মাগফিরাতের মাস রমজান by মাওলানা এম এ করিম ইবনে মছব্বির

মহানবী (সা.) বলেন, রমজানের মধ্যভাগে মাগফিরাতের সময় শুরু হয়। কারণ রোজার একাংশ অতিবাহিত হওয়ার দরুন এর প্রতিদান ক্ষমার দ্বারা শুরু হয় এবং শেষাংশে দোজখ থেকে মুক্তিলাভ। কাজেই রোজা কেবল সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা নয়, বরং এ রোজা আমাদের হাতের রোজা, আমাদের পায়ের রোজা,
চোখের রোজা, রক্তের রোজা, জিহ্বার রোজা- এ রোজা আমাদের কান ও অন্তরের রোজা। এক কথায় এ রোজা আমাদের গোটা সত্তারই। এভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনার অগি্নপরীক্ষার ভেতর দিয়ে অস্তিত্বকে বাস্তব ও সত্য করে তুলে মানুষের জীবনকে পবিত্র করে মাহে রমজান। রহমতের মাস রমজান। তাই রমজান মাস আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতকে সুসজ্জিত করা হয়। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে- রমজানের জন্য বছরের প্রথম থেকে জান্নাতকে সুন্দরভাবে সাজানো হয়। প্রথা আছে, যার আগমনের যত বেশি গুরুত্ব তত বেশি গুরুত্বসহকারে অনেক আগে থেকে তার সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, 'এটি (আল কোরআন) জীবন যাপনের ব্যবস্থা, সেই মুত্তাকিদের জন্য যাঁরা গায়েব (অদৃশ্য), আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলি, ফেরেশতা, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে, আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, যে কিতাব তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে অর্থাৎ আল কোরআন এবং তোমাদের আগে যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, সেই সবই বিশ্বাস করে এবং পরকালের প্রতি যাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে' (সুরায়ে বাকারা)।
তোমরা পূর্ব কি পশ্চিম দিকে মুখ করলে তা কোনো প্রকৃত পুণ্যের ব্যাপার নয়। বরং প্রকৃত পুণ্যের কাজ এই যে মানুষ আল্লাহকে পরকাল, ফেরেশতা এবং আল্লাহ প্রদত্ত অবতীর্ণ কিতাব এবং তাঁর নবীদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে মান্য করবে।
আর আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রিয় ধন-সম্পদকে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও কৃতদাসদের মুক্তির জন্য ব্যয় করবে এবং জাকাত দেবে। প্রকৃত পুণ্যবান তারাই, যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করে। দারিদ্র্য, সংকীর্ণতা ও বিপদের সময় এবং হক ও বাতিলের সংগ্রামে পরম ধৈর্যধারণ করে। বস্তুত তারাই হকপন্থী, তারাই মুত্তাকি (সুরা বাকারা)।
আল্লাহপাক আরো ঘোষণা করেন পরহেজগাররা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, হকপন্থী, বিনীত, অনুগত, দাতা এবং তারা রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করে (সুরা আলে ইমরান)।
সিয়াম সাধনার জন্য প্রথম প্রয়োজন ইমানি চেতনা। ইমানের সত্তরটি শাখা-প্রশাখা আছে, আর প্রধান শাখা হলো আল্লাহর একক গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস ও রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস। বাকি হলো শাখা-প্রশাখা। ইমানকে একটি সুস্বাদু ফলবান গাছের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে; যা ১২ মাস ফল দান করে। রোজাদার মুসলমান ভাইবোনেরা, রোজাকে শুধু উপবাস ব্রত হিসেবে পালন না করে ইবাদতের সাধনা হিসেবে পালন করা কর্তব্য; যাতে তাকওয়ার গুণে ধন্য হয়ে আল্লাহর করুণায় সিক্ত হয়ে মাগফিরাত লাভ করা যায়। সদকা বা দান-খয়রাত পাপ মোচনের একটা উপায়। দান-খয়রাতের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, যাতে পাপ মোচন হয়। আল্লাহর খুশির জন্য যা দান করা হয়, তা খরচ হয় না, তা আল্লাহর কাছে জমা থাকে। তা বহুগুণ বৃদ্ধি হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণের পথ সুগম করে দেয়। হাদিস শরিফে এসেছে- মহানবী (সা.) বলেন, রমজান মাসকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে; প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাত তথা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির। এই হা=স দ্বারা উপলব্ধি করা গেল যে রমজানের মধ্যবর্তী ১০ দিন আল্লাহর মাগফিরাতের বদৌলতে ভরপুর হওয়ার দিনত
লেখক : ইসলামী গবেষক
E-mail : makarim-sylhet@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.