বিশ্লেষণ- বিপ্লবীদের আশা পূরণ করতে পারবেন মুরসি?

মিসরের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে সাম্প্রতিক রদবদলের ঘটনা ঘরে-বাইরে অনেকের কাছেই বিস্ময় সৃষ্টি করছে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত দেশে নতুন করে অস্থিরতার জন্ম দেবে—এমন আশঙ্কাও ছিল অনেক বিশ্লেষকের। কিন্তু পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে দৃশ্যত নিজের অবস্থান সংহত করেছেন প্রেসিডেন্ট মুরসি।
ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সেনাবাহিনীর ওপর যেভাবে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা গণ-অভ্যুত্থানের চেয়ে কোনো অংশেই কম বিস্ময়কর নয়।
তবে এমন কিছু একটা যে ঘটবে, তার ইঙ্গিত মুরসির অভিষেক ভাষণেই রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করে মুরসি তাঁর উদ্বোধনী ভাষণেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে নয়।’
গত ১২ আগস্ট ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাউয়ি ও সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ সামি আনানকে অবসরে পাঠানোর ব্যাখ্যা দিয়ে মুরসি বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাউয়ির জায়গায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেন মার্কিন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকে। আনানের স্থলাভিষিক্ত করা হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিদকি সৈয়দ আহমেদকে। অবসরে পাঠানো তানতাউয়ি ও সামি আনানকে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা করা হয়েছে। মুরসির এই বিচক্ষণ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মিসরের মানুষ।
বিদায়ী শীর্ষ দুই জেনারেলসহ সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ সামরিক কমকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে আসছে মিসরের আন্দোলনকারীরা। এসব জেনারেল ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সহযোগী। তাহরির স্কয়ারে সমবেত হাজার হাজার আন্দোলনকারীর ওপর নির্যাতনে তাঁদের ইন্ধন ছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট মুরসি দুই জেনারেলকে সরিয়ে জনমানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছেন। তবে ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কার্যত তিনি দুই জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি না করে তাঁদের ‘নিরাপদ প্রস্থানের’ সুযোগ করে দিয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে মিসরের মানুষ বিপ্লবে শামিল হয়েছিল, তার অধিকাংশই পূরণ হয়নি। নতুন করে যাতে গণ-অসন্তোষ দানা না বাঁধে, সে জন্য মুরসি ‘কিছু একটা’ করার তাগিদ বোধ করছেন। তাঁদের মতে, মিসরের রাজপথে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে ইতিমধ্যে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন মুরসি। আজ মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনবিক্ষোভের কর্মসূচি রয়েছে। এর আগেই বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ দেখাতে উদ্গ্রীব ছিলেন মুরসি।
বিশ্লেষকদের মতে, মিসরে বিপ্লবের মাধ্যমে ইতিমধ্যে দুটি বিজয় অর্জিত হয়েছে। এর একটি গণসম্পৃক্ততা, অন্যটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই দুইয়ের সম্মিলনের ফলে মিসরের মানুষ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। মানুষের ভেতরের এই পরিবর্তনের বিষয়টি মুরসির অজানা নয়।
বিপ্লবের পর মিসরের সমাজে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও পড়তির দিকে। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় আশার আলো দেখতে না পেয়ে মানুষ ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় নিশ্চুপ থাকার চেয়ে ‘কিছু একটা করা’ মুরসির জন্য তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। মুরসি হয়তো কম ঝুঁকির পথেই হাঁটতে চলেছেন। সিএনএন।

No comments

Powered by Blogger.