প্রয়াত লেখকের বইয়ের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ by আজিজুল পারভেজ

হুমায়ূন আহমেদের বই বিক্রির ধুম পড়েছে। কিংবদন্তি এ কথাশিল্পীর মৃত্যুর পর তাঁর বই নিয়ে নতুন করে সারা দেশের পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। যারা আগে হুমায়ূন আহমেদের বই রাখত না ওই সব সিরিয়াস ধারার বইয়ের দোকানেও এখন তাঁর বই বিক্রি হচ্ছে।


মার্কেটে 'আউট অব প্রিন্ট' বইগুলোও নতুন করে বাজারে আনছেন প্রকাশকরা। মফস্বল শহরের বই বিক্রেতা জাকিরের ভাষ্য, 'আমাদের এখানে আউট বই (বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই) বলতে হুমায়ূন আহমেদের বই-ই চলে। তাঁর মৃত্যুর পর বিক্রি আরো বেড়েছে।'
হুমায়ূন আহমেদের সর্বাধিক বইয়ের প্রকাশক অন্যপ্রকাশের ম্যানেজার মোখলেসুর রহমানের ভাষ্য, 'আগে স্যারের নতুন বই-ই চলত, তাঁর মৃত্যুর পর এখন পুরনো বইসহ সব বই-ই যাচ্ছে।' তিনি জানান, সারা দেশ থেকে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের অর্ডার আসছে। বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, তাঁদের বাংলাবাজারের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে আগে যেখানে ২০-২৫ হাজার টাকার বই বিক্রি হতো, সেখানে লেখকের মৃত্যুর পর প্রথম সপ্তাহে কোনো কোনো দিন ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭২ সালে 'নন্দিত নরকে' উপন্যাসের মাধ্যমে। এর ছয় মাস পর প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় বই 'শঙ্খনীল কারাগার'। এরপর এ যাবৎ প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ২৫০টি বই। এ বইগুলোর মধ্য থেকে সংকলন আকারে বেরিয়েছে আরো শতাধিক বই। এসবের মধ্যে আছে উপন্যাস, ছোটগল্প, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, আত্মজৈবনিক, ঔষধি বৃক্ষসহ নানা বৈচিত্র্যের বই। তবে প্রথম প্রকাশিত দুটি উপন্যাসই হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম হিসেবে বোদ্ধামহলে সমাদৃত।
প্রকাশক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, সেই 'নন্দিত নরকে' ও 'শঙ্খনীল কারাগার'ই এখন পর্যন্ত পাঠক আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। এরপর রয়েছে 'জোছনা ও জননীর গল্প', 'আগুনের পরশমণি', 'হিমু সমগ্র', 'বাদশা নামদার' এবং 'হিমু ও মিসির আলী সিরিজ'সহ অন্যান্য বই।
সৃজনশীল বইপাড়া আজিজ মার্কেটের বইয়ের দোকান পড়ুয়া থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের দোকানে আগে হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই ছিল না। কিন্তু লেখকের মৃত্যুর পর তাঁর বইয়ের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হওয়ায় তাঁদের দোকানেও এখন হুমায়ূন আহমেদের বই ওঠানো হয়েছে। নন্দিত নরকে বইটিই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মফস্বল শহর সিলেটের বিয়ানীবাজারের ন্যাশনাল লাইব্রেরির জাকির হোসেন জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের বই সব সময়ই চলে। বিশেষ করে বইমেলায় প্রকাশিত বই বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর বই বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়েছে। ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুললে বিক্রি আরো বাড়বে। এ কারণে নতুন করে বই পাঠানোর জন্য ঢাকায় অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর নন্দিত নরকে উপন্যাসটি নতুন করে পড়ার জন্য বেশ কয়েকটি দোকানে খোঁজ করেও বই পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর যে কপি পাওয়া গেছে তা কমিশন ছাড়াই কিনতে হয়েছে।
নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাবাজারের বনেদি প্রকাশনা সংস্থা খান ব্রাদার্স থেকে। ২০০৫ সালে এ বই দুটির প্রকাশনার দায়িত্ব পায় দিব্যপ্রকাশ। এরপর দায়িত্ব পেয়েছে অন্যপ্রকাশ। এখন বাজারে দিব্যপ্রকাশ ও অন্যপ্রকাশ- দুটি প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশিত বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। তবে দামে তারতম্য রয়েছে। নন্দিত নরকে দিব্যপ্রকাশ ২০০৮ সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ টাকায় আর অন্যপ্রকাশ সংস্করণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের অন্যতম প্রকাশক শিখা প্রকাশনীর নজরুল ইসলাম বাহার জানান, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর বই বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তাঁর বইয়ের প্রকাশকরা আউট অব প্রিন্ট বইগুলো নতুন করে ছাপিয়ে কিংবা বাঁধাই করে বাজারে নিয়ে আসছেন। তিনি আরো জানান, হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই কেনার জন্য বইমেলায় যেমন লাইন পড়ত, এখন সারা দেশে তেমন আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.