জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে- সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি

হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা এবং এর সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যেসব খবর বের হচ্ছে, তা আমাদের হতবাক করছে। দিনের পর দিন একটি চক্র ব্যাংক-ব্যবস্থার ভেতরে ঢুকে এ ধরনের অপকর্ম চালাতে পারে, তা অবিশ্বাস্য।
যেসব নথি ব্যাংকের শাখা অফিসে থাকার কথা, সেগুলো ব্যাংকে নেই, পাওয়া যাচ্ছে হলমার্ক গ্রুপের অফিসে, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। সোনালী ব্যাংকের অভিযুক্ত রূপসী বাংলা শাখা অফিসটিকে কার্যত হলমার্ক গ্রুপ তাদের একটি শাখা অফিসে পরিণত করেছিল। ব্যাংক-ব্যবস্থায় এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২০১০-১২ সময়ের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপই হাতিয়ে নিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রভাবশালী শক্তির সমর্থন বা আশীর্বাদ ছাড়া কি এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব? প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের অভিযুক্ত শাখা অফিস ও হলমার্ক গ্রুপের কী সম্পর্ক, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, সেটা প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা যখন মোদাচ্ছের আলীর নাম উচ্চারণ করে বলেন, ‘তিনি নিয়মিত রূপসী বাংলা শাখায় যেতেন’, তখন বিষয়টিকে একেবারে যোগসূত্রহীন ভাবা কঠিন। সোনালী ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা ও হলমার্ক গ্রুপ কোন খুঁটির জোরে এসব অপকর্ম করেছে, তা-ও তদন্তের দাবি রাখে।
এত বড় অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা অফিস মূল অভিযুক্ত হলেও ব্যাংকটির পরিচালনা কর্তৃপক্ষও এর দায় এড়াতে পারে না। এই বিবেচনা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার অনুরোধ করে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাতে অভিযুক্ত হলমার্ক এবং ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারাই উৎসাহিত হবেন। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই কেলেঙ্কারির জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে থাকে, তাতে অন্যায় কোথায়? এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতার চেয়ে যদি রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়, তার পরিণাম কখনোই সুখকর হতে পারে না। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এর পরও সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে অর্থমন্ত্রীর সাফাই গাওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
হলমার্ক গ্রুপ ও সোনালী ব্যাংকের এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার যে তদন্ত শুরু হয়েছে, তা ঠিকভাবে চলবে এবং এর সঙ্গে প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ মিললেও তদন্ত থেমে যাবে না, সেটাই প্রত্যাশা। গণমাধ্যম ও জনগণের চোখ-কান খোলা রয়েছে। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.