সাময়িক ব্যবস্থা স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হচ্ছে!- দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতির শোচনীয় পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেওয়ার চিন্তা থেকে। এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সংগত কারণেই একটি সাময়িক উদ্যোগ। সময়সাপেক্ষ বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকালীন একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা এই ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।


কিন্তু দেশের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, এই সাময়িক ব্যবস্থাই এখন স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হতে যাচ্ছে।
ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ শেষ হতে চললেও বিদ্যুতের ঘাটতি এখনো যে পর্যায়ে রয়ে গেছে, তাতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ না কেনার কোনো বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। সরকার এরই মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছে। বর্তমানে এ ধরনের যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রয়েছে, সেগুলোর মেয়াদ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে ও বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ যেভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে, তাতে এ ধরনের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থার একটি অংশ কি তবে এখন এই ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে যাচ্ছে?
যারা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বানিয়ে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছেন, তাঁরা চাইছেন তাঁদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার মেয়াদ আরও বাড়ুক। তাঁরা এ জন্য তদবির শুরু করে দিয়েছেন বলে প্রথম আলোর প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যদি সরকারের কাছে বিক্রি করা যায়, তবে মুনাফা করার বিষয়টি অব্যাহত রাখা যাবে। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণপ্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে সরকার জনগণের কাছে যে দামে বিক্রি করছে, সেখানেও বড় ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও তা সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। এ বাস্তবতায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যখন জরুরি, তখন এগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুততর করা। কয়লা ও গ্যাসচালিত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার দায় সরকারকেই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.