পদ্মা সেতু প্রকল্প-অনিশ্চয়তা কবে দূর হবে?

দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়ায় দুর্র্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মঙ্গলবার সাতজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গতকালই তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্র্নীতির ষড়যন্ত্রের পরিপূর্ণ, বস্তুনিষ্ঠ ও সুষ্ঠু অনুসন্ধান করে মামলা করা হয়েছে। এতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যাদের দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক জুন মাসে তাদের প্রস্তাবিত ১২০ কোটি ডলার ঋণ স্থগিত করে দেয় এবং নিবিড় তদন্তের অনুরোধ জানায়। এরপর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপানও তাদের ঋণ ছাড় বন্ধ রাখে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করেই কমিশন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করেছে। এখন অপেক্ষা বিশ্বব্যাংকের প্রতিক্রিয়ার এবং তিনি 'আশাবাদী' বলেও জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন মঙ্গলবার কমিশনের মামলার পর তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ওপর। তারা কমিশনের মামলার নথি পর্যালোচনা করবে এবং অনুসন্ধান স্বচ্ছ ও পরিপূর্ণ হয়েছে_ এ মর্মে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলেই কেবল অর্থায়নের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্পষ্টতই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় 'স্বচ্ছ ও পরিপূর্ণ' শব্দ দুটির ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বুধবার সমকালে 'বিশিষ্টজনের আশঙ্কা' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও শাসক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার ভাইকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাংক নিযুক্ত প্যানেলের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে প্রকল্প আবার জটিলতার মুখে পড়বে।' কমিশনের অনুসন্ধানে এ নাম তিনটিও এসেছিল। সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, বিশ্বব্যাংক যেসব তথ্য দিয়েছে তা অনুসন্ধান করে যাদের বিরুদ্ধে আমলযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কমিশনের সচিব জানিয়েছেন, যদি কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাকে আসামি করার সুযোগ রয়েছে। তাদের এ বক্তব্য যথার্থ কি-না সে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার এজাহারে তিনজনকে বাদ রাখার বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত_ জনমনে এমন ধারণা হতেই পারে। এ ধারণা অমূলক প্রমাণ হলে দেশেরই মঙ্গল। যদি দেখা যায়, সরকারের 'রাজনৈতিক বিবেচনার' কারণে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাহলে শুধু সেতু প্রকল্পই চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে না, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতাও দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দেশ-বিদেশে সবাই তখন নিশ্চিত হবে যে, কমিশন মূলত সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাংক 'কিছু তথ্য-প্রমাণ' দিলেই সেটা অকাট্য সত্য হবে, এমন কথা নেই। কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা যে সৃষ্টি হয়েছে তা জ্বলন্ত সত্য। এর পেছনে সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে করা ঋণের অর্থের একটি অংশ আত্মসাৎ করার চেষ্টা ছিল_ এ বিশ্বাস জনমনে রয়েছে। এটা দূর করার দায়িত্ব সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন উভয়েরই। তারা সে দায়িত্ব পালন করুক, এটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.