চরাচর-বিনষ্ট হচ্ছে সর্পগন্ধা by আলম শাইন

আয়ুর্বেদ গ্রন্থে একটি উক্তি লক্ষ করা যায়। উক্তিটি হচ্ছে- 'সর্পানং বিষস্য গন্ধ'। আমরা মনে করি বাক্যটির অর্থটি, 'সাপের বিষের গন্ধ'। আসলে অর্থটি সঠিক নয়। ওই বাক্যে গন্ধ অর্থ ধরা হয়েছে 'হিংসা'। সে মতে বলা হয়েছে, 'সাপকে হিংসা করা'। আর সাপকে হিংসা করা মানেই হচ্ছে ওটার বিষক্রিয়াকে জব্দ করা অথবা বিষকে হরণ করে নেওয়া।


সোজাসাপ্টা বলতে গেলে সাপ প্রজাতি সর্পগন্ধা নামক ভেষজ গাছটাকে প্রচণ্ড ভয় পায়, সে তথ্যটি বোঝাতে উক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে। সূত্রমতে জানা যায়, যে বাড়িতে সর্পগন্ধা গাছ রয়েছে সে বাড়ির ত্রিসীমানায় সাপ প্রবেশ করে না। আয়ুর্বেদ মতে এটি নাকি পরীক্ষিত। যত দূর জানা যায়, সর্পগন্ধা শুধু সাপের বিষকে ধ্বংসই করে না, এটির নির্যাস পানে বহুবিধ রোগ থেকে মুক্তি মেলে। ১৯৩০ সালে ভারতের প্রখ্যাত গবেষকরা সর্পগন্ধার মূলের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পেয়েছেন এটির নির্যাস উত্তেজনানাশক, নিদ্রাকারক ও উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রক এবং নিরাময় করে জ্বর, ব্রণ, কৃমি, উম্মাদ রোগ। তা ছাড়া সাপের বিষসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গের বিষক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে। হোমিওপ্যাথিক মতে সর্পগন্ধা থেকে প্রস্তুতকারক 'রাওলফিয়া' (Rauwolfia) নামক ওষুধটি উচ্চ রক্তচাপের মহৌষধ। (প্রতিবেদক নিজেও এর প্রমাণ পেয়েছেন) গাছটি আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জের আনাচে কানাচে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠে। বিশেষ করে রাস্তার দুই পাশে বেশি দেখা যায়। গাছটি বড়জোর দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার আকৃতি কিছুটা আতাফল গাছের পাতার মতো। ফুলের বর্ণ লাল। ধরে থোকায় থোকায়। বীজ গোখরা সাপের চোখের মতো দেখায়। সর্পগন্ধার মূলটা ধূসর পীত বর্ণের। কাঁচা মূল থেকে তেঁতুলের গন্ধ পাওয়া যায়। এটির রস তিক্ত, হালকা কটুগন্ধ মিশ্রিত। সর্পগন্ধার আরেকটি নাম হচ্ছে 'সর্পাদনী'। অঞ্চলভেদে আরো কিছু নামও রয়েছে। এ ভেষজ গাছটিকে যে যে নামেই ডাকুক না কেন তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়, আপত্তিটা হচ্ছে গাছটি অবাধে নিধন হওয়াতে। বেশির ভাগ মানুষ গাছটি না চিনেই নিধন করছে। এর গুণাগুণ সম্পর্কে তাদের মোটেই ধারণা নেই। ভেষজগুণ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়তো মানুষ এটিকে নিধন করতে কিছুটা হলেও ইতস্তবোধ করত। তাই আমাদের কামনা সর্পগন্ধাকে টিকিয়ে রাখতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা। এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ আগাছা ভেবে যখন তখন গাছটিকে উপড়ে ফেলবে না। ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে প্রচুর লাভবান হব। কারণ এমনিতেই তো প্রতিবছর পাশের দেশ থেকে আমাদের প্রচুর ভেষজ গাছ আমদানি করতে হয়। তাই আমাদের কামনা সর্পগন্ধাসহ অন্যান্য ভেষজ গাছকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করা।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.