ওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলবে সে ভাষায় জবাব দেয়া হবে- স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় খালেদা জিয়া

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আর ছাড় দেয়া হবে না। এখন থেকে তাদের উস্কানিমূলক কথার কঠোর জবাব দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলবে তাদের সে ভাষায় জবাব দেয়া হবে।


তিনি বলেন, দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি যোগ দেবে না বিএনপি। আওয়ামী লীগ যতই চেষ্টা করুক তাদের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারকে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বিকল্প কোন নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। নির্বাচনকালে পার্লামেন্ট থাকবে, এমপি থাকবে, মন্ত্রী থাকবে, প্রধানমন্ত্রী থাকবে এমন নির্বাচনে বিএনপি যোগ দেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে তাতে বিএনপি অংশ নেবে। জনগণকে নিয়ে ভোটের মাধ্যমেই আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করছে যে বিএনপি আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দেবে। আর সে সুযোগে তারা রাস্তায় মারামারি করে বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে মামলা ঠুকে দিয়ে নেতাকর্মীদের জেলে ভরবে। কিন্তু বিএনপি সে সুযোগ সরকারকে দেবে না। তিনি বলেন, বিএনপি হত্যা-গুমের রাজনীতি বিশ্বাস করে না। জনগণের জন্য বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে বিশ্বাস করে। জনগণের ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচী বিএনপি দিতে চায় না। তাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়া হয়েছে। এজন্য বিএনপিকে দুর্বল মনে করার কোন কারণ নেই। স্বৈরাচারী এরশাদের সময় বিএনপি নেতাদের আটক করে জেলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। সারাদেশে বিএনপি এত শক্তিশালী ছিল না। তারপরও তখন স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখন বিএনপি অনেক শক্তিশালী। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী ছড়িয়ে আছে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ সরকারকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকে সরকারী দলের লোকেরা যে ভাষায় কথা বলবে সঙ্গে সঙ্গে সে ভাষায় জবাব দিতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। আামরা ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়তে চাই। ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বিএনপিও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ভারতে এখন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায়। তাই বিএনপি আলাপ-আলোচনা করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করতে চায়। ভারতের সঙ্গে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। তারা স্বাধীনতার সময় আমাদের সহায়তা করেছে। ভারতকে বলব আপনারা কোন বিশেষ দলের সঙ্গে নয় বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ভাল হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভাল। তিনি কি উটপাখির মতো মুখ লুকিয়ে রেখেছেন? সারাদেশে গুম-হত্যা চলছে। আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতির কারণে ঘরেও কেউ নিরাপদে ঘুমাতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি দেখেন না।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু বিএনপি চায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করতে। আমাদের আমলে আ’লীগ ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল। আর গত চার বছরে বিএনপি মাত্র ১১ দিন হরতাল দিয়েছে। এখানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আত্মীয়-স্বজন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা দুর্নীতি করছে। তাই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে জনগণ তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। তখন তাদের অবস্থান কোথাও হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজনই সচিবালয়ে বোমা ফাটিয়ে আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বোমা হামলা করতে তারা পটু। সরকার ভেবেছে, নেতাদের কারাগারে রেখে আন্দোলন দমানো যাবে। এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। ভোটের মাধ্যমেই জনগণ ক্ষমতা বদল করবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে জনগণের সঙ্গে যে সব ওয়াদা করেছিল তার একটিও রক্ষা করেনি। তাই বুঝতে পেরেছে আগামীতে জনগণের কাছে যেতে পারবে না। তারা জানে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে না পারলে জনগণ কোন দিন তাদের ভোট দেবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। তারা এত দুর্বল হয়ে গেছে যে জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়। তাই নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গত তিনবার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। তাতে একবার আওয়ামী লীগ ও দু’বার বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিল। সেই তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ২০০৮ সালের সরকারকে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলব না। এই নির্বাচনে মইনউদ্দিন ফখরুদ্দীনরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই সন্ত্রাস। তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ অতীতেও ভাল ছিল না। এখনও ভাল না। ভবিষ্যতের জন্যও ভাল না। দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার মানেই দুর্নীতিবাজ সরকার। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই দুর্নীতি করেছে। তাদের সময় ১৯৯৬ সালে দেশ এক নম্বর দুর্নীতিবাজ দেশে পরিণত হয়েছিল। তাদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সে সময় লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন কায়েম করেছে। গণতান্ত্রিক দলগুলোর সভা সমাবেশ করার জন্য কোন জায়গা রাখেনি। একটি মাত্র জায়গা পল্টন ময়দানকে বাগান বানিয়েছে। জনগণের সভাসমাবেশ বন্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করাই এর উদ্দেশ্য। এরা অন্যকে কথা বলতে দেবে না। শুধু নিজেরা কথা বলবে। তারা স্টেডিয়াম, বায়তুল মোকাররমসহ যেখানে ইচ্ছা সেখানেই সমাবেশ করতে পারবে। আর জনগণ কোথাও কথা বলতে পারবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার প্রশাসনে দলীয়করণ করেছে। সংসদ একদলীয় করেছে। তাদের লোক ছাড়া কেউ চাকরি পায় না। মেধা ও যোগ্যতার কোন স্থান নেই। দেশের সর্বত্র চলছে বিশৃঙ্খলা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া হচ্ছে না। বুয়েট বন্ধ করে দিয়েছে। এমসি কলেজ ছাত্রলীগ পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্যই হলো এই দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করা। আমরা বাংলাদেশকে কারও আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করতে দেব না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ বীর বিক্রম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল বারী ববি, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আসাদ, সিনিয়র সহসভাপতি মনির হোসেন, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আলী রেজাউল করিম রিপন।
মির্জা ফখরুল, মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাসীন মহাজোটের বিচার দাবি জানিয়ে বলেন, যে সরকার হত্যা-গুমের সঙ্গে জড়িত হয় তাদের ওপর জনগণের আস্থা থাকতে পারে না। আমি তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করছি এবং বিচার দাবি করছি। তিনি বলেন, জামানত বাজেয়াফত হওয়ার ভয়েই আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়।
ফখরুল বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে গেছে। দেশ আজ মহাসঙ্কটে। দেশী-বিদেশী পত্রপত্রিকায় এ সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ পাচ্ছে। এসব রিপোর্টে দুর্নীতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকেই দায়ী করা হচ্ছে। আমরা এসব অভিযোগের জবাব চাই। তিনি বলেন, এ সরকার বিশ্বব্যাংকের চিঠি প্রকাশ করতে টালবাহনা করছে। কিন্তু আবুল হোসেনের পদত্যাগের মাধ্যমে তাদের দুর্নীতি প্রমাণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ সরকারের লাগামহীন ব্যর্থতায় গার্মেন্টস কারখানাগুলো বিদেশীদের হাতে চলে যাচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.