ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সম্পর্ক নেই ॥ প্রধানমন্ত্রী- আল কোরান : ডিজিটাল ওয়েবসাইট উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র কোরানকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করে এর অন্তর্নিহিত জ্ঞান আহরণ এবং মানবতার কল্যাণে কোরানের বাণীকে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পবিত্র কোরান একটি অধিকতর বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা সংবলিত গ্রন্থ এবং পাশাপাশি এ গ্রন্থে আমাদের ব্যক্তিগত,
পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের নির্দেশনা রয়েছে। মানুষের অধিকার, সুবিচার, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির জন্য এতে উপদেশ বাণী রয়েছে। শুক্রবার ঢাকায় ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে পবিত্র কোরান শরীফ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েব পোর্টাল ও কোরানের ডিজিটাল অনুলিপির উদ্বোধন করে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই সকলে ইসলাম সম্পর্কে জানুক। খবর বাসস/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের কোন ধর্ম নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ করে ইসলামের বদনাম করা হয়েছে। ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদেও কোন সম্পর্ক নেই। যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত সেটাই তাদের ধর্ম। অন্যরা যাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আকৃষ্ট হন সে প্রচেষ্টা আমাদের সকলের থাকা উচিত। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগের মাধ্যমে ইসলামের ‘শান্তির বাণী’ সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পবিত্র রমজান মাসে পবিত্র কোরানের ডিজিটাল ভার্সন উদ্বোধনের সুযোগ লাভের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে একটি ল্যাপটপে ওয়েব পোর্টাল ‘আল কোরান : ডিজিটাল’ এবং আইপ্যাডে এ্যাপ্লিকেশনের উদ্বোধন করেন। িি.িয়ঁৎধহ.মড়া.নফ ঠিকানায় এই পোর্টালে গিয়ে আরবীর পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজীতে কোরানের সব আয়াত পড়া ও শোনা যাবে। এছাড়া ই-বুক আকারেও ডাউনলোড করা যাবে। ‘আল কোরআন : ডিজিটাল’-এর পাওয়া যাবে ডিভিডিতেও।
ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল বক্তব্য রাখেন। বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মোনাজাত পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে কোরানের ওপর একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পবিত্র কোরানের ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। মূল আরবী ভাষার পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় পবিত্র কোরান পাঠের জন্য এটি সহায়ক এবং এর অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন সহজ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বোপরি এ ওয়েব সাইটটি হচ্ছে পবিত্র গ্রন্থের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরান নাজিলের সময়কে মহানবী (সা) অন্ধকার যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তখন অনেক ধর্মীয় সম্প্রদায় জন্মের পরেই কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দিত। পবিত্র কোরান এসব নিষিদ্ধ করে সমাজে নারীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
রাসূলের (সা) দু’টি বাণীর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাসূল তাঁর বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানদের প্রতি কোরান-সুন্নার পাঠ ও সে অনুযায়ী চলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, মুসলমানরা যতদিন এ দু’টি বিষয় অনুসরণ করবে ততদিন তারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কোরান পাঠ এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং বর্তমান সরকারের সময়ে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ইমাম ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। রোজার মাসে এক কোটি লোকের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে বলেও শেখ হাসিনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন এবং ইসলামী দেশগুলোর কাছে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরেন। ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার কয়েক লাখ শিশুর কোরান শিক্ষার জন্য মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচী চালু করেছে, যা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এই কর্মসূচীর জন্য ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, কয়েক হাজার আলেমের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং শুদ্ধভাবে কোরান শিক্ষার জন্য কয়েক লাখ শিশু ও বয়স্ক লোককে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার মানব সম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় সকল অনিয়ম দূর করে একটি হজবান্ধব নীতি প্রণয়ন করে এই সেক্টরে শৃঙ্খলা পুনর্প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.