তাদের ইসলাম আর আমাদের ইসলাম by মুনতাসীর মামুন

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মানুষজন সোচ্চার হয়ে ওঠার পর সরকার যখন তা সমর্থন করে, তখন থেকে জামায়াত ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই সরকার বিরোধিতার পথ গ্রহণ করে।
বিএনপি কাউন্সিল করেও অন্তর্বিবাদ না থামাতে পেরে সরকার বিরোধিতায় সোচ্চার হয়ে ওঠে। তাদের ধারণা, এতে অন্তর্বিবাদ কমতে পারে। সুপ্রীমকোর্ট পঞ্চম সংশোধনীর বিষয়ে স্থগিতাদেশ খারিজ করলে জামায়াত ও বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো এখন প্রমাদ গুনছে। কৌশল হিসাবে তারা ৫০ বছর আগের পাকিস্তানী শাসকদের কৌশল গ্রহণ করেছে অর্থাৎ ইসলাম গেল, ইসলাম রা করতে হবে'_এ স্লোগান নিয়ে তারা পথে নামার কথা ভাবছে। শেখ হাসিনার সফল ভারত সফরের পর বেগম জিয়া এখন পথ কাঁটায় ভরে দেবেন কিনা জানি না। কিন্তু ভারত বিরোধিতার পথ তিনি ছাড়ছেন না। কৌশলে তিনি এ কথা বলারই চেষ্টা করবেন যে হিন্দু ভারত মুসলমান বাংলাদেশকে গ্রাস করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ ধর্ম বিপন্ন। সে পাকিস্তানী কৌশল, লণীয় যে 'ইসলাম' আবার চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলো সব 'ইসলামী' জামানত শাখা খুলছে। এগুলো খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিনা জানি না। তবে 'ইসলামী ব্যাংক', 'ইসলামী বীমা'র বিজ্ঞাপন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৫০ বছর পর যদি আমাদের আবার পুরনো পথে ফিরতে হয় তাহলে বলতে হবে জাতি হিসাবে আমাদের জ্ঞানচুর উন্মিলন হয়নি।
জামায়াতের আমীর নিজামী বলেছেন, "ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে সরকার শুধু ইসলামী দলগুলোকেই নিষিদ্ধ করতে চায়। কারণ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ আওয়ামী লীগের পকেট সংগঠন। এর কিছু হবে না, তাই আজ জাতিকে মাঠে নামার ডাক দিতে হবে। নইলে ইসলামের নাম-নিশানা রা করা যাবে না।"
না, এখানেই তিনি থামেন নি।
অন্য ধর্মব্যবসায়ীদের দলগুলোকে তিনি আরও উসকে দিতে চাইছেন। তিনি বলেছেন, "আইন মন্ত্রীর বক্তব্য [ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ হতে পারে সংবিধান অনুসারে] দলমত নির্বিশেষে কালেমায় বিশ্বাসী সকল মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নাম করে কিছু আলেমকে বোঝানো হয়েছিল, এতে তিগ্রস্ত হবে জামায়াতে ইসলামী, আপনাদের কিছু হবে না। আইনমন্ত্রীর ৪ জানুয়ারির বের্ফাস মন্তব্যে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন কোন ইসলামী দল ও ব্যক্তিত্বের মনে কোন দ্বিধা নেই যে, ইসলামের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক সরকার তাদের ওপর আঘাত হানতে চাইছে।"
[আমাদের সময়, ৭.১.১০]
চারদলীয় জোটের অন্যতম ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান আমিনী বলেছেন, নারীর নেতৃত্ব কোরান-হাদিস সমর্থন করে না। কিন্তু প্রয়োজনের কারণে আমরা একজনের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছি, কারণ, একজন ইসলামের প েকিছু কথা বলেন, অপরজন ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।" [প্র. আলো ৮.১.১০] প্রয়োজনে আমিনীরা কোরান-হাদিসের বরখেলাপ করতে পারেন তাতে ইসলাম বিপন্ন হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরাও যদি প্রয়োজনে আইনের সংস্কার করে [করা হচ্ছে না, যে সংবিধান ছিল তাই পুনঃপ্রবর্তন করা হবে] তা হলে তা ইসলামের বরখেলাপ হবে না কেন?
যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বক্তব্য, 'বর্তমান সরকার গণেশের মতো, তাদের দেহটা আওয়ামী লীগের, মাথাটা বামপন্থীদের।' না, এখানেই শেষ নয়। নিজামী বলছেন, "এমনিতেই তাদের আকাশ-সংস্কৃতির যন্ত্রণায় অস্থির। তার ওপর সাংস্কৃতিক চুক্তির নামে তাদের সানসিক দাসে পরিণত করার এক অশুভ দ্বার খোলা হয়েছে।"
[কালের কণ্ঠ, ১১.১.১০] নিজামীরা ব্যবসায়ীদের বলেন না কেন, ভারতীয় কেবল টিভি না চালাতে। পয়সা খরচ করে তা না আনলেই হয়। আর জামায়াতীরা সাংস্কৃতিক চুক্তির অধীনে ভারত না গেলেই হয়। পাকিস্তানের দ্বার তো তাদের জন্য উন্মুক্ত।
নিজামীর মতে, 'সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের কট্টরতম ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে।' [কালের কণ্ঠ, ১৬.১.১০] তিনি সবাইকে তা প্রতিরোধে কারাবরণের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন। [জনকণ্ঠ ১১.১.১০]
ভাগ্যের কী পরিহাস একাত্তরের ঘাতকদের মুখে আজ ইসলামের মহিমা শুনতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালে এ ঘাতকরা হানাদার পাকিস্তানীদের সঙ্গে মিলে ৩০ লাখ মুসলমান যে হত্যা করেছে তার কথা তারা ভোলাতে চাইছে। ইসলামের ইতিহাসে ইসলামের নামে মুসলমানদের দ্বারা ৩০ লাখ মুসলমান হত্যা কখনও হয়নি। এ সত্য বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণরা কীভাবে ভুলে গেলেন।' জাতি হিসাবে আমাদের জিনে একটা গন্ডগোল আছে। জামায়াত ইসলামের নামে আগে নারী নেতৃত্ব নাজায়েজ ঘোষণা করেছে, তারপর নারী নেতৃত্বের অধীনে মন্ত্রী হয়েছে। ব্ল্যাশফেমি আইন প্রবর্তন করতে চেয়েছে। শরিয়া আইনের কথা বলেছে। কত বলব? কিন্তু, এগুলো যে এক ধরনের প্রতারণা তা আগেও বলেছি এবং মনে হচ্ছে এখন বার বার তাদের প্রতারণার কথাগুলো বলা দরকার।
এ প্রসঙ্গে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করি_"যারা মানুষ খুন করেছে, তারা বাংলাদেশ থেকে সভ্যতার বোধ উচ্ছেদ করতে চেয়েছে, তারা বাংলাদেশ থেকে ইতিহাসের বোধ উধাও করতে চেয়েছে। তাহলেতো সভ্যতার বোধহীন দেশে থাকবে কেবল খুনীরা। এ অবস্থান থেকে জামায়াতে ইসলামী এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো হত্যার রাজনীতি করেছে, হত্যার রাজনীতি জামায়াতে ইসলামী এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো মুক্তিযুদ্ধের আগে করেছে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে করেছে এবং এখনও করে চলেছে।" [যুগান্তর ১৯.১.১০] তাই যুদ্ধাপরাধের বা খুনের বিচারটা হওয়া জরুরী। আর জামায়াতের ভয়টা এখানেই।
এবার নিজামী আমিনী সাঈদীদের ইসলাম ও আমাদের ইসলামের পার্থক্যটা দেখুন। তাদের ইসলামের মূল বিষয়-নিজ স্বার্থ হাসিল, সাধারণ মানুষকে ইসলামের নামে উস্কে দেয়া ও যে কোন মূল্যে তা ভণ্ডামী হোক আর মিথ্যা বলে হোক মতা দখল করা। কয়েকটি উদাহরণ_
খান শামসুর রহমানের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অধ্যাপক ওয়াদুদুর রহমান ছিলেন আমার শিক। নিপাট ভাল মানুষ এ শিক বিভাগীয় চেয়ারম্যান থাকার সময় আমি ইতিহাস বিভাগে শিক হিসাবে যোগ দেয়ার সুযোগ পাই। খান শামসুরের সঙ্গে সে সুবাদে আমি ও অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায় দু'দিন দেখা করি আমাদের একটি গবেষণার প্রয়োজনে। দীর্ঘণ আলাপ হয়েছিল সে সময়। 'প্রশাসনের অন্দরমহল' নামে আমাদের লেখা বইটি পাঠকের কিঞ্চিৎ প্রীতি লাভ করেছিল। খান শামসুর প্রশাসন তো বটে রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়েছিলেন, নয়তো আগরতলা মামলার প্রথম দশ জন আসামির মধ্যে একজন হবেন কিভাবে? বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মানুষটি নিভৃতচারী।
শামসুর রহমান যেখানে উল্লেখ করেছেন, ১৯৬৯ সালের দিকে যখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে একটি শাসনতন্ত্র রচনার কাজ করছিলেন, তখন রাজাকার শ্রেষ্ঠ, জামায়াতের ভূতপূর্ব আমির গোলাম আযম তার সঙ্গে দেখা করে শাসনতন্ত্রে যেন ইসলামী আইনের বিষয়টি থাকে সে বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন। গোলাম আযমকে তিনি একটি লিখিত খসড়া দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যা তিনদিনের মধ্যে গোলাম আযম দেবেন বলে বিদায় নিয়েছিলেন। আজ প্রায় চলি্লশ বছর হলো গোলাম আযম আর সে বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে ফেরেননি।
কেন ফেরেননি? অথচ নিয়ত তারা ইসলাম, ইসলামী আইনের কথা বলছেন। গোলাম আযমের পড়াশোনা তার পরবতর্ী যেসব বায়তুল মাল এখন দলে আছে তাদের থেকে বেশি। তিনি জানেন, এ বিষয়ে কিছু করার নেই। কিন্তু তবুও কেন জামায়াত বা অন্য ইসলামী দলগুলো এসব বলে? কারণ আর কিছু নয়, তাদের পুঁজি ধর্ম আর এ ধর্ম বিনিয়োগ করে তারা কিছু ফায়দা লুটতে চায়। প্রকৃত ধর্মের অনুসারী অর্থাৎ কথায় ও কাজে ঠিক থাকলে আমরা তাদের সমালোচনা করতাম না। কিন্তু আমরা করি, কারণ আমরা জানি তারা হচ্ছে ভণ্ড। ধর্মব্যবসায়ীদের দল।
জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট প্রভৃতিকে আমি "ইসলামী দল' বলার বিরুদ্ধে। জেনে না জেনে, কথার কথা হিসাবে আমরা এদের 'ইসলামী দল' বলে এদের ধর্মের সংরক হিসাবে গণ্য করছি এবং এরা বলার সুযোগ পাচ্ছে, এরাই ইসলামের ধারক, অন্যান্য সত্যিকার ইসলামের ধারক নয়, অতএব আমাদের হেদায়েতের অধিকার তাদেরই আছে। যে কাজটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিরা করেছিল। এদের ইসলাম ব্যবসায়ী দল বলা বেশ যুক্তিযুক্ত।
বাংলাদেশে এ ধরনের ইসলামী ব্যবসায়ী দল অনেক। এর কারণ, ইসলাম নিয়ে কথা বললেই দু'একজন খাদেম জুটে যায়, মেইন স্ট্রিমের দলগুলো এদের ঘাঁটায় না আর এ সুযোগে এরা বিত্ত-মতা যতটুকু পারে সংগ্রহ করে ও প্রয়োগ করে। তাদের ল্য আখেরাত নয়, দুনিয়ায় বেহেশত নির্মাণ। আর রাজনৈতিক মতা পেলে এ নির্মাণ কাজ সহজ। লাভ বেশি, ব্যয় কম। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যবসায়ী দলগুলোর প্রধানদের ইনকাম কত? ট্যাক্স দেন কিনা-এর হদিস আপনারা পাবেন না। দুনিয়ার এসব ঝামেলা থেকে তারা মুক্ত। আর যেহেতু রাজনীতিবিদ প্রশাসকদের একটা বড় অংশের সঙ্গে যোগ আছে দুনর্ীতির, সেজন্য তারা এসব ব্যাপারে কথা বলার সাহসও রাখেন না।
বাংলাদেশের ইসলাম ব্যবসায়ী দলগুলোর কিছু কথা আপনারা প্রতিনিয়ত শুনে থাকবেন। সেগুলো হলো, আল্লাহর আইন কায়েম করা, খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা, ইসলামী উম্মাহ, ইসলামী অর্থনীতি, বিশ্বাসের নামে জঙ্গীবাদ প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে আমরা কোন প্রশ্ন করি না এবং করি না
দেখে তারা অবলীলাক্রমে পার পেয়ে যায়। কয়েকদিন আগে মরহুম অধ্যাপক সফিউদ্দিন জোয়ারদারের পুরনো একটি প্রবন্ধ আবার পড়ে এ প্রশ্নগুলো মনে জাগল। ইসলামে ইজতিহাদের পথটি এগিয়ে নিতে পারতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী বিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব বিভাগের শিকরা। কিন্তু মনে হয়, এরা তাকলিদে বেশি বিশ্বাসী।
বিশ্ববাসীর সঙ্গে তর্ক হয় না, কিন্তু তার বিশ্বাসের কতটুকু সত্য, কতটুকু নয়, সে বিষয়ে বিতর্ক চলতে পারে। আল্লাহ, রাসুল (সা.) মেনেই ইসলামের বিভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা চলতে পারে এবং হাজার বছর ধরে চলেছে প্রচণ্ড বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও। ইসলাম অনুসরণ করে সহজ-সত্য পথের এবং সহজ-সরল পথ অনুসরণ করলেই ইহলোক তো বটেই, পরলোকেও শান্তি। এই পথ ত্যাগ মানে বিদাআ'ত বা ধ্বংস। এটি হচ্ছে সাধারণ ধারণা। কিন্তু এই বিদাআ' তের মীমাংসা নিয়েও বিরোধ আছে। কট্টরপন্থীরা বিশ্বাস করেন, পুর্বসূরিরা যা বলেছেন বা যে পথ অনুসরণ করেছেন তার বাইরে গেলেই বিদাআ'ত। সেখানে যুগের দাবি, বাস্তবতা বিচার্য নয়। কিছুদিন পরপর কিছু কিছু ইসলাম ব্যবসায়ী নেতা যে আমাদের অনেককে 'মুরতাদ' ঘোষণা করেন তা এই বিশ্বাস থেকেই। অথচ কোরানের পথ অনুসরণ করলে নিশ্চয় তারা আমাদের 'মুরতাদ' ঘোষণা করতে পারতেন না, কারণ খোদা তাদের সেই অধিকার দেননি। এজন্যই বলি, এরা ইসলামের ঠিকাদার বা ইসলাম ব্যবসায়ী দল।
ধর্মবিশ্বাস জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কট্টরপন্থী বিশ্বাসীদের বিশ্বাস সম্পর্কিত সব ব্যাখ্যা বা প্রচার মেনে নিলে কি সভ্যতা এতটা পথ আসতে পারত? যারা ধর্মের সৃজনশীল ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মের মূল বিশ্বাস ছাড়া আনুষঙ্গিক উপাদানগুলো যুগোপযোগী করেছেন সেসব ধর্মের মানুষরাই এগিয়ে গেছে। যারা পারেনি, তারা পিছিয়ে গেছে এবং সময় লুপ্ত হয়ে যাবে। পৃথিবীর অনেক বিশ্বাস এভাবে লুপ্ত হয়ে গেছে। সফিউদ্দিন জোয়ারদার যথার্থই মন্তব্য করেছিলেন_ 'কোন সমাজই বৃত্তাবদ্ধ থাকতে পারে না ধমর্ীয় আইনকানুনের বৃত্তেও নয়।
আমাদের দেশের 'ইসলামপন্থীরা' মনে করেন ইসলামই মানব সম্ভাবনা বিকশিত করতে পারে, অন্য কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয়। জামায়াত, অন্যান্য ইসলাম ব্যবসায়ী দল ও অধুনা জঙ্গীরা এ কথাই বলছে_ আল্লাহর আইন চাই, এ আইন ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণীয় নয়। তাহলে অনিবার্য প্রশ্ন এসে যায়- কবে, কখন এই আইনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এই আইনের রূপরেখা কি কোরানে আছে? নেই। অন্যান্য উৎস ইজতিহাদ, কিয়াস বা ইজমার ওপর ভিত্তি করেও যদি আইন হয়ে থাকে তা কি সব মুসলমানের েেত্র সমভাবে প্রযোজ্য? কারণ, মুসলমানরা তো ৭৩টি ফিরকায় বিভক্ত। জোয়ারদার মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুর রাযিকের কিছু লেখা ও ব্যাখ্যা উদ্বৃত করেছেন। রাযিক লিখেছেন, ইসলামকে বলা হয় সর্বজনীন ধর্ম। 'যুক্তির খাতিরে ধরা যাক যে, বিশ্বের সব মানুষই এই ধর্মের অনুসারী, তাহলে কি সমগ্র বিশ্বে একই শাসনব্যবস্থা হবে? কার্যত সেটি অসম্ভব। সুতরাং কোন বিশেষ ধরনের শাসনব্যবস্থা ইসলামের অনিবার্য অনুষঙ্গ নয়। আর খিলাফত। সুনি্নরা এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেন, অন্যরা নয়। না, কোরানেও খিলাফতের উল্লেখ নেই। রাযিক উল্লেখ করেছিলেন, খলিফার শাসন নির্ভরশীল ছিল সামরিক শক্তির ওপর। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে 'ঐশী অনুমোদন' লাভ করতে পারে? বলাবাহুল্য গোঁড়া অধ্যাপকদের কারণে রাযিক বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আরও উল্লেখ্য, যে, চার খলিফা রাজত্ব করেছেন তারা বিভিন্নভাবে মতায় এসেছেন। তারা রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তনের কোন ব্যবস্থা করে যেতে পারেননি। ফলে তারা প্রত্যেকেই কোন না কোন সময় বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। অভিন্ন ইসলামী আইন অনুসারে হলে তো সেই আদি যুগে তাদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হতো না। আমাদের এখানে জামায়াত বা ইসলাম ব্যবসায়ী দলগুলো কেন এ কথা বলে তা সহজেই অনুমেয়। জামায়াত কি বলেনি নারী নেতৃত্ব হারাম? এমনকি তারা যে মজলিস-উস-শূরার কথা বলে তার উল্লেখও কোথাও নেই। প্রশ্ন আরও আছে, আল্লাহর আইনই যদি তাদের কাম্য তাহলে তারা কেন বাংলাদেশের সংবিধান মেনে সরকার গঠন করেছিল।
অর্থনীতি সম্পর্কেও বা সুনির্দিষ্ট কী বিধান আছে? সাদকা, যাকাত বা এ ধরনের কয়েকটি বিষয় ছাড়া অর্থনীতি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান ধর্মগ্রন্থে নেই। সুতরাং প্রশ্ন করা যায়, 'ইসলামী ব্যাংকিং' কী জিনিস? জোয়ারদার এ বিষয়ে সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন। তার মতে, ইসলামের আদি ও মধ্যযুগে তাই অনেকে হিয়াল বা আইনের ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিত। যেমন সুদ। এেেত্র বিকল্প গ্রহণ করত। ধরা যাক, তিনি লিখছেন, ক ৪০০ টাকা ধার নেবে খ থেকে। খ তা দিতে রাজি। একটি পণ্য, তার দাম যাই হোক না কেন, ক বলল, খ কে কিনে নিতে। খ তা কিনে নিল। ক তখন আবার ৫০০ টাকা দিয়ে তা কিনে বলল, তিন মাস পর টাকাটা সে দেবে। খ রাজি হলো অর্থাৎ সে ১০০ টাকা সুদ পেল। যে নামেই ইসলামী ব্যাংক ব্যবসা করুক না কেন মূল ব্যাপারটা হিয়াল। আজ তো প্রমাণিত হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক জঙ্গীদের টাকা নাড়াচাড়া করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এ ধরনের বিশটির মতো প্রমাণ তারা পেয়েছে। আমাদের জানামতে, এ ধরনের লেনদেনের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের ভুল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন প্রতিবাদ করে। তবে কর্তৃপ এটিও মনে রাখবেন, সরকার বদল হলে যদি তদন্ত রিপোর্ট ঠিকঠাক থাকে, তাহলে তাদের বক্তব্যের সত্যতা ফের যাচাই করা হতে পারে। সরকার ইসলামী ব্যাংককে মাত্র এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে। কারণটা অনুমেয়, কারণ জঙ্গীরাই তো সরকারে। আরও জানা গেছে, এসব ইসলামী দলের টাকার যোগানদাতারা অন্য উপায়ে টাকা রোজগার করে। যেমন, হেরোইন ব্যবসা। হে 'ইসলামী নেতৃবৃন্দ' হেরোইন ব্যবসা কি ইসলামে অনুমোদিত? (১৪-এর পৃষ্ঠায় দেখুন)

No comments

Powered by Blogger.