ঢাকার ফুট ওভারব্রিজ by একরামুল হক শামীম

রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে ফুট ওভারব্রিজের সংখ্যা ৫২টি। এ ছাড়া আরও ৮টি নির্মাণাধীন রয়েছে। সেগুলোর কাজ শেষ হলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৬০। অন্যদিকে চলাচলকারীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে আন্ডারপাস। এই আন্ডারপাসের সংখ্যা ৩। ঢাকায় আরও কিছু ফুট ওভারব্রিজ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানা যায়।


কিন্তু এই ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসগুলো যাদের সুবিধার কথা ভেবে তৈরি করা হচ্ছে তারা কতটুকু ব্যবহার করছেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। ফুট ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহারে ঢাকার নাগরিক সমাজের এক ধরনের অনীহা রয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ে। কিন্তু সেই সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যায়। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়েই পার হয় পথচারীরা। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা যেন পথচারীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। যেখানে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করে রাস্তা পারাপারের সুবিধা রয়েছে সেই রাস্তা পারাপারের সময় ওভারব্রিজ ব্যবহার করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই বাধ্যবাধকতা অনেককেই ভাবাচ্ছে না। সময় বাঁচাতে কিংবা নেহাতই আলসেমি করা পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়েই পার হচ্ছেন রাস্তা। এক্ষেত্রে যে সচেতনতার অভাব রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। ঢাকার পথচারীদের মধ্যে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা এত কম কেন? নাগরিক সচেতনতার কথা তো আগেই বলা হলো। তবে এক্ষেত্রে ফুট ওভারব্রিজগুলোর পরিবেশও কম দায়ী নয়। এই ফুট ওভারব্রিজগুলোর দুই পাশ বিলবোর্ড ও ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে ঢাকা। ফলে ঢাকার অনেক ফুট ওভারব্রিজে ছিনতাইকারী ও পকেটমারের দৌরাত্ম্য থাকে। এ ছাড়া ফুট ওভারব্রিজে অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বেশিরভাগ ওভারব্রিজের চলাচলের রাস্তা দখল করে নিয়েছে হকাররা। হকারদের সাজিয়ে বসা দোকানের পাশ দিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয় পথচারীদের।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগরীর ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসগুলো থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিলবোর্ড অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হকার উচ্ছেদের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার ফুট ওভারব্রিজ থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ফুট ওভারব্রিজগুলো ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডের দখলেই থেকে গেছে। এবারের নির্দেশনা কতটা কার্যকর হবে তা বলা মুশকিল। বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজ এখন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনবাণীসমৃদ্ধ ব্যানার-ফেস্টুনের দখলে। এসব ব্যানার-ফেস্টুন একবার সরানো হলেও পরে যে আবার দখল হয়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। অথচ পথচারীদের সুবিধার ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে ব্যর্থ এই ফুট ওভারব্রিজগুলো। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ওভারব্রিজগুলোকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে চলাচল উপযোগী করে গড়ে তুললেই কেবল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে। চলাচল নির্বিঘ্ন না করে নতুন নতুন ওভারব্রিজ তৈরি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

No comments

Powered by Blogger.