শরতের শুভ্রতা by তৌফিক অপু

নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই কবিগুরুর এ চরন দুটির মতোই সাদা মেঘের দল এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই কে যেন মেঘের ভেলা ভাসিয়ে যাচ্ছে আপন মনে। প্রকৃতিতে বইছে মিষ্টি বাতাস। সাদা শুভ্র মেঘগুলো যেন ছুটে বেড়াচ্ছে আপন মহিমায়।


এলোমেলো নেচে যাওয়া মেঘগুলো যেন পরশ বুলিয়ে যায় নদীর ধারে ফুটে থাকা কাশ ফুলগুলোতে। বোঝাই যায় ঋতু পরিবর্তনের পালাবদলে প্রকৃতিতে বইছে শরতের হাওয়া। শরতের সাজে সেজেছে প্রকৃতি। ঝিরিঝিরি বাতাস, এই মেঘ এই রোদ্দুর মনে করিয়ে দেয় শরৎ এসেছে দুয়ারে। প্রতিটি ঋতুই যেন হাজির হয় নিজ নিজ মহিমায়। রঙ, রূপ, বৈশিষ্ট্যে মৌলিকতার পরিচয় দেয়। ষড় ঋতুর এদেশকে নিয়ে রচিত হয়েছে বহু গান, কবিতা, উপন্যাস। ঋতুর পরিবর্তন যেন দোল খেয়ে যায় কবি মনে। ঠিক এমনই করে ঋতুর পালাবদল দোল খেয়ে যায় ফ্যাশন ট্রেন্ডে। যে কারণে ঋতুভিত্তিক পোশাক চোখে পড়ে হরহামেশা। ফ্যাশনেও বইছে শরতের হাওয়া। আবহাওয়ার বৈচিত্র্যতাকে উপলক্ষ করে ফ্যাশন হাউসগুলো বর্তমানে পোশাক প্রস্তুত করে থাকে। মানুষের আগ্রহও যেন বাড়ছে ঋতুভিত্তিক পোশাকের প্রতি। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পোশাকগুলো। আর হবেই বা না কেন? যে ঋতুতে যে পোশাকটি মানানসই তা যদি প্রস্তুত করা হয় তাহলে ক্রেতারা তো কিনবেই। এটা ফ্যাশন ট্রেন্ডের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। কারণ ক’দিন আগেও পোশাক প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ঋতু বৈচিত্র্যের কথা মাথায় আনা হতো না। কিংবা এ ধরনের কোন ধ্যান ধারণাই ছিল না। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি ঋতুকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া উপযোগী পোশাক বাজারে ছাড়া হয়। এতে করে ক্রেতারা খুব সহজেই নিজেদের পছন্দের পোশাকটি খুঁজে বের করতে পারে। তাছাড়া ঋতুভিত্তিক পোশাক আরামদায়কও বটে। শরৎ কালটা একটু অন্যরকম। অর্থাৎ ভাদ্র এবং আশ্বিন এ দু’মাসে দু’ধরনের টেম্পারেচার লক্ষ্য করা যায়। ভাদ্র মাসে বেশ ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয় যা আশ্বিনে হয় না। বরং আশ্বিনের মৃদু মন্দ বাতাস মনকে সুশীতল করে তোলে। যে কারণে দুই মাস মিলিয়ে শরৎকাল হলেও দু’মাসে দুই ধরনের পোশাক লক্ষ্য করা যায়। তবে প্যাটার্ন প্রায় কাছাকাছি। শরতের ফ্যাশন ট্রেন্ডে কাপড় হিসেবে সিলেক্ট করা হয়েছে সুতি, এন্ডি কটন, ভয়েল, কোটা এবং সিল্ক। জয় সিল্ক এবং এন্ডি সিল্কের ওপর ডিজাইন করা বেশকিছু ড্রেস দৃষ্টি কাড়বে। ফ্যাশন হাউসগুলো বেশ জমজমাট। যদিও ঈদ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু সামনেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। ঈদের কেনাকাটার রেশ ঈদের পর পর্যন্তও থাকে। আর তার সঙ্গে অন্য কোন উৎসব যদি যোগ হয় তাহলে তো কথাই নেই। যে কারণে ঈদের পরও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ফ্যাশন হাউসগুলো। শরতে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি এবং ফতুয়াতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শরতের আবহ। মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, শর্ট কামিজ এবং ফতুয়াতে শরতের ছাপ পাওয়া যাবে। হ্যান্ড পেইন্ট, ব্লক, এম্ব্রয়ডারি এবং হাতের কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শরতের স্নিগ্ধতা। প্রতিটি পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে শরতের আবহকে মাথায় রেখে। সালোয়ার কামিজ এবং শাড়িতে পাথর ও শুভ্র পুতির কারুকাজ অন্য রকম দ্যুতি ছড়াচ্ছে। দামও ক্রয়সীমার মধ্যেই। শাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা। পাঞ্জাবির দাম পড়বে ৬৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা। সালোয়ার কামিজ পাওয়া যাবে ৭৫০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে। ফতুয়া ৪০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। যে কোন বয়সীর পোশাক শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আউটলেটে। শরতের আকাশকে আরও বেশি বর্ণিল করে তুলবে শরৎকেন্দ্রিক এ পোশাকগুলো। স্নিগ্ধ পরিবেশে পোশাকগুলো আপনাকে করে তুলবে আরও বেশি মোহনীয়। ফুটিয়ে তুলবে আপনার রুচি।

ছবি : আরিফ আহমেদ
মডেল : শম্পা

No comments

Powered by Blogger.