ডেমোক্র্যাটরা সাবধান! ট্রাম্প প্রতিশোধের ছক কষছেন by জনাথন ফ্রিডল্যান্ড

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও মেয়র নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি হেরে গেছে। এতে ডেমোক্র্যাটরা, এমনকি বিশ্বের অনেক মানুষই খুশি। কিন্তু এখন তাদের সতর্ক হতে হবে, কারণ ট্রাম্প হার মানতে জানেন না। তিনি আর যেন না হারেন, সেই চেষ্টা তিনি করবেন। তার জন্য ন্যায্য বা অন্যায্য, যে কোনো পথে হাঁটতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটরা পরস্পর গ্লাস ঠুকে জয় উদ্‌যাপন করছেন। কারণ, এই জয় এসেছে এমন সময়ে, যার ঠিক এক বছর আগে তাঁরা হোয়াইট হাউস, সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ—সবকিছু ট্রাম্পের কাছে হারিয়েছিলেন। সবচেয়ে নাটকীয় জয়টি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে। সেখানে জোহরান মামদানি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

আমেরিকার অন্য প্রান্তেও ডেমোক্র্যাটরা সাফল্য পেয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররা আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ভোট দিয়েছেন, যা কিনা ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এর মাঝেই নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাটরা গভর্নর নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।

এই সাফল্যগুলো ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছে। বিশেষ করে তাঁর নিজের শহর নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে তিনি খুব বিরক্ত হয়েছেন। ট্রাম্প মামদানিকে ‘এক কমিউনিস্ট পাগল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর এই কথার পরই মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মাগা) শিবির সক্রিয় হয়ে মামদানির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে।

নিউইয়র্ক পোস্ট প্রথম পাতায় মামদানির ব্যঙ্গ ছবি ছেপেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁর হাতে হাতুড়ি ও কাস্তে। ওপরে লেখা ‘দ্য রেড অ্যাপল’। সেখানে ‘আর’ অক্ষরটি উল্টো করে দেওয়া হয়েছে, যাতে সেটিকে সোভিয়েত প্রতীকের মতো লাগে। ফক্স বিজনেস চ্যানেলও ‘বলশেভিক’ ধাঁচের গ্রাফিকস ব্যবহার করে সমাজতন্ত্রের ‘বৈশ্বিক হুমকি’ নিয়ে অনুষ্ঠান করেছে।

রিপাবলিকানদের লক্ষ্য হলো, আগামী বছরের মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের ‘মামদানি মার্ক্সবাদী দল’ হিসেবে তুলে ধরা। তবে ডেমোক্র্যাটরা আত্মবিশ্বাসী। তারা মনে করে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপ কমানো ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই আক্রমণ সামলানো সম্ভব। তারা রাজ্যভেদে ভিন্নভাবে কথা বললেও মূল বার্তা এক—মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা। ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির প্রার্থীরাও মামদানির মতো এই ইস্যুই তুলেছেন; তবে আরও মধ্যপন্থী ও শান্ত ভাষায়।

এই কৌশল ২০২৬ সালের প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনে কাজ করতে পারে। কিন্তু ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (যেখানে একটি জাতীয় বার্তা ও একটি একক প্রার্থী নিয়ে শহর ও উপশহর উভয় শ্রেণির ভোটারকে একত্র করতে হবে) সেটি অনেক কঠিন কাজ হবে।

এই ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা রাজনীতিবিদদের গতানুগতিক কাজ হলেও এখন সামনে আছে আরও ভয়ানক হুমকি। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তিনি নিউইয়র্কে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দিতে পারেন। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, তিনি এর আগেও নজির ভেঙে ওয়াশিংটন ডিসি ও লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা পাঠিয়েছেন এবং শিকাগো ও পোর্টল্যান্ডে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন।

এটি আসলে ট্রাম্পের আরও অনেক পদক্ষেপের মধ্যকার একটি। তিনি এখন থেকেই চেষ্টা করছেন যেন ২০২৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনগুলো এই সপ্তাহের নির্বাচনগুলোর মতো না হয়, অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে না যায়। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়, মধ্যবর্তী নির্বাচনে মানুষ ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে ভোট দেয়। তাই অনেকের ধারণা, আগামী বছরে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদ আবার নিজেদের দখলে নিতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে প্রেসিডেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হবে।

কিন্তু ট্রাম্প এমনটি হতে দিতে চান না। এ জন্যই তিনি টেক্সাসের রিপাবলিকানদের ওপর চাপ দিয়ে কংগ্রেসীয় সীমানা এমনভাবে পুনর্নির্ধারণ করিয়েছেন, যাতে পাঁচটি নতুন ‘নিরাপদ রিপাবলিকান আসন’ তৈরি হয়। তার জবাব হিসেবেই ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটরা নিজেরাও পুনর্বিন্যাস করে আরও পাঁচটি আসন বাড়াতে এবার ভোটারদের অনুমতি চেয়েছেন। ভোটাররা তাতে সম্মতি দিয়েছেন।

এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, মিসৌরি ও ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকানদেরও একইভাবে এলাকা পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। ভোটাররা রিপাবলিকানদের ছেড়ে গেলেও যাতে হাউস রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য অতিরিক্ত আসন তারা সৃষ্টি করতে চায়।

তবে এই সপ্তাহের ফল বলছে, যদি নির্বাচন অবাধ হয়, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা জিততে পারে এবং তারা ট্রাম্পের স্বৈরাচারী পথে বাধা দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচন আদৌ অবাধ হবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড, গার্ডিয়ান পত্রিকার কলাম লেখক
- দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.