গাছে ফুল-ফল হচ্ছে মিলছে না তেল- রাজশাহীতে পাম চাষ করে চাষিরা প্রতারিত by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাষিরা পামগাছ লাগিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তাঁদের লাগানো গাছে ফুল-ফল দুটিই হচ্ছে, কিন্তু ফল থেকে তেল হচ্ছে না। তিন বছর পরিচর্যার পর এখন বুঝতে পারছেন, তাঁরা প্রতারণার শিকার।
জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার ৫০ জন চাষি বাড়ির আঙিনায় ও জমিতে পামের চাষ করেন।
সেই পামগাছ নিয়ে এখন তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। ২২ জন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এগ্রো ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধির কাছ থেকে পামগাছের চারা কিনেছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রচারপত্রে লেখা ছিল, ‘ঘরে ঘরে পামগাছ লাগিয়ে তেলের পারিবারিক চাহিদা মেটানো যায়; বিক্রি করে বাড়তি আয়ও হয়।’ মাত্র ১০টি পামগাছের ফল থেকে পরিবারের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য খরচ মেটানো সম্ভব। তিন থেকে চার বছর বয়সে গাছে ফল আসে। একটি গাছে ১০টি করে কাঁদি হয়। বছরে তা থেকে ৭৫ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। এ রকম একটি গাছ ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। একটি গাছ থেকে বছরে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
তেল আহরণের সহজ পদ্ধতিও প্রচারপত্রে বলা রয়েছে। ফল আহরণ করে কিছুক্ষণ পানিতে সিদ্ধ করে চাপ দিলেই রস বের হবে। জ্বাল দিলেই অতিরিক্ত পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। এরপর লাল রঙের যে তেল পাওয়া যাবে, তা পরিশোধন ছাড়াই রান্নায় ব্যবহার করা যাবে।
৯ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক গাছে পাম ফল পেকে আছে। ধামিলা গ্রামের মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বছর আগে ২০০ টাকা করে ১৬টি পামগাছের চারা কিনে লাগিয়েছি। এখন গাছে ফল এসেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তেল বের করতে গিয়ে ৫০০ টাকার লাকড়ি খরচ হয়েছে। আর গাছের পরিচর্যা খরচ তো আলাদা আছেই। এত কিছুর পরও তেল বের হয়নি।’
ফুলবাড়ী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু শুধুই তিন বছর ধরে ২০টি গাছের পরিচর্যা করেছি। এর জায়গায় অন্য ফলগাছ বা একটা কাঠের গাছ লাগালে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতাম।’
চাষিরা জানান, রাজশাহী নগরের উপভদ্রা এলাকার ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর সরণির চিশতিয়া নিবাস নামের একটি বাড়িতে এগ্রো ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের কার্যালয় ছিল। এর পরিবেশক ছিলেন গোলাম মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি।
গত ১০ আগস্ট সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ি এখন একটা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। তবে মুঠোফোনে পরিবেশক গোলাম মেহেদী হাসানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আর ওই কোম্পানির সঙ্গে নেই। ওই কোম্পানির এজেন্সি নিয়ে আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কোম্পানি কী জাতের চারা দিয়েছিল, আমিও জানি না। চারা বিক্রির কিছুদিন পরই কোম্পানি রাজশাহীর কার্যালয় গুটিয়ে চলে গেছে। ফোন নম্বর ছিল, তাতে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায় না। পরে মনে হয়েছে, তারা প্রতারক শ্রেণীর লোক ছিল।’
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, ‘আমি চাষিদের পামগাছ পরিচর্যার ব্যাপারে সব পরামর্শ দিয়েছি। হিসাব অনুযায়ী গাছে ফলও এসেছে। কিন্তু যেভাবে তেল আহরণের কথা বলা হয়েছে, সেভাবে তেল পাওয়া যাচ্ছে না।’

No comments

Powered by Blogger.