গল্প- পড়া ভূত শোনা ভূত by নাইস নূর

এক ভূতের দেশে ‘পড়া’ ভূত ও ‘শোনা’ ভূত নামে দুই যমজ ভাইবোন বাস করত। তারা দেখতে প্রায় একই রকম। তবে ভাই ‘পড়া’র চেয়ে বোন ‘শোনা’ একটু বেশি সুন্দর।
ভাইবোনের মধ্যে এক-আধটু ঝগড়া তো হতেই পারে, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পড়া ও শোনার কোনো দিনই এ রকম হয় না। তাদের মধ্যে অনেক মিল। একসঙ্গে তারা সব কাজ করে। আর সবাই তাদের দেখে বলে, ‘দেখেছ, পড়া আর শোনা কত ভালো, কত মিষ্টি তাদের ভাইবোনের সম্পর্ক!’

ভূতদের স্কুলে পড়ালেখায় সবচেয়ে ভালো পড়া ও শোনা। শিক্ষকেরা তাই তাদের খুব ভালোবাসত। পড়া আর শোনার কিছু ক্লাসমেট ছিল, যারা লেখাপড়ায় খুব অমনোযোগী। একবার ভূত স্কুলের সব শিক্ষক সিদ্ধান্ত নিল, ক্লাস শেষে পড়া ও শোনা দুজন মিলে সব অমনোযোগী ছাত্রছাত্রীকে পড়াবে। এই মহান দায়িত্ব পেয়ে পড়া ও শোনা তো খুব খুশি! মনে মনে তারা নিজেদের টিচার ভাবতে শুরু করল, আর প্রতিদিন ক্লাস শেষে দুষ্টু বাচ্চা ভূতদের পড়াতে লাগল। প্রথমে কেউ ঠিকমতো পড়তে চাইত না। খুব বিরক্ত করত। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর সবাই পড়া ও শোনার ভক্ত হয়ে গেল। একসময় দুষ্টুরাও মনোযোগী ছাত্র হলো। ভূতের স্কুলেরও বেশ নাম হলো। স্বীকৃতিস্বরূপ স্কুল থেকে পড়া ও শোনা পেল গোল্ড মেডেল। আর এই খবর ভূতের দেশের সব পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবীব্যাপী। খবর পৌঁছে গেল লাল-সবুজের বাংলাদেশেও।
বাংলাদেশের কিছু স্কুল ‘পড়া’ ও ‘শোনা’র কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠাল। পত্রে লিখল, পড়া ও শোনা ভূত রাজি থাকলে এই দেশে এসে কিছু অমনোযোগী ছাত্রকে পড়ালে তারা খুব উপকৃত হবে। পড়া আর শোনা সাদরে গ্রহণ করল সেই আমন্ত্রণপত্র। বাংলাদেশে এসে তারা প্রথম ভর করল প্রান্ত নামে এক দুষ্টু ছাত্রের ওপর। কী যে দুষ্টু প্রান্ত, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না!
একদিনের ঘটনা—
প্রান্ত হোমওয়ার্ক না করে বাসায় দুষ্টুমি করছে। আর তখনই পড়া ও শোনা ভূত প্রান্তের মাথায় ভর করল। তবুও প্রান্ত লেখাপড়া শুরু করল না। প্রান্ত উচ্চ স্বরে বলতে লাগল, ‘আমি তোমাদের কথা শুনব না। তোমরা পচা ডিমের মতো। তোমাদের আমার ভালো লাগে না।’
পড়া ভূত বলল, ‘তাহলে কি তুমি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হতে চাও না! তোমাকে তো সবাই অশিক্ষিত বলবে!’
‘বলুক, তবু আমি পড়ব না। আর আমি তো মানুষই। আমার চোখ, নাক, মাথা সবই আছে।’
শোনা বলল, ‘না নেই! লেখাপড়া না জানলে সবই অর্থহীন।’
প্রান্ত এবার চমকে উঠল।
পড়া ভূত বলল, ‘তুমি লেখাপড়া না করলে প্রতিদিন দুপুরে তোমাকে আমরা ভয় দেখাব, তোমার খেলনা লুকিয়ে রাখব।’
প্রান্ত এবার কেঁদে দিল। ‘আমার খেলনা লুকাবে না, আমি পড়ব।’
শোনা ভূত বলল, ‘আর যদি লেখাপড়া করো, আমরা তোমাকে অনেক খেলনা ও মজার মজার চকলেট গিফট করব।’
‘কিন্তু আমি তোমাদের দেখা পাব কোথায়? তোমাদের নাম কী?’
‘আমাদের নাম পড়া ও শোনা। তুমি যখন পড়তে বসবে, আমরা তোমার পাশেই থাকব।’
প্রান্ত এসব কথা শুনে খুব মনোযোগী হয়ে হোমওয়ার্ক শেষ করল।
তারপর বলল, ‘পড়াশোনা ভূতেরা আমাকে ভয় দেখিয়ো না।’
আমি তোমাদের বন্ধু হব আর লেখাপড়াও করব।’
এভাবেই অনেক দুষ্টু বাচ্চার মন জয় করল পড়া আর শোনা ভূত।
অভিভাবক ও শিক্ষকরাও খুব খুশি।
সবাই বলতে লাগল, ‘পড়া ও শোনা ভূত সবার বন্ধু হলে কত্ত ভালো হতো’!

No comments

Powered by Blogger.