শাওয়ালের রোজার ফজিলত by মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

হজরত রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল, তারপর শাওয়াল মাসেও ছয়টি রোজা রাখল_ তার এ রোজা পুরো বছর রোজার মতো বিবেচিত হবে। [মুসলিমের সূত্রে রিয়াজুস সালেহীন-হাদিস : ১২৫৪]


বান্দার প্রতি এটা আল্লাহতায়ালার করুণার প্রকাশ। পবিত্র রমজানের মাসব্যাপী ফরজ রোজা আদায় করার পর যদি কেউ মাত্র ছয়টা রোজা রাখে তাহলে সে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব লাভ করবে। আলেমগণ এর একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বান্দা যে কোনো নেক আমল করলে আল্লাহতায়ালা তাকে দয়া করে দশ গুণ প্রতিদান দেন। সে হিসাবে রমজানের ত্রিশ রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয় রোজাকে যোগ করে যদি দশ দিয়ে গুণ দেওয়া হয় তাহলে গুণ ফল দাঁড়ায় ৩৬০। আর চান্দ্রমাস হিসাবে ৩৬০ দিনে এক বছর। তাই বছরে ৩৬টি রোজা রাখলেই আল্লাহতায়ালা পুরো বছর রোজা রাখার নেকি দান করেন!
শাওয়ালের এই রোজা রাখার ক্ষেত্রে শুরু, শেষ কিংবা ধারাবাহিকতার কোনো শর্ত নেই। পুরো মাসের মধ্যে কেবল ঈদের দিন বাদ দিয়ে যে কোনো দিন থেকে রাখা যায় এই রোজা। এক সঙ্গে, ভেঙে ভেঙে সব ভাবেই রাখা যায়। রোজা রাখাটাই কথা! তারপর বছরজুড়ে পুণ্য লাভের মহাসুযোগ। এটাই উম্মতের বৈশিষ্ট্য। সামান্য সাধনায় বিপুল কল্যাণের অঙ্গীকার। এটা সত্য, শাওয়ালের রোজা শরিয়তের দৃষ্টিতে নফলমাত্র। তবে পরিণামের বিচারে এ নফলের গুরুত্ব কম নয়। কারণ হাদিস শরিফে আছে_ কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাজের। যদি বান্দার ফরজ নামাজে ত্রুটি কিংবা ঘাটতি থাকে তাহলে আল্লাহতায়ালা বলবেন_ দেখ বান্দার আমলনামায় কোনো নফল আছে কি-না। যদি থাকে তাহলে নফল দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। এ হলো নফলের তাৎপর্য। সুতরাং নফল ফরজেরই সম্পূরক। নফলকে 'নফল' বলে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সেদিন প্রতিটি মানুষ ছোট-বড় প্রতিটি নেক আমলের মূল্য হাড়ে হাড়ে অনুভব করবে যেদিন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদে ঘোষণা করেছেন_ 'যখন কেয়ামত উপস্থিত হবে, সেদিন মানুষ পালাবে আপন ভাই থেকে এবং তার মা, তার বাবা, তার স্ত্রী ও তার সন্তানদের থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই এমন এক গুরুতর অবস্থা হবে_ যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত করে রাখবে। অনেক মুখ সেদিন হবে উজ্জ্বল সহাস্য ও প্রফুল্ল এবং অনেক মুখ হবে সেদিন ধুলোয় ধূসরিত_ সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা। এরাই কাফের ও পাপাচারী! [আবাসা : ৩৩-৪২]
রমজান অতঃপর শাওয়ালের রোজা_ তার অল্প ক'দিন পরই হজের আয়োজন_ এসবের উদ্দেশ্য একটাই! আমরা যেন কেয়ামতের দিন উজ্জ্বল মুখ হয়ে দাঁড়াতে পারি। আল্লাহতায়ালা আমাদের কবুল করুন। আমিন।
 

No comments

Powered by Blogger.