হলমার্ক কেলেঙ্কারি- সোনালী ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তা বরখাস্ত

হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছে সোনালী ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পর্যায়ের ১৭ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে ব্যাংকটি। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন আরও তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাঁদের নিয়োগকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।


তগতকাল বিকেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২৬ আগস্ট সোনালী ব্যাংককে হলমার্ক কেলেঙ্কারির জন্য চিহ্নিত ৩২ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে ৩০ আগস্টের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি।
এ ছাড়া তিনজন কর্মকর্তাকে আগেই বরখাস্ত করেছিল সোনালী ব্যাংক। একজন কর্মকর্তা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে আছেন। সাতজন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে স্বাভাবিক অবসরে গেছেন। ঊর্ধ্বতন তিনজন কর্মকর্তার জন্য চিঠি লেখা হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। আর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবিরের চাকরির মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাকি ১৭ জনকে বরখাস্ত করা হলো গতকাল।
গতকাল বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন: রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন হোটেল) শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উজ্জল কিশোর ধর, তুষার কান্তি ধর, জেসমিন নাহার, মিহির চন্দ্র মজুমদার, কনিষ্ঠ কর্মকর্তা ওয়াকিলউদ্দিন আহমেদ ও কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থায়ন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ আলতাফ হোসেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এজাজ আহমেদ, ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তা মুখলেসুর রহমান ও নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন, মহাব্যবস্থাপক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক গোলাম নবী মল্লিক ও আশরাফ আলী পাটোয়ারি, ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহেদ উদ্দিন আহমেদ এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক নেসার আহমেদ চৌধুরী, নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল হক মণ্ডল ও শাখা পরিদর্শক কামরুল হোসেন খান।
এর আগে বরখাস্ত করা হয়েছিল রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক, উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিনকে। মহাব্যবস্থাপক মীর মহিদুর রহমান বর্তমানে ওএসডি হয়ে আছেন। দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুর রহমান ও মাইনুল হক এবং মহাব্যবস্থাপক ননীগোপাল নাথের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সোনালী ব্যাংক।
এর বাইরে যে সাত কর্মকর্তা স্বাভাবিক অবসরে গেছেন তাঁরা হলেন: মহাব্যবস্থাপক সবিতা সিরাজ, নওশের আলী খোন্দকার, আলী হোসেন খান, এমডি মুসা ও মাহবুবুল হক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক শামিম আখতার এবং ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা খানম।
রূপসী বাংলা শাখা থেকে হলমার্কসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা নিয়ে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম চালায় সোনালী ব্যাংক। নিরীক্ষায় এ জন্য ৩১ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়। সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ ২৩ আগস্ট নিজেরাও এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এদিকে, গতকাল সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান অর্থমন্ত্রীর কাছে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান। ওই প্রতিবেদনে হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায় পর্ষদের ওপরও বর্তায় উল্লেখ করে পর্ষদ পুনর্গঠনের অনুরোধ করা হয়েছিল। এর পরই অর্থমন্ত্রী তিন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কাজী বাহারুল ইসলাম অর্থমন্ত্রীকে চিঠিটি লেখেন। চিঠিতে হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে পর্ষদের গৃহীত পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়েছেন। পর্ষদ কিছু জানত না বলেও চিঠিতে লেখা হয়।
এদিকে, রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গতকাল আরও পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁরা হলেন: আ ন ম হেদায়েত উল্লাহ, সবিতা সিরাজ, গোলাম নবী মল্লিক, আশরাফ আলী পাটোয়ারি ও ওয়াহেদ উদ্দিন আহমেদ।
দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত দল সকাল ১০টা থেকে পৃথকভাবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে এই বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান বিভাগের সূত্র জানায়, গত দুই দিনে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে দুদক। কর্মকর্তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে জবানবন্দি দিলেও তাঁদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন নথিতেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হকসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।
জানা গেছে, আগামী রোববার দুদক হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

No comments

Powered by Blogger.