জাগোর অনলাইন স্কুল by ইমরান উজ-জামান

ঢাকার রায়েরবাজারে দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষক। একই সময় ঢাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাভার কিংবা রাজশাহীতে বসে শিক্ষা নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জাগো ফাউন্ডেশন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে পরিচালনা করছে অনলাইন স্কুল।


অনলাইন শিক্ষা
গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ইংরেজি মাধ্যমের ভালো শিক্ষকদের সাহচর্য পায় না। তাদের কথা চিন্তা করেই শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ইংরেজি শিক্ষা দিতে ২০১১ সালে গাজীপুরের বড়বাড়িতে গড়ে তোলা হয় অনলাইন স্কুল। রায়েরবাজারে জাগোর স্কুল থেকে গাজীপুরের জাগোর অনলাইন স্কুলের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে এই শিক্ষা দেওয়া হয়। জাগোর কম্পিউটারে থাকে ওয়েব ক্যাম। অপর প্রান্তে গ্রামের স্কুলটি তা গ্রহণ করে। সেই ছবি সেখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখানো হয়। তাদের এই স্কুলে একই সঙ্গে ৪০ জন শিশু শিক্ষা নিতে পারে। শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন স্বাস্থ্যসম্মত খাবারও দেওয়া হয়। প্রতি মাসে আবার সাবান, শ্যাম্পু দেওয়া হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য। জাগোর স্কুলের সুবিধাবঞ্চিত একেকজন শিশুর খরচ জোগান দেন একেকজন হূদয়বান মানুষ। গ্রামীণফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগদাতা অগ্নির সহযোগিতায় চলা এই ব্যবস্থার সাফল্যে শিগগির রাজশাহীতে অনলাইন স্কুলের আরও একটি শাখা খোলা হচ্ছে।
ঢাকার রায়েরবাজার কেন্দ্রে শিক্ষা নেয় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নওরীন। নওরীন প্রায় চার বছর হলো জাগোর স্কুলে পড়ছে। এর আগে অন্য স্কুলে পড়েছে। অন্য স্কুলে পড়তে গিয়ে সে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকত। ঠিকমতো পড়া না বলতে পারলেই তো শাস্তি। কিন্তু জাগোতে এসবের বালাই নেই। দিন শুরু হতেই মনে হয় কখন স্কুলে যেতে পারবে সে। সে বলে, ‘এটা অন্য এক জগৎ। শিক্ষকেরা কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করান। আবার শুনেছি একই সময়ে নাকি গাজীপুর স্কুলের ছাত্ররাও আমাদের সঙ্গে ক্লাস করে। কীভাবে এসব হয়, জানি না। গাজীপুরে যারা আমাদের সঙ্গে একই সময় ক্লাস করে, তাদের খুব দেখতে ইচ্ছা করে।’
সাভার কেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আয়শা জাবিন। এ বছরই প্রথম জাগোতে ভর্তি হয়েছে। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে পর্দায় একজন স্যার যা বলেন, তা শুনে শুনে শিখতে হয়। পড়া বুঝতে কোনো রকমের সমস্যা হয় না। পর্দার স্যাররা খুব সুন্দর করে কথা বলেন। খালি শুনতেই ইচ্ছা করে। তবে তার কাছে আজব লাগে, ঢাকায় দাঁড়িয়ে স্যার পড়ান। সেই পড়া তারা গাজীপুরে বসে শুনতে পারে কীভাবে। এই চিন্তাটার কোনো সমাধান খুঁজে পায় না আয়শা।

যেভাবে শুরু
উচ্চবিত্ত শ্রেণীকে পড়াশোনার কথা চিন্তা করতে হয় না। চিন্তা করতে হয় না জীবনযুদ্ধের ব্যাপারেও। একবিশ্বের যুগে পৃথিবীর সঙ্গে তাল মেলাতে ইংরেজি জানা জরুরি। এসব কথা মাথায় রেখে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু একটা করার তাড়না থেকে ২০০৭ সালে করভী রাখসান্দের উদ্যোগে গড়ে ওঠে জাগো ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতিষ্ঠা করেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য স্কুল। শিশুদের স্কুলে ধরে রাখতে স্কুলের পাশেই মায়েদের কাজের ব্যবস্থা করেন। সেখানে তাঁরা বিদেশি ডিজাইনে কাপড় বানান। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মায়েদের বানানো সেই কাপড় বিক্রি হয় অস্ট্রেলিয়ায়।

সফলতা
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় অবদানের জন্য ইংল্যান্ডের প্রিন্স চার্লসের দেওয়া মোজাইক সম্মাননা, ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম সম্মাননা পায় জাগো। তবে এক হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসা জাগোর সেরা অর্জন বলে মনে করেন করভী রাখসান্দ। তিনি আরও বলেন, ‘এক মাসের একটা বৃত্তিতে ১০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিগগির ইংল্যান্ডে যাচ্ছে লেখাপড়া করতে। এটাও আমাদের একটা বড় অর্জন।’

No comments

Powered by Blogger.