যুবলীগের কাউন্সিল হলো গোলাম-এ-আযম-নিজামীরা কাঠগড়ায় by মুহম্মদ শফিকুর রহমান

কদিন আগে বেশ রাত জেগেছিলাম। বিষয় টিভি-চ্যানেলের মধ্যরাতের গলাবাজি। ও-সবও আমার আকর্ষণ নয় কারণ ওগুলো বিষয়ভিত্তিক প্যাঁচাল ছাড়া আর কিছুই নয়। দু’একটা ব্যতিক্রম তো আছেই। বাকিগুলো যেন কোন ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাবুর দহলিজের দরবার বা গ্রাম্য সালিশের আসর।


একবার এক চ্যানেলে এক মহিলাকে দেখলাম, গায়ের রংটা বিদেশী তবে কথা বলার সময় মনে হবে কালো কুচকুচে অচেনা আফ্রিকার কোন এলাকার বাসিন্দা। অবশ্য আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য তা নয়।
সে রাতে আমার ঘুম হারাম করেছিল আমার সাড়ে ৪ দশকের বন্ধু এককালে রাস্তার বাম পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একদিন মিলিটারির লেফট-রাইট শুনে ডান পাশে এসে মিশে গেলেন। বামে যদি একবার স্খলন হয় তখন কি ডান কি রাজাকার কি যুদ্ধাপরাধী কোনটাতেই অরুচি থাকে না। যেমন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর এক লেখায় জানতে পারলাম এক ভদ্রলোক যে অবলীলায় মিথা বলে যাচ্ছেন দাঁড়ি কমা ছাড়া ঐ ভদ্রলোককে আমরা জানি এককালে বিএনপির প্রতিমন্ত্রী এবং এখন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। গাফ্ফার চৌধুরী জানালেন তিনি ‘চখামিয়ার’ বশংধর। বাংলা অভিধানে ‘চখা’ হাঁস জাতীয় পাখির নাম এবং সব সময় ‘প্যাক’ ‘প্যাক’ শব্দ করে চলাচল করে। উত্তরাধিকারসূত্রে তাঁর পুত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বিএনপি নেতা। তবে ধন্যবাদ জানাই এবং হাজারও সালাম জানাই বাংলার মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর মশিউর রহমান জাদু মিয়াকে যে তাঁরা এই চখা-চখিদের ফল-ইন করিয়ে মিলিটারি কনটিনজেন্টে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যার যেখানে বসবাস।
আরো দু’চারজন গলাজীবী মধ্যরাতে বিভিন্ন চ্যানেলে বসে (নাম না বলাই ভালো-পদাধিকার বলে বুদ্ধিজীবী তো) এবং এই ভদ্রলোক এমন ভাষায় সরকারকে আক্রমণ করেন, এদের শব্দচয়ন, নাম ধরে ধরে শোভন-অশোভন ভাষায় সমালোচনা করেন, মনে হয় দর্শক শ্রোতৃম-লী কেবল শোনার জন্যেই শোনে, বিশ্বাস করে না, যদি বিশ্বাসই করত তবে রাজপথে নেমে বিপ্লব ঘটাত। তাড়া করত। কিন্তু মানুষ এদের চিনে ফেলেছে যে, এঁরা অই মিলিটারি ঘরানার লোক, প্রকাশ্যে বিএনপির কথা বলে। আরেকটি টিভি-চ্যানেল আছে যাতে ‘জনতার কথা’ নামে একটি সাক্ষাতকার অনুষ্ঠান ধারণ ও প্রচার করা হয়। যাদের ধরে ধরে এনে সরকারবিরোধী প্রচার করা হয়। যে ভদ্রলোক এটি পরিচালনা করেন তার নামের প্রথমে ড. লেখা আছে, এটি কিসের ড. কোন হাসপাতালের ড. জানিনে। তবে তিনি যে কাজটি করেন তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কলেজের একটা ইন্টারমিডিয়েট, নিদেনপক্ষে একটা গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীই যথেষ্ট। ডা-া হাতে নিলেই একেকজন ড. হয়ে যায়। এভাবে ডা-ার মতামত নিয়ে বাঙালীর হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ-সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধুও হতে পারতেন না, জাতির জনকও না। বঙ্গবন্ধু যদি রাস্তায় ডা-ার মতামত নিতেন, ড্রয়িং রুমে বসে বিজ্ঞজন বিশ্লেষণ করতেন, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আর এত বড় আন্দোলন স্বাধীনতা ঘোষণাও দেয়া সম্ভব হতো না।
তবে হ্যাঁ এই ডা-া চর্চা যে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির একটা পাঁয়তারা তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এই একই টিভি চ্যানেলে এক রায় বাবু একটি অনুষ্ঠান করেন মধ্যরাতের গলাজীবীর অনুষ্ঠান। এতে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুটি দলের দু’জনের মাঝখানে একজন করে সাংবাদিক আনেন। একজন তরুণ সাংবাদিকও থাকেন এবং এই ভদ্রলোক চিবিয়ে যা যা বলেন, তা হলো রাজনীতিকরা সবচে খারাপ, আওয়ামী লীগ খারাপেরও খারাপ। সম্ভবত ভাল ও একা। কিন্তু ও যে পত্রিকায় কাজ করে সেটার সার্কুলেশন কমতে কমতে এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে কালেভদ্রে চোখে পড়ে।
লেখার শুরুতে বলেছিলাম ক’দিন আগে একরাতে চোখের পাতা এক করতে পারিনি। কারণটা একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে মধ্যরাতে গলাবাজির অনুষ্ঠান। আমার আকর্ষণ ছিল আমার সাড়ে ৪ দশকের জানি দোস্ত সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ। আমরা একই বছর ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ভিন্ন বিভাগে অনার্সে ভর্তি হই এবং আমাদের থাকা-খাওয়ার জাগা হলো দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। তবে আমি ছিলাম ছাত্রলীগের সদস্য আর ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন। তার বড় ভাই প্রফেসর ড. মাহবুবুল্লাহ তখন ডাকসাইটে ছাত্রনেতা। তবে তারা কিন্তু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা-বিরোধী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান বা মুক্তিযুদ্ধে কি ভূমিকা ছিল জানি না। তবে সেদিন ১১ দফা ভিত্তিক যে সংগঠন গড়ে ওঠে তার নামগুলো ছিল নিম্নরূপ এবং তাতে যারা দস্তখত করেনÑ
কেন্দ্রীয় ছাত্র সমাজের পক্ষে
আবদুর রউফ, সভাপতি ও খালেদ মুহম্মদ আলী,সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। সাইফুদ্দিন আহমেদ, সভাপতি ও শামসুজ্জোহা, সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। মোস্তফা জামাল হায়দার, সভাপতি ও দীপা দত্ত, সহ-সম্পাদিকা, পূর্ব পাকিস্তান (বিপ্লবী) ছাত্র ইউনিয়ন।
তোফায়েল আহমেদ, ভিপি-ডাকসু ও নাজিম কামরান চৌধুরী,জিএস- ডাকসু
(শেখ মুজিব : বাংলাদেশের আরেক নাম- মুক্তিযুদ্ধ দলিলপত্র থেকে নেয়া)
এ তথ্য দেয়ার অর্থ হলো তারা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছিলেন তবে কতটা মনেপ্রাণে ছিলেন সে প্রশ্ন থেকে যায়। একাত্তরে কে কোথায় ছিলেন তাও বলা মুশকিল।
যা হোক, আমি আমার বন্ধু মাহফুজুল্লাহর কথা বলছি। দৈনিক বাংলা গ্রুপের সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চাকরি করতেন এবং সম্পাদক শাহাদাৎ চৌধুরীর পরেই ছিল অবস্থান (সম্ভবত) তবে যথেষ্ট ক্ষমতাবান ছিলেন। তাদের ক্ষমতার দাপটে শাহরিয়ার কবির থাকতে পারেননি।
একবার বিচিত্রা কভার স্টোরি করল “শেখ হাসিনার ঘর ভাঙছে’- কভারে কোণাকোণি করে হেডিংটি ছাপা হয়েছিল।” পরদিন তো শহরময় তোড়পাড়। বড় ধরনের এক প্রতিবাদও লেখানো হলো। কিন্তু আমি প্রতিবাদ দিতে নিষেধ করলাম। এতে অনেকেই ক্ষেপে গেলেন, এমন কি নেত্রীর কিছু আনাড়ি বন্ধু-বান্ধবীও।
তখন বাংলা একাডেমীর বইমেলা চলছিল। নেত্রীকে বললাম কিছু করার দরকার নেই। তখন জয়-পুতুলও ঢাকায়। কাল বেলা ১১টার দিকে আপনি, ওয়াজেদ ভাই, জয়-পুতুলকে নিয়ে বই মেলায় যাবেন, ঘুরে ঘুরে বই কিনবেন। তাই করলেন। রিপোর্টার-ফটোগ্রাফারদের আগেই বলে রেখেছিলাম। পরদিন দেখা গেল দেশের কাগজের প্রথম পাতায় ৪/৫ কলাম গ্রুপ ছবি ছাপা হয়েছে।
তারপর থেকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আর বিচিত্রার সাথে কথা বলেন না, ইন্টারভিউ দেন না। অনেক মাস চলে গেল কোনভাবেই নেত্রী রাজি হচ্ছেন না। এ সময় সম্পাদক শাহাদাৎ চৌধুরী আমাকে তার অফিসে চা-এর দাওয়াত দিলেন। গেলাম, চা খেলাম, তারপর শাহাদাৎ ভাই নেত্রীর ইন্টারভিউর কথা বললেন। আমি না করতাম, কিন্তু শাহাদাৎ ভাইয়ের সাথে আমার দেখা একাত্তরের রণাঙ্গনে, যার জন্যে না বলতে পারলাম না, বললাম চেষ্টা করে দেখব। নেত্রী যদি রাজি হন তবে কে ইন্টারভিউ নিবে এবং তাঁর কথা বিকৃত হবে না তো? শাহাদাৎ ভাই বললেন, ইন্টারভিউ তিনিই নেবেন এবং একটি অক্ষরও বিকৃত হবে না বা গোপন করা হবে না।
তারপর একদিন অনেক ভয়ে ভয়ে ৩২নং বাসভবনে কথাটা বললাম। নেত্রী তো আমাকে ধমকে দিলেন, বললেন চীনাদের চেনেন? ওরা যা বলবে তা করবে না। আমি বললাম নেত্রী আপনি রাজনীতি করেন, কেউ কোন অভিযোগ করলে তার জবাব যদি না দেন তবে আপনার কর্মী-দেশবাসী বিভ্রান্ত হবে। শাহাদাৎ চৌধুরীও বললেন একটি শব্দও হেরফের হবে না। নেত্রী রাজি হলেন।
নির্ধারিত দিনে ইন্টারভিউটা নিলেন শাহাদাৎ চৌধুরী, কাজী জাওয়াদ ও ফটোগ্রাফার ছিলেন আলমাজী। ভালো করেই ছাপলেন ইন্টারভিউ-প্রশ্নোত্তর আকারে। কোন হেরফের করা হয়নি। কিন্তু ইন্টারভিউর শুরুতে যে ভূমিকাটি ছাপা হয়েছিল তাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বকে ‘দানবীয় নেতৃত্ব’ বলা হলো। শুনেছি ভূমিকাটি লিখেছিলেন বন্ধুবর মাহফুজুল্লাহ। আমার শোনা কথা এরমধহঃরপ ষবধফবৎ ংযরঢ়-এর বাংলা করা হয়েছিল ‘দানবীয় নেতৃত্ব।’
তবে এটা ঠিক বন্ধুটি না জেনে লেখেননি, ও লেখাপড়া জানেন। হয়তবা ডিকশনারি দেখে ‘এরধহঃ’ শব্দটির আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন, অজ্ঞতাবশত তো নয়ই। মাহফুজুল্লাহ ভাল করেই জানে যে কোন বিদেশী শব্দের বাংলা করতে হলে দেশজ কালচার পারিপার্শ্বিকতা মাথায় রেখে তবে শব্দের ব্যবহার করা দরকার। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে ‘বিশাল নেতৃত্ব’ ‘সাহসী নেতৃত্ব’ শব্দাবলি ব্যবহার করা ছিল সঠিক এবং যৌক্তিক। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে তাই ব্যবহৃত হতো। কারণ কে-না জানে ‘দানব’ শব্দটি ‘সভ্য’ শব্দ নয় এবং কোন সভ্য মানুষের নামের সাথে লেখা হয় না। বন্ধু মাহফুজুল্লাহ লিখলেন, এতে সৎ উদ্দেশ্য ছিল আমি মনে করি না।
বন্ধু মাহফুজুল্লাহর আরেকটি ঘটনা মনে পড়ছে। সম্ভবত ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। ওয়াজেদ ভাই তখন ইন্ডিয়ান এ্যাটমিক এনার্জিতে কাজ করছিলেন এবং পরমাণু বিজ্ঞানের ওপর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করছিলেন। বন্ধু মাহফুজুল্লাহ দিল্লী চলে গেলেন শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ নিতে। নিলেনও। দেশে ফিরে বিচিত্রায় যে রিপোর্টটি করেছিলেন তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল নির্বাচনে (১৯৭৯) আওয়ামী ৪০টির বেশি আসন পাবে না। নির্বাচনের ফলাফলেও দেখা গেল আওয়ামী ৪০টিও নয়Ñ৩৯টি আসন পেয়েছিল। যেন আগে থেকেই ছকে বাঁধা এবং কোন এক পাড়া থেকে নির্ধারিত।
আমার সেই প্রিয় বন্ধু মাহফুজুল্লাহ সম্প্রতি স্যাটেলাইট চ্যানেলের গলাজীবীতে বেশ অংশ নিচ্ছেন। ইতিহাসবিদ লেখক প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন মাঝে মধ্যেই বেশ কিছু সুন্দর শব্দ উপহার দেন। সর্বশেষ দিলেন ‘পদাধিকার বলে বুদ্ধিজীবী’ এই যেমন মাহফুজুল্লাহ। আরও আছে ভবিষ্যতে কোন এক সময় চিত্রিত করার চেষ্টা করব।
মধ্যরাতের গলাজীবী
এ লেখা যখন লিখছিলাম তখন একটি টিভি চ্যানেলে গলাজীবী চলছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা সব মিলে সাড়ে ৪ দশকের বন্ধু মাহফুজুল্লাহ অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। এখানে ২টি বিষয় আলোচনা করব :
১. আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একাত্তরের মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার-ইন-চীফ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী না-কি বলেছেন, “দুই একটা যুদ্ধাপরাধীকে ঝুলিয়ে দিলে কি হবে?”
২. নোবেল লরেট ড. ইউনূসকে নাকি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের যে দখলি (?) কর্মসূচী রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্যে। যে টিভি চ্যানেলটিতে বসে বন্ধুটি এসব অভিযোগ এনেছেন সেটির নাম আমি নিতে চাই না। শুনেছি এটির মালিকের নাম বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলীর ‘জাফর’ পাল্টে কাশেম করে মীর কাশেম আলী। এমনও হতে পারে, বাবা-মা মীর জাফর আলীই রেখেছেন তাদের ঐতিহ্যিক কারণে। কিন্তু ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের আলবদর প্রধান হয়ে হত্যা-ধর্ষণের কারণে মানুষের থু-থু থেকে বাঁচার জন্যে নামটা পাল্টেছেন। আরেকটি কারণ হলো তার এই যে অর্থ ভা-ার তা কোত্থেকে এল, এল বিদেশ থেকে। এই মীর জাফর আলীরাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে প্ররোচিত করেছে এবং ওদের বেচে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ রাবেতা থেকে কোটি কোটি ডলার পকেটস্থ করেছে। মোল্লা-মৌলভীর হাতে যখন টাকা আসে তখন জাতে ওঠার জন্যে মীর জাফর আলীরাও একই বাসনা থেকে দিগন্ত মোগল সাজতে চায়। কিন্তু রং চলে গেলে সেই মোল্লাই থেকে যায়।
সে যাক, চ্যানেল যাই হোক, মাহফুজুল্লাহ যে কথাটি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সম্পর্কে বলেছেন, কিভাবে বলেছেন, কোন প্রেক্ষিতে বলেছেন জানি না। তবে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার কারণে বলতে পারি আওয়ামী লীগ বিনা-বিচারে কোন মানুষ হত্যায় বিশ্বাস করে না। নইলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দুইবার ক্ষমতায় আসতে হলো কেন? যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে কেন? বৃহস্পতিবার দুপুরে এনটিভির জহিরের সাথে গলাজীবীতে মাহফুজুল্লাহ নিজেই বলেছেন, “সমাজে রাজনীতিতে যা ঘটে তার অনেকগুণ বেশি মিডিয়ায় ৎবভষবপঃবফ (প্রতিফলিত) হয়। এরপর মন্তব্য নি®প্রয়োজন। কারণ ইনি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী-ইডেন কলেজের পিস্তলবাজির যোগ্যতায় নেত্রী এমপি-মন্ত্রী হননি।
দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে ‘ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো হয়েছে সরকারের দখলী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে।” প্রশ্ন করতে পারি বন্ধু এই গ্রামীণ ব্যাংকের নামে ডক্টর সাহেব এ পর্যন্ত কত লাখ কোটি টাকা গ্রামীণ অসহায় নারীদের কাছ থেকে তুলে নিয়েছেন? এ জবাবটা কি জাতি চাইতে পারে না? গ্রামীণ ফোনের সাথেই বা ইউনূস মিয়ার সম্পর্ক কি ? এর জবাবও তো জাতি চাইতে পারে?
আমি যা জানি তাহলো গ্রামীণ মহিলারা অশিক্ষিত হাঁস-মুরগি পালার জন্য ঋণ নেয় এবং সেই ঋণ ১৮% শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০% শতাংশ পর্যন্ত সুদ কেটে নেয়। তাছাড়া মহিলারা পুরুষের চেয়ে বেশি চৎধপঃরপধষ হিসেবী বললে যোগ্য শব্দচয়ন হবে। একবার ঋণ নিলে শোধ করা ছাড়া তাদের ঘুম হবে না। এক বেলা খেয়ে বা আধাপেটা খেয়ে টাকা জমিয়ে তবে ঋণ পরিশোধ করে। আজকাল কচুগাছ লতাপাতারও আকাল যে পেট ভরাবে। বরং দেখা গেছে যারা ঋণ নেয়নি তারা ভাল আছে, কখনো পরের জমিতে খেটে কখনো পয়সা জমিয়ে হাস মুরগি পেলে। তাছাড়া সরকারের ভিজিএফ কার্ড, দুস্থ ভাতা, উৎসব ভাতা এসব তো আছেই।
আমার শেষ প্রশ্ন হলো ইউনূস মিয়ার সঙ্গে তা তার গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণ ফোনের সম্পর্ক কি? বা কে কত ভাগের মালিক? যদ্দুর জানি ইউনূস মিয়া গ্রামীণ ফোনের ৩৯ শতাংশ আর বিদেশী কোম্পানি টেলিনর ৬১ শতাংশের মালিক। এই বার কি প্রশ্ন করতে পারি না ড. ইউনূস গ্রামীণ ফোনের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত বিদেশী টেলিনরকে কি লাখ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে নিয়ে যায়নি। এরই বা জবাব কি?
যুবলীগের কাউন্সিল হয়ে গেল
আওয়ামী লীগ যুবলীগ-এর চরম শত্রুও বলতে পারবে না বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের এই সাড়ে ৪৩ মাসে যুবলীগ কোথাও কোন বাড়াবাড়ি করেছে। জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মীর্জা আজমের নেতৃত্বে যুবলীগ যে সুশৃঙ্খল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ইতিবাচক সুফল (চড়ংরঃরাব ৎবংঁষঃ) আমরা দেখেছি কিভাবে যুবলীগের ছেলেরা ২০০৬ সালের খালেদা হঠাও আন্দোলন থেকে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সময় নেত্রীর মুক্তির দাবিতে কাজ করেছে। তবে এই যুবলীগের মধ্যেও এমন সব লোককে আজকাল খুব ধপঃরাব দেখা যাচ্ছে তখন তাদের দেখা যায়নি। এদেরই কিছু কিছু সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংগঠন বা যুবলীগ নয় বরং পরিবার বা আমি লীগ চর্চায় এই ৪৩ মাসে অর্থভা-ার গড়েছে।
কাউন্সিলের প্রধান অতিথি বাংলার অবিসম্বাদী নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা যে কারণে বলেছেন যুবলীগে কোন রকম অবাঞ্ছিত অসৎ লোকের জাগা হবে না।
আজ এর ধারাবাহিতা এসে পড়েছে সাম্প্রতিক কাউন্সিলে নির্বাচিত ওমর ফারুক চৌধুরী, সভাপতি ও হারুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক-এর ওপর এবং তারা যাদের ষবমধপু বহন করে চলেছেন সংগঠনের সামান্যতম দুর্বলতা তাদের অসম্মানিত করবে।
এই যুবলীগের জন্ম ইতিহাস জানতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের একটি উরংপরঢ়ষরহব সংগঠনের আওতায় রাখার জন্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুব সমাজের নেতৃত্বের মেধাবী ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ ফজলুল হক মনিকে দায়িত্ব দেন। সেই থেকে শেখ ফজলুল হক মনি, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মীর্জা আজমের হাত ধরে ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুনুর রশীদের হাতে পড়েছে। অবশ্য সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ফারুক চৌধুরী বলেছেন, “আমাদের শক্তি ফাইভ স্টার বা সেভেন স্টার বাহিনী কিংবা লাঠিতন্ত্র, বন্ধুকতন্ত্র নয়, রগ কাটা বা গুম করার চিন্তাও যুবলীগ করে না, আমরা বঙ্গবন্ধু, শেখ মনি বা শেখ হাসিনার আদর্শে সংগঠনকে গড়ে তুলব। লালু-ভুলু-দুলু বা লান্টু-বন্টু-মিন্টুদের জাগা যুবলীগে নেই।” দায়িত্ব অনেক কঠিন।
১. ১৫/১৬ মাস পর পার্লামেন্ট নির্বাচন
২. আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতিহাসে জঘন্য যুদ্ধাপরাধী গোলাম-নিজামী-মুজাহিদ-সাকারা কাঠগড়ায়।
এর মধ্যে একটা ব্যাপার সবাই লক্ষ্য করছেন এই যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী নারী ধর্ষণকারী বর্বরদের ট্রাইব্যুনালে আনা-নেয়ার সময় দেশের সকল ইলেকট্রনিক মিডিয়া খুব যতœ করে দেখানো হয় এবং তারা মানুষের ঝুসঢ়ধঃযু পাওয়ার জন্য হাত তুলে ধিাব করে। এ ঘটনাটি প্রত্যেকদিন ঘটছে। জানি না এইসব মিডিয়ার কোন আপনজন একাত্তরে শহীদ হয়েছেন বা সম্ভ্রম হারিয়েছেন কিনা। ঘরের লোক না হলেও দেশের ৩০ লাখ শহীদ পৌনে তিন লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন- এটাও কি তাদের মনে পড়ে না? হ্যাঁ তাদের মনে পড়বে না যারা মুক্তিযুদ্ধে কোন অবদান রাখতে পারেন নি বা রাখেননি।
সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ইতোমধ্যে কথা উঠেছে বিচার দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এক মধ্যরাতের গলাজীবী ক’দিন আগে বললেন এই দীর্ঘসূত্রতার অর্থ হলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল। বস্তুত যারা এসব চিন্তা তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। এই হায়েনারা একবার সুযোগ পেলে কি যে করবে আল্লাহ মালিকই জানেন। ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে যুবলীগ সে ক্ষেত্রে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করবে বলে মনে করি।

ঢাকা- ৯ আগস্ট ২০১২
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.