মানবতার কল্যাণে স্বেচ্ছায় রক্তদান by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

রক্তদানের ব্যাপারে ইসলামে কোনো বিধিনিষেধ নেই। রক্ত বিক্রয় বৈধ নয়। কিন্তু বিনামূল্যে রক্ত না পেলে রোগীর জন্য তা কেনা বৈধ; তবে রক্ত বিক্রেতা গুনাহগার হবেন। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করতে পারে, এতে তার শারীরিক কোনো সমস্যা হয় না।
রক্তদান করলে তা মানুষের উপকারে আসে। আর তাতে প্রচুর সওয়াবও পাওয়া যায়। অন্যদিকে রক্তদাতাও শারীরিক, মানসিক ও ইসলামী মূল্যবোধের দিক থেকে সুস্থ থাকেন।
আমাদের সমাজে রক্তদানকারীর খুবই অভাব। বরং রক্তের বড় একটি অংশ আসে ঝুঁকিপূর্ণ পেশাদার রক্তদাতাদের বিক্রি করা রক্ত থেকে। আমরা রক্ত দেই না বলেই খারাপ লোকেরা রক্ত বিক্রি করার সুযোগ পায়। আর ওই রক্তের মাধ্যমে মারাত্মক সব রোগজীবাণু সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই সৎ, সুস্থ, আদর্শবাদী, সচ্চরিত্র মানুষদের রক্তদানে এগিয়ে আসা উচিত। আপনি যদি রক্তদান করেন তাতে বিপন্ন মানুষের জীবন যেমন বাঁচবে, তেমনি নতুন বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে। রক্তদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে গড়ে উঠবে রক্তের বাঁধন। সেও অন্য সময় আপনার বিপদে পাশে এসে দাঁড়াবে। বর্তমানে অন্যের উপকার করার মানসিকতা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আজ নিজেরাই কষ্ট ভোগ করছি। একজন আরেকজনের দ্বারা কষ্ট পাচ্ছি। পরিবার, সমাজ, দেশ সবখানেই অশান্তি আর অশান্তি। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে, পরিবারে, সমাজে, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে পরস্পরে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান পরোপকারের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আল্লাহতায়ালা এবং হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) বিধান মতো নিজেকেও চলতে হবে, অন্যকেও চলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
একজন মুমূর্ষু মানুষকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করার ফজিলত সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান ও ইসলামী চেতনা প্রসারিত থাকলে পেশাদারদের রক্তের বিভীষিকা থেকে মুক্ত থাকতে পারত মানুষ। উলেল্গখ্য, হাদিসে বর্ণিত আছে, 'মৃত্যুপথযাত্রী একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর বিনিময়ে এক দেহ ব্যবসায়ী নারী জান্নাতের অধিকারী হয়েছে।' এর দ্বারা খুব সহজেই অনুমান করা যায়, সৃষ্টির প্রতি আল্লাহতায়ালার প্রেম ও দরদের পরিমাণ। এমতাবস্থায় আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে কত বড় একটি মহৎ কাজ_ তা আর বিশেল্গষণ করে বলার অবকাশ নেই। হাদিসের আলোকে বলা যায়, হতে পারে স্বেচ্ছায় রক্তদান আমার-আপনার জান্নাতে যাওয়ার উসিলা। আর এটা যদি ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসার করা যায়, তাহলে খুব সহজেই স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রবণতা প্রবলভাবে তৈরি হবে সবার মাঝে। যে প্রবণতাটা আজ সমাজের খুব বেশি দরকার। পৃথিবীতে অনেক মহৎ কাজ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মহৎ কাজ হলো স্বেচ্ছায় রক্তদান। কারণ, রক্ত কোনো ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন হয় না, কেবল একজন মানুষের প্রয়োজনে আরেকজন মানুষ তা দিতে পারে। রক্তদান পরোপকারের একটি মাধ্যমও বটে। আর মানুষের উপকার প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের কেউ তার অপর ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হলে সে যেন তা করে।'-মুসলিম শরিফ
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক অঙ্গীকার। কাজেই আমাদের কারও একজনের রক্তের বিনিময়ে যদি কোনো এক ভাই অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয় বা তার জীবন রক্ষা পায়, তাহলে আমাদের স্বেচ্ছায় রক্তদান করা উচিত এবং অন্যকেও রক্তদানে উৎসাহিত করা আমাদের কর্তব্য। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।'-সূরা মায়েদা : ৩২
স্বেচ্ছায় রক্তদানে অন্য মানুষের মূল্যবান জীবন রক্ষা পায় এবং নিজের জীবনও ঝুঁকিমুক্ত থাকে। নিয়মিত রক্ত দিলে নিজের জীবনও ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব হবে। সৎকাজ ও নেক নিয়তের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে যথাযথ প্রতিদানও মিলবে। যেহেতু আমাদের দেশের প্রচুর মানুষ রক্তের অভাবে অসুস্থ জীবন কাটাচ্ছে বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, তাই তাদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। যেহেতু ইসলাম বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াতে বলে, মুমূর্ষু মানুষের জীবন রক্ষার কথা বলে আর জনসেবামূলক এই কাজে যেহেতু কোনো ধর্মীয় বিধিনিষেধও নেই, সেহেতু জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সবাইকে একযোগে পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখবেন, একে অন্যের উপকার, সহানুভূতি ছাড়া মানবজীবন মূল্যহীন। পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা হুজরাতের ১০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।' কাজেই এক ভাই অন্য ভাইয়ের বিপদে-আপদে, বালা-মুসিবতে এগিয়ে আসবে এটাই ইমানের অপরিহার্য দাবি।
muftianaet@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.