শোকের মাস

বাঙালীর জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত আগস্ট মাসের আজ এগারোতম দিন। সেই ভয়াল ও নিষ্ঠুরতম রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট যতই ঘনিয়ে আসছে অসংখ্য শোকের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে পুরোপুরি কলঙ্কমুক্ত করার দাবি ততই শাণিত হচ্ছে।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর অমোঘ গর্জনে, নেতৃত্বে, দর্শনে, অঙ্গুলি হেলনে কোটি কোটি বাঙালী একদিন নেমেছিল পথে, আন্দোলনে, সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে। প্রশিক্ষিত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা আছে তাই নিয়ে সন্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিল। ত্রিশ লাখ মানুষ হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল মহার্ঘ্য স্বাধীনতা।
বাঙালীর অধিকার আদায়ের সব সংগ্রামেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম সারিতে, অনন্য ভূমিকায়। তাঁর ডাকেই সূচিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ‘৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর বৈপ্লবিক নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালীর কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। শত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘৃণিত খুনীদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এখনও বেশ ক’জন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর খুনী বিদেশে পালিয়ে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। তাই এবারের জাতীয় শোক দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সোচ্চার দাবি দ্রুত খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।
শোকের মাস আগস্টের একাদশতম দিনেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। শুক্রবার বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর এবং যারা এই ঘাতকদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লালন পালন করেছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করার দাবীতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা বিভাগীয় শাখা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের উদ্যোগে মানববন্ধনে অংশ নেয়া বক্তারা এ দাবি জানান। এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, হারুন অর রশীদ, শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক জয়ন্ত আচার্য্য, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দিন পাঠান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক এবং অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। ৭১’র পরাজিত শক্তি ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনী চক্র মনে করেছিল বাংলাদেশের মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলা যাবে এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য বানানো যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ যতদিন থাকবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.