আনন্দমুখর বৃষ্টিভেজা ঈদ

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে গত সোমবার উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে বাংলাদেশের মুসলমান জনগোষ্ঠী। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এদিন আনন্দমুখর আবহে দেশব্যাপী উদযাপিত হয় মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসব।


প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে। আর রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা পেশার মানুষ অংশ নেন।
ঈদের দিন সকাল থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টিস্নাত সেই সকালে ঈদগাহ আর মসজিদ-মাদ্রাসায় ধ্বনিত হয় ঈদের নামাজের আহ্বান। মুসল্লিরা নির্ধারিত সময়ের আগেই বেরিয়ে পড়েন ঈদের জামাতে শামিল হতে। বৃদ্ধ, যুবক, তরুণ, কিশোর, এমনকি ছোট ছেলেমেয়েরা বাহারি রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ঈদের মাঠে গিয়ে হাজির হন। ঈদের জামাতে ইসলামের শাশ্বত সাম্য আর শান্তির বাণী ধ্বনিত হয়।
নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সানি্নধ্য লাভের জন্য খুতবা পাঠ ও দোয়া করা হয়। এতে মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি আর দেশের কল্যাণ কামনা করা হয়।
অনেক মুসল্লি নামাজে যাওয়ার আগে ও পরে দুস্থদের অর্থ দান করেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পর কোলাকুলি করে কুশল বিনিময় করেন। কামনা করেন একে অন্যের শান্তি। অনেকেই মৃত মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনের কবর জিয়ারত করেন। এর পরই সব বয়সী মানুষ নতুন জামা-কাপড় পরে নিজ বাড়ি ও স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে সালাম পর্ব, কুশল বিনিময় সারেন। চলতে থাকে সেমাই, জর্দা, ফিরনি, পোলাও, কোরমা, খিচুড়ি, চটপটিসহ সুস্বাদু খাবার খেয়ে ঈদের আনন্দ উদযাপন। রাজধানীতে ঈদের পরদিন বিভিন্ন সংগঠন ঈদ শোভাযাত্রা বের করে এই আনন্দে আলাদা মাত্রা যোগ করে।
জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এখানে দেশ ও জাতির কল্যাণসহ মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। জাতীয় ঈদগাহের প্যান্ডেল ছাড়িয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবনের সামনের রাস্তায়ও মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। নারীদের জন্য প্যান্ডেলের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়। শত শত নারী সেখানে নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সকাল ৮টায় বিশাল ঈদ জামাতের আয়োজন করে বাংলাদেশ জমীয়তে আহলে হাদিস। এতে ইমামতি করেন বংশাল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা জিল্লুল বাসিত।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ডিসিসির উদ্যোগে এবার মহানগরীর ৯৪টি ওয়ার্ডে শতাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের নামাজের পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুুর রহমান এবং শেরে বাংলানগরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ ছাড়া ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে কূটনীতিক, দলীয় নেতা-কর্মী, সংসদ সদস্য ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বর্ণিল সাজে রাজধানী : ঈদ উপলক্ষে রাজধানীকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, সচিবালয়, সুপ্রিম কোর্টসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবনে ভোরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক লেখা পতাকা দিয়ে সাজানো হয় ঢাকার প্রধান সড়কদ্বীপগুলো ।
উন্নতমানের খাবার পরিবেশন : ঈদের দিন দেশের হাসপাতাল, এতিমখানা ও কারাগারগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বন্দিদের জন্য আলাদা ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয় সব কারাগারে।
ঈদের ছুটির আগেই দেশের জাতীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকী ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।

No comments

Powered by Blogger.