মুক্তিযুদ্ধ-ইতিহাসের কিছু অনালোকিত প্রসঙ্গ by আবু সাঈদ খান

আজকের বাস্তবতায় নয়, সেদিনের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসে যার যতটুকু প্রাপ্য, তা স্বীকার করতে হবে। সর্বোপরি, জনগণই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রাণশক্তি_ মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ।
বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে, সে সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জো নেই
সংঘটিত ঘটনা বা ঘটনাপ্রবাহের বয়ানই ইতিহাস। ইতিহাসকে বশীকরণ করা যায় না, হীনস্বার্থে পরিবর্তন করা যায় না। পরিবর্তিত বা খণ্ডিত তথ্য ইতিহাসের বিকৃতি হিসেবেই বিবেচিত হয়। কিন্তু আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনায় তথ্য-বিকৃতির উদাহরণ দেদার। বিশেষ করে জাতীয় দিবসগুলোতে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ইতিহাস সম্পর্কিত প্রবন্ধ-নিবন্ধে এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমের আলোচনায় খেয়াল-খুশিমতো ঘটনার বর্ণন ও ব্যক্তির মূল্যায়ন ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়।
আমরা জানি, '৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রে '৭১-পূর্ব মুক্তিসংগ্রামের ঘটনাবলি উপেক্ষিত ছিল, অনুচ্চারিত ছিল বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক-মুক্তিযোদ্ধার নাম। বর্তমানের মহাজোট সরকারের আমলে বঙ্গবল্পুব্দর ভূমিকাকে আর খাটো করে দেখানোর সুযোগ নেই; বরং ঘটনা উপস্থাপনে অতিরঞ্জন ও অতিকথনের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। বলাবাহুল্য, এই অতিকথন ছাড়াই বঙ্গবন্ধু অবস্থান ইতিহাসে সমুন্নত। ফলে বঙ্গবল্পুব্দর ভাবমূর্তিকে অবিকৃত রাখতে এসব অতিকথন নিঃসন্দেহে বর্জনীয়।
বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। বঙ্গবল্পুব্দ ও মুক্তিযুদ্ধ অবিচ্ছেদ্য। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার উৎস। আমরা তার নামেই যুদ্ধ করেছি, মুক্তির আরাধনা করেছি। মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবল্পুব্দর অবদান সবার ওপরে, তা অন্য কারও সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না। তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমনি বঙ্গবল্পুব্দর ত্যাগে-বীরত্বে মহীয়ান, তেমনি তার সহযোদ্ধা নেতাকর্মীদের ভূমিকাও সমুজ্জ্বল।
প্রসঙ্গক্রমে সর্বাগ্রে তাজউদ্দীন আহমদের কথা বলতে হয়। ১৯৬৬ সালে স্বায়ত্তশাসনের মর্মবাণী সংবলিত ছয় দফা ঘোষণার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা এর বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুই ব্যক্তি_ তাজউদ্দীন আহমদ ও খন্দকার মোশতাক আহমদ। মোশতাক আহমদের সমর্থনের পেছনে ছিল ষড়যন্ত্রের নীলনকশা, অন্যদিকে তাজউদ্দীন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। বিভিন্ন সময়ে দলের সংগ্রামে-সংকটে তিনি হাল ধরেছিলেন, সাধারণ সম্পাদক হয়ে বঙ্গবল্পুব্দর নেতৃত্বের ছায়াতলে নীরবে কাজ করেছেন। বঙ্গবল্পুব্দর অবর্তমানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন মধ্যমণি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোশতাক গংয়ের বহুমুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিভিন্ন ধারা-উপধারাকে সমন্বিত করে তিনি বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতা-উত্তরকালে মোশতাক ও তার সহযোগীদের চক্রান্তে বঙ্গবল্পুব্দর সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সেটি ছিল আমাদের ইতিহাসের এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সেদিন এমন দূরত্ব তৈরি না হলে এবং তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবল্পুব্দর পাশে থাকলে ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ হয়তো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতো। সে যা-ই হোক, আমার মনে হয়, বঙ্গবল্পুব্দ স্বাধীনতার রূপকার আর তাজউদ্দীন কারিগর। বঙ্গবল্পুব্দর অবর্তমানে তিনি অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কীভাবে তিনি অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছিলেন, এর কেবল একটা উদাহরণ দিতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে খন্দকার মোশতাক একটি কূটচাল দিয়েছিলেন। তিনি তর্ক তুলেছিলেন_ আগে স্বাধীনতা, না বঙ্গবল্পুব্দর মুক্তি? এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, স্বাধীনতার আগে বঙ্গবল্পুব্দকে মুক্ত করতে হবে। তার এ বক্তব্যে আওয়ামী লীগের অনেক সাংসদ-নেতা বিভ্রান্ত হন। তাজউদ্দীন আহমদ এ প্রচারণার জবাবে বলেছিলেন, স্বাধীনতা ও বঙ্গবল্পুব্দর মুক্তি দুই-ই চাই, একটি আরেকটির বিকল্প হতে পারে না। এভাবে মোশতাকের ষড়যন্ত্রের তূণ থেকে নিক্ষিপ্ত প্রতিটি তীর তিনি বিকল করে দিয়েছিলেন। রক্তক্ষয়ের দোহাই পেড়ে মার্কিন মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ার গোপন চক্রান্তও তিনি মোকাবেলা করেছিলেন। এ নিবন্ধে সেসব বিশদ আলোচনার অবকাশ নেই। এক কথায়, একাত্তরে তিনি লড়াকু জাতির এক সফল কাণ্ডারি, ধীসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক, বিচক্ষণ কূটনীতিক হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলোচিত হয়েছিলেন।
স্বাধীনতার চার দশক পর সঙ্গতভাবে প্রশ্ন এসে যায়, আমরা এই কর্মবীরকে কি যোগ্য মর্যাদা দিতে পেরেছি? আজ তাজউদ্দীনকে চার নেতার ফ্রেমে বন্দি করে কর্তব্য সারা হচ্ছে। একসঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার কারণে চার নেতার অন্যতম হিসেবে তার নাম উচ্চারিত হবে, কিন্তু এর বাইরে জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল কাণ্ডারি হিসেবেও তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের বিষয়টি জরুরি।
এ প্রসঙ্গে আমি আরও দুটি ঐতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করতে চাই। একটি ১৯৬২ সালে নৌবাহিনীর অভ্যন্তরে বাঙালি সৈনিকদের মধ্যে গড়ে ওঠা গোপন সংগঠন, অপরটি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গঠিত নিউক্লিয়াস।
লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, নৌসেনা সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নূর মোহাম্মদ ও স্টুয়ার্ড মুজিব একত্র হয়ে নৌবাহিনীর মধ্যে যে গোপন সংগঠনের সূচনা করেছিলেন, তাতে একে একে যুক্ত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন (কর্নেল) এম নূরুজ্জামান, মেজর শামসুল আলম, ক্যাপ্টেন (কর্নেল) শওকত আলীসহ অনেক সেনা কর্মকর্তা।
আগরতলা ষড়যন্ত্র বলে খ্যাত মামলায় অভিযুক্তদের সাক্ষাৎকার, লেখালেখি থেকে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে স্বাধীনতাকামী সেনা নেতৃত্ব তাদের পরিকল্পনা নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নেতৃত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান। শেখ মুজিব তা সানন্দে গ্রহণ করেন। কিন্তু ঘটনাটি পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে ফাঁস হয়ে যায়। এর পরিণতিতে শেখ মুজিব, গোপন সংগঠনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ও বাঙালি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয়।
আপাতদৃষ্টিতে এই গোপন তৎপরতা ব্যর্থ হলেও তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিবরণী সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরই পূর্ব বাংলার জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় নন্দিত হন অভিযুক্তরা। ১১ দফার ব্যানারে সংগঠিত আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি একই স্রোতে মিশে গিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুসহ অভিযুক্তদের মুক্ত করেছিল, তেমনি স্বাধিকার আন্দোলনকে অভাবিতভাবে করেছিল বেগবান।
এ প্রসঙ্গে বলা আবশ্যক, ছয় দফা ছিল আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কর্মসূচি। ১৯৬৯ সালে ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা ছাত্রসমাজ তথা সমগ্র জাতীয় কর্মসূচিতে পরিণত হয় এবং ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। এ ইতিহাস সবার জানা। তবে ছয় দফাকে ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাকে এক দফার সংগ্রামে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে যে বিপ্লবী প্রক্রিয়া কাজ করেছে, তা অনেকেরই জানা নেই।
১৯৬৩ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পর আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদকে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়া, সেটি নিউক্লিয়াস বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বলে খ্যাত।
এ নেতৃত্বের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে জানা যায়, এক পর্যায়ে শেখ মুজিবকে নিউক্লিয়াস গঠনের বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি তাদের উৎসাহিত করেন। ১৯৬৩-৬৪ সাল থেকে ছাত্রলীগ নেতৃত্বের বড় অংশ নিউক্লিয়াসের প্রভাবাধীন ছিল। শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পরিকল্পনা ও সংঘটনের পেছনে এই নেতৃত্ব কাজ করেছে; তা নিয়ে সংশয়ের সুযোগ নেই। নিউক্লিয়াস তাদের কর্মকাণ্ড তিন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে তো বটেই, জেলা পর্যায়েও কর্মতৎপরতা বিস্তৃত করেছে। সেদিন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে দুটি ধারা দৃশ্যমান ছিল। একটি ছিল ছয় দফাপন্থি, অন্যটি ছিল নিউক্লিয়াস প্রভাবিত স্বাধীনতাপন্থি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান-উত্তর স্বাধীনতাপন্থিরা স্লোগান দিতে শুরু করে_ ছয় দফার আসল কথা, স্বাধীনতা; বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। এর বিপরীতে শোনা যেত_ বাঁশের লাঠি তৈরি করো, পাতি বিপ্লবী খতম করো। উভয় অংশই ছিল বঙ্গবল্পুব্দর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অতর্কিত জাতীয় সংসদ বন্ধ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে উভয় গ্রুপই হয়ে ওঠে স্বাধীনতাকামী।
নিউক্লিয়াসের বড় অবদান হচ্ছে, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে স্বাধীনতার সিংহদ্বারে পেঁৗছে দেওয়া। এটি ষাটের দশকের রাজনৈতিক প্রজন্মের অজানা নয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে কার্যকর করেছে নিউক্লিয়াসই।
২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ পল্টনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করে ওই ইশতেহারে বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করা হয়। যার প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চ পল্টনের জনসভায়; যেখানে বাংলাদেশের পতাকা হাতে লাখো জনতার মিছিল আছড়ে পড়ে। মুখরিত হয়_ 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'জান্তার মুখে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো' স্লোগান।
মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলা-মহকুমা-থানা পর্যায়ে সশস্ত্র প্রস্তুতি চলতে থাকে। শুরু হয় ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা মুজিব বাহিনীতে এই নিউক্লিয়াস সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগের সদস্যরাই ছিল মূল শক্তি। দুঃখজনক হচ্ছে, নিউক্লিয়াসের ভূমিকা অনালোচিত। অনেক ইতিহাসবিদই এটি উপেক্ষা করেছেন, কেন করেছেন তা বুঝতে পারি না। সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে হলে 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা'র অভিযুক্তদের অবদান, নিউক্লিয়াসের ভূমিকা আলোচনায় আনতে হবে। তাজউদ্দীন আহমদের অবদানসহ এসব বিষয় অনালোকিত থাকলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পূর্ণ হতে পারে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থাকলেও তা কেবল আওয়ামী লীগের একক যুদ্ধ ছিল না, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ ছোট-বড় অনেক দল ও গ্রুপের অংশগ্রহণ ছিল। মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের অনন্য ভূমিকা ছিল। মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, মনোরঞ্জন ধর ও অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিএলএফের শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, মনিরুল ইসলাম, শেখ শহীদুল ইসলাম, হাসানুল হক ইনু, শরীফ নূরুল আম্বিয়া প্রমুখ, ন্যাপ-কমিউনিস্ট-গেরিলা বাহিনীর মোহাম্মদ ফরহাদ ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কাজী জাফর, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, সিরাজ শিকদারসহ বাম নেতৃবৃন্দ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। জেনারেল এমএজি ওসমানী, এ কে খন্দকার, সে সময়ের মেজর শফিউল্লাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর মঞ্জুর, কর্নেল তাহের, মেজর জলিলসহ বিদ্রোহী বাঙালি সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন রণাঙ্গনের নেতৃত্বে। তাদের সবাইকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে। আজকের বাস্তবতায় নয়, সেদিনের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসে যার যতটুকু প্রাপ্য, তা স্বীকার করতে হবে।
সর্বোপরি, জনগণই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রাণশক্তি_ মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে, সে সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জো নেই।

আবু সাঈদ খান :সাংবাদিক
ask_bangla71@yahoo.com
www.abusayeedkhan.com

No comments

Powered by Blogger.