতি জ্বলছে। বাইরের অন্ধকারে বৃষ্টি দেখতে পাচ্ছি না, কেবল শব্দই শুনছি। ডিসেম্বর না আসতেই পুরনো কয়েদিদের কাছ থেকে কাশিমপুরের বিখ্যাত শীতের গল্প শুনেছি। সেই তীব্র শীতের দেখা এখনও মেলেনি। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সেই অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে। পারভীন আগে থেকে দুটো কম্বল পাঠিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত একটা দিয়েই কাজ চলছে। এই বৃষ্টির মধ্যে আজ আর হাজিরা দিতে যেতে হবে না মনে হতে ভালোই লাগল। অনেকটা বাল্য বয়সের স্কুলে না যাওয়ার মতো অনুভূতি। মনে মনে জেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিলাম।
এখানকার কারা প্রশাসনের ছেলেগুলোর ব্যবহার ভালোই। সুপারের গ্রামের বাড়ি আওয়ামী লীগারদের তীর্থভূমি গোপালগঞ্জ। জেলার ছেলেটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, শুনেছি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিল। কিন্তু কারও ব্যবহারেই সৌজন্যের ঘাটতি নেই। জেলারের নেতারও ধারণা, আমি নাকি শখ করে জেল খাটছি। শুয়ে শুয়ে আজানের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বৃষ্টির মধ্যে কেমন যেন কেঁপে কেঁপে আসছে। শয্যাত্যাগে আর আলস্য চলে না। নামাজ অন্তে গরম কফির মগ হাতে, গায়ে চাদর জড়িয়ে বারান্দায় বসে গেলাম। বৃষ্টিভেজা সকাল। তার মধ্যেই শত শত বুলবুলি, শালিক, ঘুঘু আহারের খোঁজে বেরিয়েছে। কংক্রিটের জঙ্গলে জন্ম থেকে বাস করছি। এত কাছ থেকে কোনোদিন ঘুঘু দেখা হয়নি। কী চমত্কার পাখি! একটা আবার গাছের ডালে বসে বৃষ্টির ছাঁটের মধ্যেই একমনে ডেকে চলেছে। ঘু ঘু ঘু ...। দীর্ঘদিন পর বৃষ্টির মধ্যে বড় গান শুনতে ইচ্ছে করছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত কিংবা নুসরাত ফতেহ আলী খানের অসাধারণ সুফি সঙ্গীত। জেলখানায় রেডিও শোনার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শোনা যায় কি-না, জানি না। এবারের জেলজীবনে আর সেই খবর নেয়ার উত্সাহ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার যখন জেলে পাঠাবেন, তখন ভাবছি আদালতের কাছ থেকে গান শোনার আগাম অনুমতি নিয়ে রাখবো। আমাকে দ্বিতীয়বার জেলে পাঠাতেও প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়ই সহযোগীর কোনো অভাব ঘটবে না। বিবেক বন্ধক দিয়ে হুকুম তামিলের জন্যে এদেশে অসংখ্য গোলাম, শফিক, মামুন, খায়রুল রয়েছে। ওদের কাছে ন্যায়-অন্যায় নেই, সত্-অসতের বিচার নেই, দেশপ্রেম নেই। আছে শুধু মনিবকে তুষ্ট করার ব্যাকুলতা। সকাল সাড়ে সাতটায় সুবেদার সাত্তার হাসিমুখে পুরনো খবর নতুন করে দিয়ে বললো, আপনাকে আজ সিএমএম কোর্টে যেতে হচ্ছে না, স্যার। অন্যদিনের মতো আজ আর সাত্তারের আমার সঙ্গে গল্প করার সময় নেই। এখনই কেস টেবিল বসবে। সেখানে কয়েদিদের সমস্যা নিয়ে বিচারে বসবেন সুপার এবং জেলার। সাত্তার আমাকে সুসংবাদ দিয়ে সেদিকেই দৌড়ালো। আমি পূর্ববত্ বৃষ্টি দেখতে থাকলাম।

No comments

Powered by Blogger.