জন্মপ্রজন্ম by রণজিৎ বিশ্বাস

পৃথিবীতে ওরা কে কখন নেমেছে, কোন পরিচয়ে কে নেমেছে, সে বিবেচনা একদিন ওদের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেলো। একদিন ওরা এমন দু’জন হয়ে গেলো, যারা আনন্দ ও বেদনার এবং লুকাবার ও প্রকাশ করবার সব কথা ভাগ করে নিতে পারে।


তেমন সম্পর্কের একদিন অর্ক বললো- ভুল প্রজন্মে জন্ম তোমার। ঊশ্রী মানতে চাইলো না। বললোÑ উল্টো বলি তোমার কথার। জন্ম আমার ঠিক প্রজন্মেই হয়েছে। নইলে এত সাহস আমার জুটতো না। তোমার প্রজন্মের মানুষের এত সাহস হয় না।
: কিসের সাহস বলছো তনুমিন?!
: বোঝ না তুমি কিসের সাহস? কাঁপবার ও কাঁপাবার, ভাঙবার ও ভাঙ্গাবার, জ্বলবার ও জ্বালাবার, নড়বার ও নড়াবার, লড়বার ও লড়াবার, কাঁদবার ও কাঁদাবার। সবার ওপরে মরণের ও হননের।
এমনটিই ছিল অর্কের সঙ্গে ঊশ্রীর শেষ কথা। এবার তার পরের কথা। ঢাকার কোন এক এলাকার এক টাওয়ার বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংয়ের এক ফ্ল্যাটে ঊশ্রীদের বাসা। বিল্ডিংয়ের সামনে অর্কের রিক্সা! আটকে দিল ঊশ্রী।
থামাও রিক্সা! হুঙ্কার দিল যে। বলবতী, স্বাস্থ্যবতী, সুন্দরী, তিলকগ- ও বিল্বশোভন। এতকিছুর পর গৌরবর্ণা তার না হলেও চলতো, তবু প্রকৃতির পদপাতে হয়েছিল সে। অর্কনৈকট্য ওকে আরও ফোটাচ্ছিল, প্রতিদিন ফোটাচ্ছিল, অনুক্ষণ ফোটাচ্ছিল
রিক্সাওয়ালার ক্ষমতা ছিল না, সাহসিকার সে হুঙ্কার উপেক্ষা করে। সে থেকে পড়লো, সওয়ারীর হুকুমের অপেক্ষা না করেই।
ঊশ্রী অর্কের হাত ধরে বললো যাচ্ছো কোথায় তুমি আমাকে কুর্নিশ না করে। এত সাহস তো ভালো নয়! না তাকাবে না তাকাও তুমি আমার দিকে, আমার ফ্ল্যাটেও চোখ ফেলবে না তুমি! এতটা বাড়াবাড়ি ভালো নয়!
: কোচিং সেন্টারে মেয়ে আছে। তোমার ফ্ল্যাটের উল্টোদিকে। তাকে নিয়ে ঘরে ফিরবো।
: সেতো কেউ রুখছে না! মিনিটখানেক পরে যেও।
: এই মিনিটে করবো কী?!
: হাতের মণি ধরে রাখো।
: ডানবাম কি খেয়াল আছে তোমার!
: দরকার নেই আমার।
: তোমার কথা বোঝা কঠিন।
হাতের চাপ দিয়ে ঊশ্রী বললো- কে করলো এমন কঠিন?
অর্ক কিছু বলার আগে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে গেলো। বাবার দেরি দেখে একটি মেয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো। না খেয়াল করেছে তার বাবা, না তার বাবার হাত ধরে রাখা ঊশ্রী। মেয়েটি প্রায় চিৎকার দিয়েই বসলো- কেমন আছিস ঊশ্রী তুই? জবাব পেলো- ভালো আছি শিল্পী আপু।

No comments

Powered by Blogger.