রাজধানীতে দুর্ঘটনায় আটজনসহ ১২ অস্বাভাবিক মৃত্যু

রাজধানীতে বারোটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পৃথকস্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে আটজন। বাড্ডা, রামপুরা ও খিলক্ষেতে কাজ করার সময় ছাদ থেকে পড়ে তিন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। রামপুরায় আত্মহত্যা করেছে এক গৃহপরিচারিকা। শুক্রবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার ভোরে পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের সামনে ডিসিসির সুইপার শাহজাহান (৫০) ঝাড়ৃ দিচ্ছিল। এ সময় বেপরোয়া গতির লেগুনার ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় সে। তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে শাহ আলীর বাগ ১৫৭/ক নম্বর সিটি কলোনিতে বসবাস করত। মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোঃ হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। ঢামেক হাসপাতালে দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে শুক্রবার সকালে তেজগাঁও রেল স্টেশনের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে নামছিলেন ভ্যানচালক শাহ আলম (৩০)। হঠাৎ পা পিছলে চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। দুপুর সোয়া ১টায় ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের দুলাভাই চুন্নু মিয়া জানান, শাহ আলম গাজীপুরের কোনাবাড়িতে পরিবারসহ বাস করত। প্রতিদিনের ন্যায় শুক্রবার সকালেও গাজীপুরের বাড়ি থেকে ট্রেনযোগে ঢাকার কাওরানবাজার যাচ্ছিল সে। তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে ট্রেনটি তেজগাঁও রেল স্টেশনের কাছে পৌঁছলে শাহ আলম চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময় ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে। পরে তার সহকর্মী চুন্নু মিয়া ভ্যান গাড়িতে করে শাহ আলমকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের পিতার নাম আমীর উদ্দিন। ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুরে তার বাড়ি। স্ত্রীর নাম শিল্পী বেগম। বৃহস্পতিবার রাতে কাওলা এলসি রেলগেট ৩০৫-৬ নম্বর রেললাইন থেকে অজ্ঞাত পুরুষ (৪০) ও ৩৭০ রেললাইন মীমগাঁও নামকস্থানে হরিদাস ম-লের বাড়ির সামনের রেললাইন থেকে অজ্ঞাত পুরুষ (৩০) ও ৩৭১ নম্বর রেললাইন থেকে অজ্ঞাত পুরুষ (৩০) ও ৩৮৯/৮ নম্বর রেললাইন থেকে অজ্ঞাত (৩১) আরেক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ছাড়া একই দিন কোর্টবাড়ি এলাকা থেকে অজ্ঞাত (২০) আরেক মহিলার লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায় জিআরপি থানা পুলিশ। ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এই পাঁচজনই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। অপরদিকে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জে নির্মাণাধীন ১৩তলা ভবনের ১০ম তলা থেকে পড়ে শাহ লাল (২৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছে। পরে ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের সহকর্মী সমীর উদ্দিন জানান, বিকেল ৩টায় ভবনের ১০ম তলায় মাঁচা বেঁধে প্লাস্টারের কাজ করছিল শাহলাল। এ সময় হঠাৎ মাঁচার রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে যান শাহ লাল। প্রথমে তাঁকে নিকুঞ্জের একটি প্রাইভেটক্লিনিক ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের পিতার নাম দুলাল উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে পূর্বরামপুরা এলাকার জামতলা ১৩৮/৯/১ নম্বর নির্মাণাধীন ভবনের চর্তুথ তলায় কাজ করার সময় আকরাম (৪২) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে আকরামকে ঢামেক হাসপাতালে আনলে কর্র্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত মঙ্গলবার বাড্ডা এলাকায় কাজ করার সময় মোহাম্মদ সেলিম নামের এক নির্মাণ শ্রমিক গুরুতর আহত হন। দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ রামপুরা থানাধীন মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার বি/২৯ নম্বর ভবনের সপ্তম তলার বারান্দার গ্রিল থেকে মরিয়ম আক্তার নামে এক কিশোরী গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায়। গৃহকর্ত্রী পুলিশকে জানায়, মরিয়ম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছিল। এ জন্য এবার মরিয়মকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য তার মামাকে মোবাইল করে ঢাকা আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু মরিয়ম গ্রামের বাড়িতে যেতে চায়নি। এরই জের ধরে মরিয়ম গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতের পিতার নাম মৃত মোশাররফ হোসেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া থানার উত্তর চাঁদ পিরিসিয়া গ্রামে।

No comments

Powered by Blogger.