ইন্টারনেট সংখ্যাতত্ত্ব-ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি একটি আশঙ্কার খবর দিয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে। কমিশনের হিসাবমতে, গত ৬ মাসে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে। যুগটা যখন ইন্টারনেটের, তখন খবরটি গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে।


বিশ্বে যখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে, তখন আমাদের দেশে কমার কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। বিটিআরসির হিসাবে, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও ওয়াইম্যাক্সের গ্রাহক বেড়েছে। কমেছে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার। দ্রুতগতির শহুরে জীবনে মোবাইল ফোন ও মোবাইল ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিশেষ তাৎপর্য আছে। ব্যবহারকারীরা দিনের বড় একটি সময় পথে থাকেন এবং চলাচলরত অবস্থায় তথ্যবিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার উপায় হলো মোবাইল বা মোবাইল ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ। শুধু চলতি পথেই নয়; বাসার জন্যও অনেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন। ওয়াইম্যাক্স আসার আগে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেট সার্ভিস বিশেষ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। তবে এই সার্ভিসের প্রধান সমস্যা গতি। প্রথম দিকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে পারলেও পরে গতি কমে যায়। এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের অভিযোগ সত্ত্বেও এদিকে নজর দেয়নি। ফলে অধিক ব্যয় করে গ্রাহকরা শ্লথ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। বিকল্প পেয়ে খুব দ্রুত অনেক ব্যবহারকারী ওয়াইম্যাক্সের দিকে ঝুঁকেছেন। একদিক থেকে এটি ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। তারা যদি এ চ্যালেঞ্জকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে তবে বাজারে এর ভালো প্রভাব পড়তে পারে। মনে রাখা দরকার, সারা পৃথিবীতেই তথ্য ও যোগাযোগ বিশ্বের নাগরিকরা বাড়ি বা অফিসে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের জন্য তারবাহী ইন্টারনেট সংযোগের ওপর নির্ভর করেন। তারবিহীন সংযোগ মূলত চলাচলরত অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। ফলে মোবাইল অপারেটরদের মনোযোগ মোবাইল ডিভাইসের দিকে নিবদ্ধ থাকলে তাতে সুফল মিলতে পারে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বাধা আছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের উপযুক্ত মোবাইল সেট ও অন্যান্য ডিভাইসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি সবার কাছে পেঁৗছানো দরকার। অন্যদিকে দ্রুতগতির তারবাহী ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে বিটিসিএলসহ বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে তৎপর থাকতে হবে। গ্রাহকদের কাছে পেঁৗছানোর সহজ উপায় বের করতে হবে। ওয়াইম্যাক্স কোম্পানিগুলোকেও তাদের বিদ্যমান সেবার মান ধরে রাখতে হবে। কোনো কোনো তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পরিসংখ্যানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও প্রকৃত ব্যবহারকারীর মধ্যে বিশাল ফারাক আছে। প্রকৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনও সন্তোষজনক নয়। এর জন্য আরও সুলভ মূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি, ইন্টারনেটকে অর্থনেতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা দরকার। এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট মুখ্যত ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ, বিনোদন ও খবরের উৎস হয়ে আছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এর আওতা প্রসারিত করার উদ্যোগগুলো দ্রুত চালু হওয়া দরকার। ইন্টারনেটে কেনাকাটা, আয়-ব্যয়, ব্যাংকিংসহ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড শুরু হলে এটি আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন কর্মচাঞ্চল্য তৈরি করবে_ তাতে সন্দেহ নেই।
 

No comments

Powered by Blogger.