স্বেচ্ছায় পাঠদান

পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষের জন্য মহৎ কিছু করতে চান। এমনই একজন আলোকিত মানুষ মোবারক হোসেন হৃদয়। যিনি ২০০৭ সাল থেকে ছাত্র জীবনে নিজ উদ্যোগে নিজ গ্রামে চেয়ার টেবিল ও স্কুলঘর ছাড়াই এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাছতলায় চট বিছিয়ে পাঠশালা তৈরি করে শতাধিক শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান করছেন।


কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার দাড়িয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিম দিকে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই চোখে পড়ে সবুজের সমারোহ। চারদিকে সবুজ গাছপালা, লতাপাতা ও কলাবাগানে ঘেরা একটি গ্রামÑ নাম তার কান্দিগ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ লোকই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। লেখাপড়া তেমন জানে না বললেই চলে। সেই অজপাড়া গ্রামে মোবারক হোসেন হৃদয় নিজ উদ্যোগে ২০০৭ সালে বাড়ির পাশে ফুলকুড়ি পাঠশালা নামে গাছতলায় ১৫ থেকে ২০ জন শিশু নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান শুরু করেন। আস্তে আস্তে পাঠশালার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে কান্দিগ্রাম, দাড়িয়াকান্দি, সেমাইকান্দি, মাইজপাড়া গ্রামের দরিদ্র, অসহায় পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য পাঠশালায় নিয়ে আসেন। সন্তানদের ওই পাঠশালায় লেখাপড়া করার জন্য নিশ্চিন্তে প্রতিদিন সকালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে শতাধিক দাঁড়িয়েছে। শিশুরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটানা ৩ ঘণ্টা লেখাপড়া শিখে নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। শুধু পাঠদানেই শেষ নয়, হৃদয় নিজ খরচে সপ্তাহে ১ দিন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে চকোলেট বিতরণ করেন। এ থেকে এলাকায় চকোলেট স্যার হিসেবে তার পরিচয় ঘটে। আকাশ মেঘলা, মেঘের ঘনঘটা এই বুঝি অঝোরে নামবে বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই যতসব সমস্যা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। এ দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করে। তারপর এদিক ওদিক ভেবে হৃদয় প্রতিবেশী কারও মুরগির খামারে কিংবা কারও ঘরের বারান্দায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে পাঠদানে বসে পড়েন। ঝড় বৃষ্টি হলেও থেমে থাকে না তার পাঠদান। মোবারক হোসেন হৃদয়ের স্বপ্ন গাছতলা থেকে যেন তিনি রেহাই পান। সেজন্য সমাজের বিত্তশালী কিংবা সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য যেন একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয় এ আকুতি তার। হৃদয়ের স্বপ্ন একদিন তার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখে সমাজের বা রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আল আমিন মিয়া ও এলাকাবাসী জানান, স্কুল ঘর না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ২০০৭ সাল থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত মোবারক হোসেন হৃদয় কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছা শ্রমে পাঠদান করছেন।
কুলিয়াচরর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি একটি মহৎ কাজ। এ কাজে সমাজের বিত্তশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারীভাবে কোন বরাদ্দ আসলে হৃদয়কে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য স্কুল ঘর নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
স্কুল ঘরটি নির্মাণ করা হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং রোদ-বৃষ্টি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাবে। তাই একটি ঘর নির্মাণ করে সহযোগিতার হাত বাড়াবে বলে এমনটি প্রত্যাশা করছে মোবারক হোসেন হৃদয়।
-কাজী ইসফাক আহমেদ বাবু, ভৈরব

No comments

Powered by Blogger.