আয়ু বৃদ্ধির গবেষণা by একরামুল হক শামীম

অমরত্ব লাভের জন্য কত ধরনের গবেষণাই না হচ্ছে। এসব গবেষণার মাধ্যমে বের করা হচ্ছে কী কী কাজ করলে আয়ু বৃদ্ধি পাবে, মানুষ পাবে অমরত্ব। অন্যদিকে কিছু গবেষণার ফল আবার বিপরীত। সেসব গবেষণায় উঠে আসছে কী ধরনের কাজ করলে আয়ু কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। অমরত্বের ব্যাপারটি উঠে এসেছে নানা কল্পকাহিনীতে,


গল্প-উপন্যাসে। চীনের একটি ক্ল্যাসিক উপন্যাসের নাম 'জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট'। সেখানে একটি কাল্পনিক ফলের কথা উল্লেখ হয়েছে। ফলটি খেলে মানুষ অমরত্ব লাভ করে। তবে সেই উপন্যাসের ফলের দেখা বাস্তবে মেলেনি। তাই বলে মানুষের গবেষণা থামেনি। যে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করছেন তারা আবার জানাচ্ছেন, ২০৪৫ সালেই মানুষ অমরত্ব লাভ করবে। এই বিষয়টিকেই বলা হচ্ছে সিঙ্গুলারিটি বিপ্লব।
সম্প্রতি দুটি আলাদা বিষয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এই দুটি গবেষণার ফল ভিন্ন ভিন্ন হলেও একটি জায়গায় রয়েছে সংযোগ। সংযোগের বিষয়টি হলো আয়ু বৃদ্ধি। প্রথম গবেষণার ফল_ বেশি টিভি দেখলে শিশুরা মুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় গবেষণার ফল_ দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় বসে না কাটালে দুই বছর আয়ু বাড়তে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, বেশি টিভি দেখা এবং মুটিয়ে যাওয়ার মধ্যে আয়ু কমে যাওয়া কিংবা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক কোথায়। যে গবেষণা প্রতিবেদন যুক্তরাজ্যে বায়োমেড সেন্ট্রাল জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, দুই থেকে চার বছর বয়সী যেসব শিশু বেশি সময় টেলিভিশন দেখে কাটায় তাদের মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, শিশুরা সপ্তাহে গড়ে ৮.৮ ঘণ্টা টিভি দেখে। অন্যদিকে সাড়ে চার বছরের ১৫ শতাংশ শিশু সপ্তাহে ১৮ ঘণ্টার বেশি সময় টিভি দেখে থাকে। ১৮ ঘণ্টার বেশি টিভি দেখলেই সমস্যা তৈরি হতে পারে। ১০ বছর বয়সেই এসব শিশু অতিরিক্ত মুটিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মুটিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আয়ু কমে যাওয়ার সম্পর্ক কোথায়? অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মুটিয়ে গেলে আয়ু কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এবার দ্বিতীয় গবেষণার দিকে নজর ফেরানো যাক। মজার ব্যাপার হলো, দ্বিতীয় গবেষণাটির সঙ্গেও টেলিভিশন দেখার সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণার ফল জানাচ্ছে, দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় বসে কাটানো উচিত নয়। টিভি দেখার সময় দিনে দুই ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে আনতে পারলে আয়ুর সঙ্গে যোগ হবে ১.৪ বছর। এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে। দুটি গবেষণাতেই বেশি বেশি টেলিভিশন দেখাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অবশ্য দ্বিতীয় গবেষণাটির ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, বেশি সময় বসে না কাটানোর ফল কী হতে পারে তা ব্যক্তি ধরে ধরে নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে তার মতে, এই গবেষণার একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। তাহলো মানুষকে বেশি বেশি শারীরিকভাবে তৎপর থাকতে হবে। অলস সময় কাটানোর চেয়ে শারীরিকভাবে বেশি তৎপর থাকলে সুস্বাস্থ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এ ধরনের গবেষণাগুলো হরহামেশাই হচ্ছে। গবেষণার ফলের পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের আলোচনাও রয়েছে। একটি অভিযোগ তো দীর্ঘদিনের। বলা হয়ে থাকে, গবেষণার ফান্ডিংয়ের ওপর নির্ভর করে ফল। তবে গবেষণা ফলের পক্ষে বলার লোকও কম নেই। যে দুটি গবেষণা সম্প্রতি দুটি ভিন্ন ভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাদের যোগসূত্র অধিক শারীরিক তৎপরতায়। একটু বেশি শারীরিক তৎপর থাকলে যদি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় তাহলে আমাদের তাই করা উচিত।
 

No comments

Powered by Blogger.