এ টি এম আজহার কারাগারে

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করার পর ট্রাইব্যুনাল কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আগামী রবিবার তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে এ টি এম আজহারের জামিনের জন্য গতকাল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়। জামিন আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এ টি এম আজহারের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের দিন ধার্য করেন।
এদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীদের তালিকা জমা দিতে আরো ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে করা আবেদনসহ দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১।
একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, দেশান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বুধবার দুপুরে এ টি এম আজহারকে রাজধানীর মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাঁকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় তাঁকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ দুপুর ২টায় বসার কয়েক মিনিট আগে তাঁকে আদালত কক্ষে নেওয়া হয়।
গতকাল ট্রাইব্যুনাল বসার পর প্রথমে মাওলানা সাঈদীর বিষয়ে করা দুটি আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করা হয়। সাঈদীর পক্ষে গতকাল ২০ জন সাক্ষীর নামের তালিকা ও তাঁদের জবানবন্দি ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সাঈদীর আইনজীবীরা এ তালিকা জমা দেননি। তাঁরা এ তালিকা জমা দিতে আরো ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন। এ ছাড়া সাঈদীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি স্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের আদেশ চেয়ে আবেদন করা হয়। সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। এ আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। উভয় পক্ষে টানা এক ঘণ্টার শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল বিকেল ৩টায় সাঈদীর আবেদন দুটি সরাসরি খারিজ করে দেন।
এরপর এ টি এম আজহারুল ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, 'গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনার পর এ টি এম আজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়। টানা ১১ মাস তিনি কারাবন্দি থাকার পর গত ১৬ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান। এর পর থেকে তিনি মগবাজারের বাসায় থাকলেও তাঁর বাসায় আত্মীয়স্বজন কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে বাইরে যেতেও দেওয়া হয়নি। আইনজীবী হিসেবে আমাকে পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়েছে। সুতরাং তাঁর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো এবং সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।' ব্যারিস্টার রাজ্জাক আরো বলেন, এ টি এম আজহারকে ১১টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। সব মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া তাঁকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে একটি রিট আবেদন করা হয় হাইকোর্টে। এরপর তাঁকে আর কোনোভাবেই কারাগারে বন্দি রাখার উপায় ছিল না সরকারের কাছে। এ অবস্থায় তাঁকে কারাবন্দি রাখার জন্যই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। তাঁকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা। জেয়াদ আল মালুম শুনানিতে বলেন, ১১টি মামলার মধ্যে ছয়টিতে সিএমএম আদালত জামিন দিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয় এ টি এম আজহারকে কারাবন্দি রাখার জন্য সরকারের কোনো ইচ্ছা নেই। সরকার তাঁকে কারাবন্দি রাখতে চাইলে গত ১৬ আগস্টই গ্রেপ্তার করতে পারত। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে জামিন দেওয়ার কোনো বিধান নেই। উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয় বিকেল সোয়া ৪টায়। এরপর জামিন আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়ার সময় নেই উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল আগামী রবিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.