বন্ধের উপক্রম পোলট্রি খামার

খাদ্য, ওষুধ, বাচ্চা ও খামারে ব্যবহৃত উপকরণসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের অধিকাংশ পোলট্রি খামার বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এর ফলে বেকার হয়ে পড়ছে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শত শত খামার মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারী।


খামারিদের অভিযোগ, সরকারের যথাযথ নজরদারির অভাবে ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ শিল্প ধ্বংস হতে বসেছে।
খামারিদের অনেকেই জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত ঠাকুরগাঁও জেলায় শত শত তরুণ-তরুণী বেকারত্ব দূর করতে পোলট্রি খামার গড়ে তোলেন। এ উদ্যোগের ফলে জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ৩ শতাধিক ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের পোলট্রি খামার গড়ে ওঠে। এর মধ্যে বয়লার মুরগির খামারের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু গত কয়েক বছরে রোগ-বালাই, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্কটে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক খামার।
বর্তমানে যেসব খামার চালু রয়েছে সেগুলোও কোন রকমে টিকে আছে। সেগুলোতেও লোকসান লেগেই রয়েছে। যার ফলে আরও শতাধিক খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ইতোমধ্যে কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। আবার ঋণগ্রস্ত কেউ কেউ জায়গা-জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করে অন্যত্র কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রায়পুর ইউনিয়নের সমন্বিত পোলট্রি খামার ব্যবসায়ী খালেকুজ্জামান সুমন জানান, ‘বিপুল সম্ভাবনাময় এ পোলট্রি শিল্প বর্তমানে লোকসানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কারণ হচ্ছে রোগবালাই, বাচ্চা, খাদ্য ও উপকরণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চার বছর আগেও একটি লেয়ারের বাচ্চার দাম ছিল ১৫-১৬ টাকা। বর্তমানে সেই বাচ্চার দাম ৮০-৮৫ টাকা। একইভাবে ১৮-২০ টাকার বয়লার বাচ্চা ৭০-৭৫ টাকা। এছাড়া সোনালি জাতের বাচ্চা ১৫ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৫ টাকা হয়েছে।’
সদর উপজেলার মনির হোসেন ও স্বপন জানান, ‘১৫ টাকা কেজি দামের বেডিফিট এখন ৩৮-৪০ টাকা, পোলট্রি খাদ্য তৈরির ভুট্টা ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকা, সয়াবিন প্রতি কেজি ২৬ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা ও মিটবোন মিল ৩২ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ এসব উপকরণের দাম বাড়ার কারণে খামার ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খামারি ব্যবসায়ী লিমন ও মোশাররফ হোসেন জানান, ‘মুরগির খাবারের দাম গত বছর প্রতিবস্তা প্রোটিন মাল্টি সি’র দাম ছিল ১৩-১৪শ টাকা। অথচ চলতি বছর এর দাম হয়েছে ২৪শ টাকা।
মিথুইনাইনের দাম ছিল প্রতিবস্তা ২৫শ টাকা। এ বছর তা হয়েছে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বস্তা ৩ হাজার টাকার লাইসিন বছর না ঘুরতেই বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকা। ঝিনুক প্রতি বস্তা ৩শ টাকার পরিবর্তে ৪শ টাকা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি পুঁজির পোলট্রি খামারি জেলার বালিডাঙ্গী উপজেলার স্কুলের হাট এলাকার আব্দুর রহমান, সাদেকুল ইসলাম ও মমিনুর রহমান জানান, ‘এ ব্যবসায় সরকারী কোনো নীতিমালা না থাকায় ভারতীয় ডিম, বাচ্চা ও ওষুধ বাংলাদেশের বাজার দখল করে রেখেছে। তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসানের ভারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোলট্রি খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
এ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারী দৃষ্টি প্রয়োজন বলে তারা দাবি করেন। পোলট্রি খামার মালিক মহেবুল¬াহ আবু নূর জানান, ‘জেলায় বেকার যুবকরা ঋণ নিয়ে খামার গড়ে তুলেছে লাভের আশায়। কিন্তু লোকসানের কারণে প্রায় ৬০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৪০ ভাগ খামার বন্ধের পথে। এছাড়া আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মুরগির রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেয়ার মতো ভেটেরিনারি সার্জন নেই। এ কারণে প্রতিদিন অনেক মুরগির বাচ্চা মারা যাচ্ছে।’
অন্য কারণগুলোর মধ্যে পোলট্রি খামারে ব্যবহৃত সব উপকরণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির ফলে খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোছাদ্দেকুর রহমান জানান, পোলট্রি শিল্পে খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির সত্যতা স্বীকার করে বলেন- ‘নানা কারণে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছে। তাই বর্তমানে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া আমার অফিসে লোকবলের অভাবে অনেক খামারিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
-এস,এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও

No comments

Powered by Blogger.