যেসব কারণে গাজা যুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধারা বিজয়ী

ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন শুরু করে ৮ জুলাই যা ২৬ আগস্ট কায়রোয় এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যদিয়ে শেষ হয়। এ যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজার নিরীহ মানুষের উপর আকাশ, ভূমি ও স্থলপথে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে অন্তত দুই হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার ঘর-বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও কেন ফিলিস্তিনিরা এ যুদ্ধে বিজয় দাবি করছে- তার কারণ বিশ্লেষণ করেছেন আমাদের ভাষ্যকার। তার মতে, যুদ্ধে জয়-পরাজয় নির্ধারণের জন্য সবার আগে দু'পক্ষের যুদ্ধপূর্ব লক্ষ্যগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে।

>>দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। গত মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার রাফা শহর থেকে তোলা ছবি l এএফপি
গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলনকে 'সন্ত্রাসী' সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে এ দু'টি সংগঠনকে 'নির্মূল' করার লক্ষ্যে ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন চালায়। তেল আবিবের ঘোষিত আরেকটি লক্ষ্য ছিল, গাজা থেকে ইসরাইল অভিমুখে রকেট হামলা বন্ধ করা। এ ছাড়া, গাজায় স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে অসংখ্য ভূগর্ভস্থ টানেলের সম্মুখীন হওয়ার পর ইসরাইল ঘোষণা করে এসব টানেল ধ্বংস করা হচ্ছে তাদের এ অভিযানের 'প্রধান লক্ষ্য'। সেইসঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করার জন্য হামাসকে 'নিরস্ত্র' করার দাবিও তোলে ইসরাইল।

কিন্তু বাস্তবে এসব লক্ষ্যের একটিও পূরণ হয়নি তেল আবিবের। হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের একজন রাজনৈতিক নেতাকেও তারা হত্যা করতে পারেনি। যুদ্ধের শেষের দিকে এসে তিনজন হামাস কমান্ডার শহীদ হলেও ইসরাইল অভিমুখে হামাসের রকেট হামলায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি। অর্থাৎ প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল। পাশাপাশি গাজা থেকে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তেল আবিব। মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হওয়ার আগ মুহূর্তেও হামাসের নিক্ষিপ্ত রকেট হামলায় দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়। অর্থাৎ, শেষ মুহূর্তেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সামরিক ক্ষমতা অটুট ছিল যুদ্ধ শুরুর দিনের মতোই। এ ছাড়া, ইসরাইলি সেনারা ক্যামেরার সামনে গাজার সীমান্তবর্তী কয়েকটি টানেল ধ্বংস করতে পারলেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিশাল টানেল নেটওয়ার্ক অক্ষুণ্ন রয়েছে। আর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় পর্যদুস্ত ইসররাইল কায়রো চুক্তি সই করার সময় হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি তুলতেই ভুলে যায়।

অন্যদিকে হামাস শুরু থেকে বলে আসছিল, গাজা উপত্যকার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতি মানবে না। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের দাবিতে অটল ছিল। কায়রো চুক্তি অনুযায়ী এরইমধ্যে গাজায় প্রবেশের দু'টি ক্রসিং খুলে দিয়েছে ইসরাইল এবং আরো কয়েকটি অচিরেই খোলা হবে। এ ছাড়া, এর আগে গাজা উপকূলের তিন মাইলের মধ্যে মাছ ধরতে পারতেন ফিলিস্তিনি জেলেরা। কায়রো চুক্তিতে তার ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ছয় মাইল করা হয়েছে।

জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে দৃশ্যত গাজার অনেক বেশি ক্ষতি হলেও সে ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সাত বছরের ইসরাইলি অবরোধের সময় অপুষ্টিজনিত কারণে প্রতিদিন গাজার দু'টি শিশু মারা গেছে। সে হিসেবে বছরে মারা গেছে অন্তত ৭০০ শিশু। সাত বছরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫,০০০। অর্থাৎ অবরোধের শিকার গাজায় জীবনের ক্ষতি হচ্ছিল যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি। কাজেই, যেকোনো মূল্যে অবরোধ তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়া হামাসের কোনো উপায় ছিল না। সে বিশাল লক্ষ্যটি এবারের যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বলেই  এ যুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধারা বিজয় হয়েছেন বলে আমাদের ভাষ্যকার উল্লেখ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.