নির্বাচন নির্বিঘ্ন করার নির্দেশ হাইকোর্টের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেল নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও আশুলিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হয়দার ও বিচারপতি মুহাম্মুুদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ


দেয়। এর আগে সকালে রিট আবেদনটি দায়ের করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ড. আবুল খায়ের। আজ শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রিট আবেদনের ওপর সংক্ষিপ্ত শুনানি নিয়ে আদালত আদেশে শুক্রবার নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ করতে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেন। রিটকারী কোন বাধা বিপত্তি ছাড়া যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে বলা হয় আদেশে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড.শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
ড.শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার ভিসি প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু যে স্থানে নির্বাচন হবে সেখানে অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এ কারণে একজন ভোটার শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ চেয়েছেন। আদালত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও আশুলিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ভোটাররা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষে ২০০৪ সালে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়। পরবর্তী নির্বাচন হওয়া কথা ছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু ২০১২ সালে এ নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩ এর ১১ ধারায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এ আইনের ১৯ ধারা অনুসারে পরবর্তী সিনেট নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিনেটররা স্বপদে বহাল থাকবেন বলে বিধান রাখা হয়েছে।’
রিট আবেদনে বলা হয়, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ঘোষণা দেয়ার পর থেকে গত কয়েকদিনে বিবাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ ও স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশও নিশ্চিত করতে পারছেন না। দায়িত্ব পালনে তাদের এই ব্যর্থতার ফলে রিট আবেদনকারী মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করছেন। রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনেটর হিসেবে রিটকারী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিতে আইনগতভাবে বাধ্য। বিবাদীরা নির্বাচনে রিটকারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আইনগতভাবে দায়বদ্ধ। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।’ রিটে শিক্ষা সচিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য নির্বাচনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অবরোধ ও অনশন কর্মসূচী শুরু করেছে সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদের শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মসূচী শুরু করে ।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় নিহত হন। ওই ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে। গত ১৭ মে ওই পদে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নিয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার পর ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন বিভিন্ন দলমতের শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০০৪ সালে তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.